ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ওই রূপরেখায় আলোচনার একটি ক্ষেত্রে তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। এতে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন থাকবে এবং এটিকে ভিত্তি ধরে জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে একটি নির্বাচনী ব্যবস্থায় পৌছানো যাবে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘সাগর-রুনি মিলনায়তনে’ এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
‘বিএনপির নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবনার অপেক্ষা আছে’ আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমের এমন সংবাদকে উদ্ধৃত করে আমির খসরু বলেন, আওয়ামী লীগের বন্ধুরা নাকি বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের যে প্রস্তাবনা দেবে সেটার অপেক্ষায় আছে। আমি আশ্বস্ত হলাম, এটা তো সুখবর। প্রথমবারের মতো শুনলাম তাদের গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। তারা যদি বিএনপির সেই প্রস্তাবনার জন্য অপেক্ষা করে থাকে স্বাগত জানাই।
আমাদের প্রস্তাবনার কাজ শেষের পথে। প্রস্তাবনা জাতির কাছে উপস্থাপন করবো। এর ম্যাধমে একটি জাতীয় আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করার চেষ্টা করছি আমরা। সেই আলোচনার মাধ্যমে জতীয় ঐক্যমতের মাধ্যমে একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।
প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার যেটি হবে সেটি হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন। প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য হবে সেটা। এটা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কোনো বিষয় নয় জনগণের যে প্রত্যাশা নির্বাচনকে নিয়ে সেটি পুরন করতে হবে। কোনো দল বা গোষ্ঠীর প্রত্যাশা পুরণ করার জন্য বাংলাদেশ হয়নি।
তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে, নির্বাচকালীন সমেয় একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকবে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের নির্বাহী বিভাগ কাজ করবে; যার মাধ্যমে জনগণ নির্ধিদ্বায় নির্বিঘ্নে ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাবে। তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে এবং তার প্রতিফলন ফলাফলে ঘটবে।
জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত সংসদ হবে, সরকার হবে। এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। সেটি কোনো শক্তি করতে চাইলে তা প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিরোধ করে জনগণের রাষ্ট্রের ওপর যে মালিকানা তা ফিরিয়ে দিতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুইয়া জুয়েলের মুক্তি দাবিতে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ‘আবদুল কাদির ভুইয়া জুয়েল মুক্তি পরিষদ’।
বিএনপির সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রগুলো সঙ্কুচিত করে দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, জুয়েলের মুক্তির জন্য সভা করতে হচ্ছে এই ধরনের একটি ছোট জায়গায়। আমাদের নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার কোথায় আছে- এ থেকে বোঝা যায়। এখন থেকে আমরা মুক্তি চাইবো না, মুক্ত হবো। মুক্ত হওয়ার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার, সেটি আমাদের অনুধাবন করে কাজে লাগাতে হবে। বক্তৃতা বা প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে হবে না।
তিনি বলেন, শতশত মানুষ গুম হচ্ছে, পুরো ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে, দেশ থেকে লাখো কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, আজকে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নেয়া হয়েছে, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ- এসবের বিস্ফোরণ ঘটবে। এর দায় দায়িত্ব অবৈধ সরকারের নিতে হবে।
সরকার ‘পাতানো নির্বাচনের’ মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ছক আঁকছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, এজন্য তারা নির্বাচনী একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই সরকারের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি এই নির্বাচনী প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতায় যাওয়া। খালেদা জিয়াকে কোর্টে ব্যস্ত রেখে বা সাজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া এই নির্বাচনী প্রকল্পেরই অংশ।
এই চক্রান্তে মধ্যে আছে দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় কারাগারে নেয়া, দলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা, সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা কাজের থেকে দুরে রাখা, গুম-খুন-রাজনৈতিক নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে যাওয়া এবং লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড চালু রাখা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি জাকারিয়া আলম মামুনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ।
২০জানুয়ারী,২০১৮শনিবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি