আত্মহত্যা নয়,অধিকার আদায় করুন!

মুনসুর রহমান:
কে না মরতে চায় এই সুন্দর পৃথিবীতে? তরপরেও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়। তাই বৈষম্যহীন তথা প্রগতিশীল সমাজ গঠনের একজন সাহসী, স্বপ্নীল যোদ্ধার নিথর দেহ দেখে ভেবেছিলাম আর কি বা লিখব ? যাকে নিয়ে লিখব, সে আজ আর এই সুন্দর পৃথিবীতে নেই। তবুও নিজেকে সামলাতে না পেরে স্মৃতিগুলো আজও চোখের পাতায় ভাসে..। সেই স্মৃতির আলোকে একটি ঘটনা দিয়ে লেখাটি শুরু করছি ।

১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার ১৪। সময় বিকাল সাড়ে ৬ টা। আমি প্রবাহ হোমিও কমপ্লেক্স এর চেম্বারে বসে আছি। হঠাৎ মোবাইল ফোনটি বেজে উঠল কয়েকবার। কিন্তু ফোন আসলে ধরতে পারিনি। মোবাইলে দেখলাম জোবায়ের মোস্তাফিজের কয়েকটি মিসকল। ফোন কল বেক করতেই জোবায়ের মোস্তাফিজ ফোনটি কেটে দিয়ে পুনরায় বেক করলেন। আমি ফোনটি রিসিভ করেই ভারী কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তারপর শীতল কন্ঠে আমাকে যখন বলল, আব্বা স্টোক করেছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে। আমি এখন শ্যামলী থেকে রওনা হবো।

তখন আমি চেম্বার বন্ধ করে দ্রুত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যেয়ে দেখতে পেলাম এক হৃদয়বিদায়ক দৃশ্য। যা দেখে আমি হতবাক হয়ে পড়েছিলাম। যেখানে সরকার রোগীদের জন্য কেবিনের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে কেবিন তো বাদই দিলাম, মেঝেতেও রোগীদের জায়গা পাওয়া মুশকিল। তারপর চিকিৎসক ঠিকমতো দেখভাল করে না। শুধুমাত্র দু-একবার না দেখলে হয় না, তাই দেখে নার্সদের দায়িত্ব দিয়ে চলে যায়। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সদের পর্যাপ্ত অবহেলার কারণে শনিবার দিবাগত রাত প্রায় ১ টায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।

তখন হাসপাতালের আইসিইউতে পড়ে থাকল মোস্তাফিজুর রহমানের নিথর দেহটি। তা দেখে পরিবার পরিজন অশ্রুসিক্ত কন্ঠে যেমন ভেঙ্গে পড়েছিল, তেমনি উত্তেজনা ও আবেগ-উৎকণ্ঠার তোড়ে ঢেকে থাকে প্রতিটি মানুষের জীবন। আর সে জীবনকে তুচ্ছ ভেবে যারা অনিকের মতো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটায়, সে খবর কোনখানে ঠাঁই পায় না, আলোচনায় আসে না, মৃত্যু তাকে মহিমান্বিত করলেও সময় তাকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে সরিয়ে রাখে দূরে। নিজেকে দিয়েই বুঝি, গেল বছরের মতো এ বছরও নির্বাচনে নিজের জনপ্রিয়তা সৃষ্টির জন্য এলাকায় জনসংযোগ করতে যাওয়া মনে হয় ভুল হয়েছিল অনিকের বাবার ।

কিন্তু কি বা করার শনিবার দিবাগত রাতে নিজের নির্বাচনী এলাকা থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সাংসদ মোস্তফা লুৎফুল্লাহ ও তার স্ত্রী এবং সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ন্যাম ভবনের বাসায় ফেরেন? এবং দরজা খুলে দেন তাদের মেয়ে। বাসায় অনীক, তার ছোট বোন ও এক কাজের লোক থাকত। গতকাল (শনিবার) কাজের লোকটি ছুটিতে ছিল। সংসদ সদস্য বাসায় ঢুকেই নিজের ঘরে চলে যান। কিন্তু ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সব সময় বাসায় অনীকের সঙ্গে একই কক্ষে থাকতেন।

তাই তিনি (পিএস) অনীকের ঘরের দরজা খোলার জন্য টোকা দিতে থাকেন। কিন্তু অনীক কোনো সাড়া না দেয়ায় অতিরিক্ত চাবি দিয়ে সংসদ সদস্য নিজেই কক্ষের তালা খোলেন। দরজা খুলতেই তিনি এমন হৃদয়বিদায়ক দৃশ্য দেখবেন তা স্বপ্নেও ভাবিনি। তখন নিথর দেহ দেখে তড়িঘড়ি করে তিনি ছেলের পা জাড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এবং পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তারুণ্য হচ্ছে পৃথিবীর প্রাণ। পৃথিবী আগাবেই। আর এ আবেগের কারণে অনিকের মতো একজন হাস্যজ্জ্বল তরুণ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেবে তা ভাবনাহীন। যে অনিকের হাত ধরে পৃথিবী বদলে যেতে পারতো, সেই যাত্রা হয়তো কিছু ধীর হয়ে গেল।

অনিকের বয়সী কোনো তরুণ যখন পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসে নতুন কোনো সম্ভাবনার রহস্য উন্মোচন করছে তখন অনিক ফ্যানের সঙ্গে ইন্টারনেটের কেবলের তার গিট্টু বাঁধছেন- কী লজ্জাজনক, না? নিজেকে ভালোবেসে বাঁচুন। এই বিশাল মহাবিশ্বের আপনিও সমান অংশীদার। তাই কখনও আবেগের বসে অযোগ্য বলে নিজে আত্মহত্যা নয়, যোগ্যতা দিয়ে অধিকার আদায় করুন!

মুনসুর রহমান
৬ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ,বাড়ি নং-১৩,রোড নং-১৭,বনানী সি/এ,ঢাকা-১২১৩।
ফোন নং- ০১৭৫৪২৪১৩৮৮।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।