ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: সাতক্ষীরার কুখরালীর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শেখ মোখলেছুর রহমান জনির নিখোঁজের ঘটনায় জিডি না নেওয়া ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি জনির নিখোঁজের বিষয়ে তার স্ত্রী জেসমিন নাহার থানায় জিডি করতে চাইলে পুলিশকে তা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া একই ঘটনায় জেসমিন নাহার চাইলে আদালতে নালিশি মামলাও করতে পারবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশের তিন সদস্য হলেন- সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক ওসি মো. এমদাদুল হক শেখ, বর্তমান ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা ও উপপরিদর্শক এসআই হিমেল হোসেন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। জনির পরিবারের পক্ষে শুনানি করেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবী সাগুফতা তাবাসসুম।
আদেশের পর তাপস কুমার সাংবাদিকদের বলেন, পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে অনুসারে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ফের আদেশের জন্য আদালত ধার্য করেছেন।
২০১৬ সালের ৪ আগস্ট সাতক্ষীরা থেকে নিখোঁজ হন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক জনি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও জনির সন্ধান না পেয়ে গত বছরের মার্চে হাইকোর্টে তার স্ত্রী জেসমিন নাহার একটি রিট করেন। ওই রিটে পৃথক আদেশে ঘটনাটি পুলিশকে তদন্ত করার পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে জনির নিখোঁজের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া না গেলে গত বছরের ১৬ জুলাই হাইকোর্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, জনির সন্ধান বের করতে না পারা এবং তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে মামলা বা জিডি না নেওয়ার মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরম অদক্ষতা ও অবহেলার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর দায়িত্ব যথাসময়ে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা। আর কোনো অপরাধী চক্রের কারণে কেউ নিখোঁজ হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব থাকে আরও বেশি। ভিকটিম ও অপরাধী চক্র উভয়কে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়াতে পারে না।
এ ছাড়াও ২০১৬ সালের ৪ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত জনি নামের কোনো ব্যক্তিকে সাতক্ষীরা থানায় গ্রেপ্তার বা আটক রাখা কিংবা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য বা সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, সদর থানার তৎকালীন ওসি এমদাদুল হক শেখের পর বর্তমান ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লাও জনির নিখোঁজের বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এতে জনির প্রকৃত অবস্থান জানার সুযোগ নষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, হাইকোর্টের আদেশের পর পিবিআইয়ের (খুলনা বিভাগ) বিশেষ পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদারকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিই সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিসহ ৩৫ জনের বক্তব্যের ভিত্তিতে হাইকোর্টে এই তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করে। ২৪জানুয়ারী,২০১৮মঙ্গলবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি
Check Also
সাতক্ষীরায় লটারীতে টিকে থাকা ৭১ শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগের দাবিতে অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলন
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ভর্তির লটারীতে টিকে থাকার পরও শুধুমাত্র বয়সের অজুহাতে সাতক্ষীরা সরকারি বালক ও বালিকা …