ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: এবার একই প্রশ্নপত্রে সারা দেশের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলেই সে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আজ শুক্রবার থেকে দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে। এই ব্যবস্থা চলবে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এসব তথ্য জানান।
অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে কোনো ঝুঁকি থাকছে কি না- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন কারণে এই ঝুঁকিটা নিচ্ছি। অনেক সময় অনেকে আমাদের অভিযুক্ত করছেন যে বিভিন্ন বোর্ডে বিভিন্ন মানের প্রশ্ন হচ্ছে, সারা দেশে একভাবে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না।’ ওই সমস্যা মেটাতেই সারা দেশে এক প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগের কথা বলেন সচিব। আরও বলেন, ‘এবার আমরা ঝুঁকি নিচ্ছি, আমরা পরীক্ষা বাতিল করব। কোনো অবস্থাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে (যদি ফাঁস হয়) পরীক্ষা নেব না।’ শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে সোহরাব বলেন, ‘কোনো অবস্থাতে যদি কেউ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে আনন্দিত হন, তাহলে তার জন্য সংবাদ হচ্ছে, সেই পরীক্ষাটি বাতিল হবে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে শুক্রবার থেকে দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে। এই ব্যবস্থা পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে।’
আগামী ১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় বিষয়ে পরীক্ষা হবে। কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার আগে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিললেও পরীক্ষা বাতিল করেনি সরকার। সচিব সোহরাব বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যদি এ রকম ঘটনা (প্রশ্ন ফাঁস হয়) ঘটে, পরীক্ষার পরেও যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন আউট হয়েছে সে ক্ষেত্রে সে পরীক্ষা বাতিল হবে। কোনো অবস্থাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। পরীক্ষা হওয়ার পরেও যদি প্রমাণ হয় যে, এই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তাহলে সেই পরীক্ষাটি অবশ্যই বাতিল করব। কোনো অবস্থাতেই আমরা কোনো ধরনের আপস করতে রাজি নই।’ প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার মতো যত পথ আছে তা বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দাবি করে সোহরাব বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই আমরা আমাদের এই প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য কাউকে সে পথে এগোতে দেব না। যদি কেউ এগোন এবং ধরা পড়েন, নিশ্চিত প্রমাণ পেলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো প্রশ্ন ফাঁস করার একটি ‘আখড়া’। তারা যদি প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে তাহলে সেখানে ছাত্র বেশি যায়। আমরা শুক্রবার থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখব। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।’ শুক্রবার থেকে দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শুধু কেন্দ্রে প্রবেশ নয়, অবশ্যই সিটে বসতে হবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই প্রশ্নের প্যাকেট খোলা হবে। এর আগে কেউ প্রশ্নের প্যাকেট খুললে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’ ঠিক সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে যানজট কিংবা পরীক্ষা কেন্দ্র দূরে হলে তা আগে থেকেই বিবেচনায় নিয়ে বাসা থেকে রওনা হওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী। কেন্দ্র সচিব একটি সাধারণ ফোন (স্মার্টফোন নয়) সঙ্গে রাখতে পারবেন। অন্য কেউ কোনো ধরনের মোবাইল সঙ্গে রাখতে পারবেন না। আমরাও পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে মোবাইল বাইরে রেখে যাব।’ এ সময় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
২৬জানুয়ারী,২০১৮ শুক্রুবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/যুগান্তর/আসাবি