সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরায় পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি,ঘুষ বাণিজ্য,চাঁদাবাজি,গুম,গ্রেফতার বাণিজ্য, হত্যা সহ নানা অভিযোগ। কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। কিছু পুলিশ সদস্যকে অনত্র বদলি করা হয়েছে। এমনকি সদর ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ হাইকোট পর্যন্ত গড়িয়েছে। হাইকোর্ট ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছে। এর পরও যেন থামছে না পুলিশি হয়রাণি সহ অভিযোগের নানা বিষয়। জেল গেট থেকে জামিনের পর বার বার আটক করা হচ্ছে। এছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ভুক্ত ভোগীকে পড়তে হয় মহা বিপাকে।
গত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের অন্ত ছিল না। গ্রেফতারের পর কয়েক ডর্জন মামলা সহ বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ জেলার পুলিশ। এমন কি পুলিশের কাছ থেকে মুক্তি পায়নি সরকারী দলের লোকেরাও। বাধ্য হয়ে সাতক্ষীরা সদর এমপি মীর মোস্তাক আহম্মদ রবী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুলিশি হয়রানির শিকার দলীয় সাধারণকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। যাতে পুলিশি হয়রানির শিকার যেন কেউ না হয়। এমন অবস্থায় সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান ব্যাতিক্রম একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে এখনো কেউ অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ তোলেনি। তিনি জনসাধারনের সুবিধার্থে পৌর সভার গুরুত্ব পূর্ণ ৬ টি পয়েন্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে । ২৮ জানুয়রী রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় সাতক্ষীরা খুলনা রোড মোড়ে পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ অভিযোগ বাক্স স্থাপন করেন। এসময় পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন আমরা জনগনের স্বার্থে ও সুবিধার্থে শহরের খুলনা রোড মোড় ও নিউমার্কেট মোড়, পাকাপোলসহ গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হবে। জনগন সরাসরি যেয়ে অভিযোগ দিতে সাহস পায়না। তাই এই অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হচ্ছে। এসময় তিনি আরও জানান পুলিশ জনগনের পাশে আছে ভবিষ্যতেও থাকবে।এছাড়া পর্যাক্রমে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে এ বক্স বসানো হবে। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কে এম আরিফুল হক, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দিন কালিগঞ্জ সার্কেল, সহকারি পুলিশ সুপার সদর হুমায়ুন কবির, ডিআইও ওয়ান মো. মিজানুর রহমান, ইন্স: আজম খান, টিআই মোমিন হোসেন।
সাতক্ষীরায় গত কয়েক বছর ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত ছিলনা। কেউ,মাছ,গরু-ছাগল সহ বিভিন্ন ফসল বিক্রয় করলে পুলিশ রাতে যেয়ে তুলে আনার ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা অর্থবাণিজ্য করত। এমন অভিযোগের তথ্য প্রমাণ এপ্রতিবেদকের হাতে আহরহ। উলেখ করার মত কয়েকটি চিত্র তুলে ধরা হল।
সাতক্ষীরার কুখরালীর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শেখ মোখলেছুর রহমান জনির নিখোঁজের ঘটনায় জিডি না নেওয়া ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি জনির নিখোঁজের বিষয়ে তার স্ত্রী জেসমিন নাহার থানায় জিডি করতে চাইলে পুলিশকে তা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশের তিন সদস্য হলেন- সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক ওসি মো. এমদাদুল হক শেখ, বর্তমান ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা ও উপপরিদর্শক এসআই হিমেল হোসেন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ফের আদেশের জন্য আদালত ধার্য করেছেন। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট সাতক্ষীরা থেকে নিখোঁজ হন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক জনি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও জনির সন্ধান না পেয়ে গত বছরের মার্চে হাইকোর্টে তার স্ত্রী জেসমিন নাহার একটি রিট করেন।
মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল আদালত (১)এ মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই বজলুর রহমান। মামলায় আসামি করা হয়েছে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের এসআই আসাদুজ্জামান, এসআই পাইক দেলওয়ার, এএসআই হাসানসহ অপর এক পুলিশ সদস্যকে। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালত থেকে নির্দেশ ও দেয়া হয়েছে।
নিহত ঐ মাদ্রাসা সুপার মাওলানা সাইদুর রহমান (৪৫) সাতক্ষীরা সদরের কাথনডা গ্রামের মৃত জিল্লার রহমানের ছেলে। স্থানীয় কাথনডা ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং কলারোয়া হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছিলেন তিনি।
নিহতের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, গত ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে পুলিশের তিনজন সদস্য তাদের বাড়িতে এসে তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের কথা বলে। কোন কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে জানতে চাইলে পুলিশ জানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। এসময় তার স্ত্রী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইলে পুলিশ দুর্ব্যবহার করে। মাওলানা সাইদুর রহমান পুলিশকে জানান, তিনি অসুস্থ। প্রতিদিন তাকে ওষুধ খেতে হয়। তাকে ধরে নিয়ে গেলে সে বাঁচবে না। তারপরও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে সাতক্ষীরা সদর থানা হাজতে রাখা হয়।
পরের দিন শুক্রবার সদর থানাতে সাইদুর রহমানের সাথে দেখা করতে আসেন তার স্ত্রী। এসময় স্ত্রীর কাছে তার স্বামী অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে অনেক মারপিট করেছে। তার গায়ের পাঞ্জাবিটা ছিড়ে গেছে। পুলিশের কাছে ওষুধ চাইলে পুলিশ তা দেয়নি। পরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে তাকে নিয়ে ইসিজিসহ কয়েকটি পরীক্ষা করায় পুলিশ। পরে সন্ধ্যায় তাকে কোর্টে হাজিরার মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়।
নিহতের স্ত্রী ময়না জানান, তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। আটকের পর পুলিশ দুটি মামলায় অজ্ঞাত আসামি করে কোর্টে চালান দেয়। পুলিশের তিন অফিসার এসআই আসাদ, দেলওয়ার ও এএসআই সুমন তার স্বামীকে জোর করে আটক করে নির্যাতন করেছে বলে তিনি অভিযোগ করে।
এ সময় মওলানা সাইদুরের ভাতিজা মুত্তাসিম বিল্লাহ পাঁচ হাজার টাকা এনে চাচাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু পুলিশ তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। এ টাকা দিতে না পারায় মাদ্রাসা শিক্ষককে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরা থানায়। সেখানেও তার ওপর নির্যাতন করতে থাকে পুলিশ।
নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিনভর পুলিশ হেফাজতে রেখে তার ওপর দফায় দফায় নির্যাতন করা হলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে আদালতে নেয়া হলে কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতা দেখে সাঈদুর রহমানকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ তাকে ফের নিয়ে যায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করার পর বিকাল ৫টায় পুলিশ ফের তাকে আদালতে নিয়ে যায়। বিকালে মওলানা সাইদুরকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠায় আদালত।
এদিকে মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জেলাব্যাপি তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য গণমাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি করে। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার, চাঁদাদাবিসহ ব্যাপক মারপিটের কারণে ঐ মাদ্রাসা সুপার নিহত হয়েছে বলে শতাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে নড়ে চড়ে বসে পুলিশ। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়। শনিবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। এতে দাবি করা হয় সাতক্ষীরা কারাগারে ৪৪৯০/১৭ নং হাজতী মোঃ সাইদুর রহমানের মৃত্যু হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। এঘটনায় ৮৪/১৭ নং এ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে সদর থানা পুলিশ।
প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহতের ভাই মাওলানা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাইয়ের নামে কোনো মামলা ছিল না। তাকে আটকের পর দুটি অজ্ঞাত মামলায় আসামি করে কোর্টে চালান দেয়। তার জিআর নং ১৮১/১৭ ও ৫৪৮/১৭। এসব মামলায় তার ভাই এজাহারভুক্ত আসামি ছিল না। যদি তার নামে মামলা থাকত তাহলে পুলিশ কেন অজ্ঞাত মামলায় তাকে চালান দিল বলে পুলিশের প্রতি তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
এদিকে কলারোয়ায় পুলিশের বিরদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠে।
কলারোয়া থানার আওতাধীন সরশকাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস,আই সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
তিন জন মুক্তিযোদ্ধা, দুই জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদকসহ যুগীখালী ও জয়নগর ইউনিয়নের ২৫ ব্যক্তি এ অভিযোগ পত্রে নিজ নিজ মোবাইল নাম্বারসহ স্বাক্ষর করে। তাদের দেয়া তিনটি অভিযোগ পুলিশ মহা-পরিদর্শক ঢাকা, ডিআইজি, খুলনা ও পুলিশ সুপার, সাতক্ষীরাকে পৃথকভাবে রোজিস্ট্র্রি ডাকযোগে এ অভিযোগ প্রেরণ করা হয়।
লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সরশকাটি পুলিশ ফাঁড়ির এস,আই সিরাজুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে তিনি সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছেন। তিনি সাদা পোশাকে রাত দিন জয়নগর ও যুগীখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের মনে আতংক সৃষ্টি করেন। সময় সুযোগ বুঝে সাধারণ মানুষকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করার নামে আওয়ামীলীগ কর্মীদেরও তিনি আটক করে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। তার এসব কর্মকান্ডে এলাকার সাধারন মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পুলিশ আতংকে এলাকার অনেক পাড়া ও মহল্যা পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া এস,আই সিরাজুল ইসলাম এলাকার ভ্যান ও নছিমন চালকদের নিকট থেকে প্রতি মাসে মাথা পিছু ২২০ টাকা করে জোরপূর্বক আদায় করে থাকেন। তিনি সরশকাটি ব্রিজের দক্ষিণপ্রান্তে বসে মাদক ব্যবসায়ীদের মাসিক টোকেন দিয়ে চোরাচালানে সহায়তাও করে আসছেন।
এস,আই সিরাজুল ইসলাম সহিংসতা মামলায় একাধিক পালাতক জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীদের বাড়িতে যেয়ে তাদের মাল ক্রোকের কোর্ট অর্ডার আছে এমন কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এলাকার কোন মানুষ গরু বিক্রি, গাছ বিক্রি করলে, জমি ক্রয় করলে, পাকা বাড়ি করার জন্য রড ও ইট কিনলে, ঘেরের মাছ বিক্রি করলে সে সব বাড়িতে যেয়ে হানা দিয়ে সহিংসতা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন।
এছাড়া এলাকার যে সব যুবকরা বিদেশে থাকেন অকারনে বিভিন্ন অজুহাতে তাদের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে বাড়ির যুব মহিলাদের সাথে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা করে থাকেন।
এছাড়া তিনি এলাকায় যে কোন ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হলে গায়ে পড়ে এক পক্ষকে কু-পরামর্শ দিয়ে লিখিত দরখাস্ত নিয়ে অপর পক্ষকে পিট মোড়া দিয়ে বেঁধে ক্যাম্পের হাজত খানায় আটক রাখেন। পরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। তিনি আইন না মেনে একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছেন।
কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল গফ্ফার ও জয়নগর ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন আল মাসুদ লিখিত অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, সরশকাটি পুলিশ ফাড়ির এস আই সিরাজুল ইসলামের গ্রেপ্তার বানিণজ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও লাগামহীন ঘূষ গ্রহণের কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কোন উপায় না পেয়ে তারা পুলিশ মহ-পরিদর্শকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে তারা আরো জানান।
প্রসঙ্গত ঃ এলাকার যেসব সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে জোর পূর্বক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তাদের নাম ঠিকানাও লিখিত ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন, সহিদুল সরদার, সবুজ হোসেন, নাজমা খাতুন, ইশারুল ইসলাম, মফেজ মোল্যা, সহিদুল মোড়ল লুৎফর মোল্যা, আবুল হোসেন, আব্দুল্লাহ, আব্দুস ছামাদ ওরফে টলি ছামাদ,বাবুল কম্পিউটার,হারুন, লুৎফর মোড়ল, সুমন, রাশিদুল সানা, ও যুগীখালী, কামারালী, তরুলীয়া, তালুন্দিয়া, বামনআলী, রাজনগর, আগুনপুর, বামনখালী গ্রামের শতাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে ২২ লক্ষাধিক টাকা ক্রস ফায়ারের ভয় দেথিয়ে ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকতার নামে মানুষকে ভয় দেখিয়ে গ্রহণ করেছেন। এমন গুরত্বর অভিযোগ জেলার শতাধিক পুলিশের বিরুদ্ধে। বিষয়টি বুঝতে পেরে সাতক্ষীরার নবাগত পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলার সাধারণ মানুষ আশার আলো দেখছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে,পুলিশ যদি সত্যিকার সেবা দেয় তাহলে দ্রুত সাতক্ষীরাতে ঘুষ-হয়রানি বন্ধ হবে। সাধারণ মানুষ এটাও দাবী করেছে কোন নিরিহ মানুষ যেন পুলিশি হয়রানির শিকার না হয়। বাড়ি ছেড়ে মাঠে ঘাটে ঘুমাতে না হয়। জেল গেট থেকে বার বার গ্রেফতারে শিকার না হতে হয়।
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও পুলিশ রিমান্ড প্রশ্নে আপিল বিভাগ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারকদের প্রতি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারায় আটক রাখার জন্য কোনো ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে না। গ্রেফতার অভিযানকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। গ্রেফতারকৃত এবং উপস্থিত ব্যক্তিরা যদি পরিচয়পত্র দেখতে চান তাহলে তাদেরকে অবশ্যই তা দেখাতে হবে। গ্রেফতারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ওই ব্যক্তির অত্মীয়-স্বজন অথবা বন্ধু-বান্ধবকে গ্রেফতারের সময় এবং স্থান জানাতে হবে। জারিকৃত নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, কেইস ডায়েরি ছাড়া কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন।
হাইকোর্টের ১৩ দফা নির্দেশনা
১। আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না।২। কাউকে গ্রেফতার দেখানোর সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।৩। গ্রেফতারের কারণ একটি পৃথক নথিতে পুলিশকে লিখতে হবে।৪। গ্রেফতারকৃতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলে তার কারণ লিখে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারি সনদ আনবে পুলিশ।৫। গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে পুলিশকে।৬। বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে যদি কাউকে আটক করা হয় তাহলে আটক ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে।৭। আটক ব্যক্তিকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।৮। জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের কাঁচনির্মিত বিশেষ কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। করে বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন।৯। কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিনদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে।১০। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ঐ ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে।১১। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে, ঐ ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দন্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।১২। পুলিশ হেফাজতে বা কারাগারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে।১৩। পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তে বা তদন্তে যদি মনে হয়, ঐ ব্যক্তি কারা বা পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মারা গেছে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ের অভিযোগের পেক্ষিতে তা তদন্তের নির্দেশ দিবেন।
এত কিছুর পর ও সাতক্ষীরা জেলা গেট থেকে অব্যাহত ভাবে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দফায় দফায় আটকের ঘটনা ঘটছে। সব সময় জেলগেট এলাকায় আতংক বিরা করছে।