ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:সিলেট: ‘মানুষকে সচেতন করুন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয় না, বিএনপির সরকারের সময় জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হয়, আর আওয়মী লীগ জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন- নৌকায় ভোট দেবেন।’
মঙ্গলবার বিকালে সিলেটে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। এসময় তিনি নৌকা মার্কায় ভোট চান। এর আগে সিলেট পৌঁছে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ ও ডিজিটাল ব্যবস্থার উন্নতির কথা তুলে ধরেন। এরই একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের সবার কাছে মোবাইল ফোন আছে?’ মানুষ হ্যাঁ বলে। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের হাতে মোবাইল তুলে দিয়েছে কে? আমরা।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। আজ বাংলাদেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি।’ এসময় তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে জনসভায় উপস্থিত জনতাকে ওয়াদা করান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে, যে নির্বাচন ডিসেম্বর মাসে হবে, আমরা আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন- নৌকায় ভোট দেবেন।’
তিনি বলেন, দেশে উন্নয়ন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় না আসতাম, তাহলে এই উন্নয়ন দেখতে পেতেন না। লুটেরারা আসলে লুটপাট করতো, লুট করে খেত।
এসময় আওয়ামী সভাপতি বলেন, আপনারা অতীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। উন্নয়নের জন্য আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হবো। আর ২০৪১ সালে আমরা হবো উন্নত দেশ। ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না, বলেছেন জাতির পিতা।
এর আগে বেলা ১১টা ৪২ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনি শাহজালালের (রহ.) মাজারে পৌঁছান। সেখানে শেখ হাসিনা জিয়ারত ও ফাতিহা পাঠ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১২টার দিকে হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। এরপর তিনি বোরহান উদ্দিনের মাজারের জিয়ারত করেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের (বিজি ৬০১) একটি ফ্লাইটে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউসে বিশ্রাম নিয়ে বেলা তিনটার পরপরই সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় প্রধান অতিথির হিসাবে উপস্থিত হন।
এসময় সিলেটের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। তার সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী যে সব রাস্তা দিয়ে চলাচল করবেন, তার আশপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়ির ছাদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। নগরীতে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের সমাবেশস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী সুইচ চেপে ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে অন্যতম সিলেট সিটি করপোরেশনের ১২-তলা ভিত্তির ওপর ৫-তলা নগর ভবন উদ্বোধন, সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬-তলাবিশিষ্ট চারতলা নতুন একাডেমিক কাম-প্রশাসনিক ভবন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ফিরোজপুরে সার পরীক্ষাগার ও গবেষণাগার ভবন।
বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা অফিস ভবন, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন, সিলেট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও জকিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বাবুছড়ার আরসিসি ইউ-টাইপ ড্রেন নির্মাণ, জালালাবাদ রাস্তা সম্প্রসারণ ও এসফল্ট দ্বারা উন্নয়ন কাজ।
সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক উন্নয়ন, মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট সড়ক ও রশিদপুর-বিশ্বনাথ-লামাকাজি সড়কে ওভারলে কাজ, দরবস্ত-কানাইঘাট-শাহবাগ সড়ক মজবুতিকরণ ওভারলে কাজ, ঢাকা (কাঁচপুর)-ভৈরব- জগদ্বীশপুর-শায়েস্তাগঞ্জ- সিলেট-তামাবিল-জাফলং জাতীয় মহাসড়কের সিলেট-শেরপুর অংশের মজবুতিকরণ ওভারলে কাজ এবং শেরপুর টোল প্লাজা অংশে রিজিট প্যাভমেন্ট নির্মাণ কাজ, জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ, সিলেট সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত কানাইঘাট সড়ক ও কুইটুকে তিন তলা বিশিষ্ট প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার ভবন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেটের বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে রয়েছে- হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের মহিলা ইবাদতখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল নির্মাণ, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ১ হাজার অসনবিশিষ্ট ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস ও নার্সিং হোস্টেল নির্মাণ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল ভবনের ৪-তলা থেকে ১০-তলা উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট সদর হাসপাতাল নির্মাণ, সিলেট পুলিশ লাইনে এসএমপি ব্যারাক ভবন ও অস্ত্রাগার নির্মাণ, কোতোয়ালী মডেল থানায় ১০-তলা ভিত্তির ওপর ৪-তলা ডরমিটরি ভবন নির্মাণ, সিলেট জেলার তামাবিলে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট (দ্বিতীয় পর্যায়ে) ৬-তলা ভিত্তির ওপর ৩-তলা ভবন নির্মাণ, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) পুলিশ লাইন ভবন নির্মাণ।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি শিশুদের জন্য ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, বিভাগীয় পরিচালক (পরিবার পরিকল্পনা) ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস ভবন নির্মাণ, সিলেট-গোলাপগঞ্জ- চারখাই-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬৫ কিলোমিটার উন্নয়ন, গোলাপগঞ্জ-ঢাকা দক্ষিণ-ভাদেশ্বর ও চারখাই-শেওলা-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম সড়কের উন্নয়ন।