বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাত ১০টার পর তাকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন

মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে ডিএমপি কমিশনার জানান, সুনির্দষ্টি অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি পুলিশের ওপর হামলার নির্দেশদাতা। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রাতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাত সোয়া ১০টায় গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে।

রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক শেষ করে গাড়িতে করে তিনি পুরান ঢাকার বাসায় ফিরছিলেন। গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে তার গাড়ি থামিয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়। এদিকে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর ইস্কাটনের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি রাত ১টা পর্যন্ত স্বীকার করেনি।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল  জানান, রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের বৈঠক ছিল। বৈঠকের পর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে এলে রাত সোয়া ১০টার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

বিএনপির এক নেতা জানান, গাড়িতে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদও ছিলেন। তাকে নামিয়ে দিয়ে গয়েশ্বর রায়কে তুলে নেয়া হয়। এ ঘটনার পর গয়েশ্বর রায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার সময় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছিল। তাতে বিএনপি কর্মীদের পিটুনিতে আহত হন কয়েক পুলিশ সদস্য। এ সময় পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে দুজন বিএনপি নেতাকে তারা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটকের খবর পাওয়া গেলো। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় রায়ের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণের পর দলের নেতা-কর্মীদের রাজপথে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। খালেদা জিয়ার সাজার রায় হলে সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।

মধ্যরাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তিনি রাত সাড়ে ১২টার দিকে যুগান্তরকে বলেন, রাতে পুলিশ অতর্কিতভাবে শফিউল বারীর ইস্কাটনের বাসায় অভিযান চালায়। তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন অভিযান চলছিল।

অশুভ ইঙ্গিত: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে ও সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি জানান। ফখরুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে বিরোধী দলশুণ্য রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চায় বর্তমান সরকার। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ধ্বংস করে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্যই সরকার খালেদা জিয়াকে সপ্তাহের অধিকাংশ দিন আদালতে হাজিরা দিতে বাধ্য করছে । একইভাবে বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ দেশব্যাপী প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে পথের কাঁটা দুর করতে চাচ্ছে। এদিকে রাতে নয়াপল্টনে এক জরুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে গয়েশ্বরের রায়কে আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী আহমেদ।
কিসের মোকাবেলা করবেন আপনারা: আ. লীগকে গয়েশ্বর
‘কিসের মোকাবেলা? কিসের মোকাবেলা করবেন আপনারা? বিএনপির নেতাকর্মীদের আক্রমণ করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা কি আপনাদেরকে আক্রমণ করতে গেছে। যখন আক্রমণ করতে যাবে তখন হয়তো প্রতিরোধের প্রশ্ন আসতে পারে।’ বলে আওয়ামীলীগকে উদ্দেশ্য প্রশ্ন করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জিয়া সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আপনার বিশেষ দূত এরশাদ সাহেব খালেদা জিয়াকে জেলখানায় পাঠায় তার আরেক জন মন্ত্রী রাঙা তারিখই দিয়ে দিলেন। তাহলে বিচারিক আদালতের মোহাম্মাদ আখতারুজ্জামান যে বিচারকের চেয়ারে বসে আছেন তার কাজটা কি? তাহলে কি তিনি শেখ হাসিনার বার্তা জনগণের কাছে সংবাদ পাঠক হিসাবে পাঠ করবেন।’

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অগ্রিম রায়ের বিষয়ে কথা বলায় কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘সারা দেশের মানুষ উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছে। উৎকণ্ঠা উদ্বিঘ্ন আসতো না যদি শেখ হাসিনা পার্লামেন্টে রায় ঘোষণা না করতেন।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া এরশাদ ও রাঙাও রায় ঘোষণা করেছেন এবং তারা (আ.লীগ) মিষ্টির দোকানে ইতোমধ্যে অগ্রিমও অর্ডারও দিয়েছেন। তাই তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজপথে বিষয়টি মোকাবেলা করবে বলে অগ্রিম কথা বলছেন।’

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক আরো বলেন, ‘আমরা কি এটা কে কি রায় মনে করবো? মোটেও না। কারণ এটা রায় হতে পারে না। রায় লেখার আগেই যখন রায় ঘোষণা হয় সরকারের পক্ষ থেকে তাহলে আমরা বুঝে নিবো এই সরকার কোর্টকে ব্যবহার করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নির্যাতনের জন্য। সুতরাং হয়তো আমাদেরকে আবার গাইতে হবে সেই উনসত্তরের গণবাণী বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আপনারা বেগম জিয়াকে জেল দিবেন নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। একটু ভাবেন, বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোন নির্বাচন করার সামর্থ্য আপনাদের আছে কিনা? ২০১৪ সালে তো নির্বাচন করতে পারেন নাই, এটাকে নির্বাচন বলে না। কারণ আপনারা নির্বাচনে বিশ্বাস করেন না। দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় জনগণের যদি ভোট দেয়ার সুযোগ থাকে সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করবে না।’

আয়োজক জিয়া সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাসানুল ইসলাম রাজার সভাপতিত্বে এবং এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈশার সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, জিনাফের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।

Check Also

সাতক্ষীরা পৌর ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর আমীরের শপথ

মাসুদ রানা, সাতক্ষীরা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা শহর শাখার পৌর ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।