ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা পুরোটাই সাজানো। তাকে হয়রানি করতে এই মামলা করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করতে সরকার শাস্তি দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে এমন বার্তাই দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। সেখানে এমন মনোভাব তুলে ধরা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা কুটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। এটা রুটিন মতবিনিময়। নাথিং মোর।
এসময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, সরকারি খরচে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারাভিযান বন্ধ করতে হবে। না হলে বিএনপিকে জনসভা করার সুযোগ দিতে হবে।
তার মতে, প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারাভিযানে নেমে গেছেন। স্পষ্টভাবে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়, কিন্তু প্রায় একবছর আগেই সরকারি দল রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করেছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কমিশন কতটুকু শক্ত?
ইসির প্রতি মওদুদ আহমদ বলেন, তাদেরকে এই ধরনের সরকারি খরচে প্রচারাভিযান করা বন্ধ করতে হবে। না হলে বিএনপিকেও জনসভা করার সুযোগ দিতে হবে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রচারাভিযান লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা নয়। এখন দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেটে ভোট চাইছেন, আর বিএনপি আদালতের বারান্দায়।
এদিকে বৈঠক সম্পর্কে দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার অবস্থা, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিশেষ করে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টি কুটনীতিকদের অবহিত করা হয়। কূটনৈতিকদের হাতে এ সম্পর্কিত একটি ফাইলও হস্তান্তর করেছে দলটি।
বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, সরকার যে প্রতিহিংসামূলকভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়ে বিচার কাজ চালাচ্ছে, বিশেষ করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করার কোনো তথ্য প্রমাণ না থাকার বিষয়টি কুটনীতিকদের কাছে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘তড়িগড়ি’ করে এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করার বিষয়টি বলা হয়েছে কুটনীতিকদের।
বৈঠকে জাপান, নেদারল্যান্ড ও নেপালে রাষ্ট্রদূত ছাড়া ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনারসহ জার্মানি, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, মরক্কো, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, তুরস্ক, কুয়েত, ভ্যাটিকেন সিটি, ভিয়েতনামসহ ৩০টির বেশি দেশের কুটনীতিক ও দাতাসংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ফাহিমা মুন্নী ও রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন।