ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ঢাকা: ‘সারাদেশে বিএনপির সিনিয়র নেতা এবং কর্মীদের গ্রেপ্তার ও তাদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সরকার দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়সহ বিপুলসংখ্যক বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার, পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে’ এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ দাবি করেন।
গত মঙ্গলবার বিকেলে হাইকোর্টের সামনে যে হামলা হয়েছে, তা অনুপ্রবেশকারীরা করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই হামলাকারীদের চিনতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের সামনে যে হামলা হয়েছে, আমরা নিজেরাই তাদের ‘এক্সাক্টলি’ চিনতে পারছি না। সত্যিকার অর্থে আমরা আশঙ্কা করছি, অনুপ্রবেশকারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করার চেষ্টা করছি। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সব চাইতে ভীতিকর বিষয় হলো গতরাতে গয়েশ্বর রায়কে গ্রেফতারের ঘটনা অনেক রাত পর্যন্ত পুলিশ স্বীকার করেনি। তিনি একজন বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ মানুষ। তার ওষুধগুলো পর্যন্ত সেখানে নিতে দেয়নি। সকাল পর্যন্ত তাকে ওষুধ নিতে দেয়া হয়নি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী তাকে দেখতে গিয়েছেন, তার পুত্রবধূ দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুর রায় গয়েশ্বরকে দেখতে গিয়েছিলেন কিন্তু তাদেরকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়নি। গয়েশ্বর রায়ে নিয়মিত মেডিসিন নিতে হয়। তাও নিতে দেয়নি।’
ফখরুল বলেন, ‘এই গ্রেফতারটা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আমাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, এখন পর্যন্ত কোন কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। অথচ গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। দেশের যে স্থিতিশীল পরিবেশ নিজেরাই (সরকার) নষ্ট করছে।’
তিনি বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কেবলমাত্র স্থায়ী কমিটির সদস্যই নয়, তিনি দীর্ঘদিন যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার যুদ্ধে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তার অবদান ছিল। তাকে এভাবে হঠাৎ তুলে নিয়ে যাওয়া অসনি সংকেত। আশঙ্কা করছি সরকার তার একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য অর্থাৎ বিএনপিকে বাদ দিয়ে বিরোধীদলগুলোকে বাদ দিয়ে একদলীয় নির্বাচন করার নীলনকশার দিকে এগুচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই, তারপরও হঠাৎ করে গ্রেফতার বেড়ে গেছে। গ্রেফতার করে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং নিয়েছে বলে অস্বীকার করা হচ্ছে। এটা একটা অশনিসংকেত। সরকারের উদ্দেশ্য একটাই বিরোধীদল যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে সেজন্য তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। তারা আবারও এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় নীল নকশার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত রাতে বাসায় বাসায় পুলিশ হানা দিচ্ছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতরাতে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের বাসভবনে পুলিশ হানা দিয়ে ব্যারিস্টার সরকারের খোঁজ খবর করে। এছাড়াও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের ধানমন্ডির বাসভবন, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর শান্তিনগরের বাসভবন, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের বাসভবন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর বাসভবন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের পল্লবী’র বাসভবন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও আইনজীবী রফিক সিকদারের বাসা, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেরা আলাউদ্দিনের শান্তিনগরের বাসভবন, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজিজুল হাকিম আরজু’র বাসাসহ শত শত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশী তল্লাশীর নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এই মূহুর্তে পুলিশ জিঞ্জিরা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মামুনের বাসায় হানা দিয়ে ব্যাপক তল্লাশী চালাচ্ছে। কারণ মামুনের বাসায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মাঝে মাঝে ঘরোয়া বৈঠক করতেন।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে গ্রেফতার রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দেওয়া হোক। নির্বাচনকালিন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে, সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের উদ্যোগ নিন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অর্পণা রায়, ছেলের স্ত্রী নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
—————0——————-
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র ও পেট্রোল বোমার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির এই দেউলিয়াপনার শেষ কোথায় দেখার জন্য জাতি অপেক্ষা করছে।’
বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে ‘শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ’ ও ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখেন বিএনপি কী রকম দল এটা, কী জঘন্য দল। বিএনপির একটা সংবিধান আছে, গঠনতন্ত্র যাকে বলে, কি আছে না? আওয়ামী লীগেরও গঠনতন্ত্র আছে, সকল দলের গঠনতন্ত্র আছে। বিএনপির সংবিধানে সাত ধারা নামে একটি ধারা ছিল। কিন্তু এখন নেই। রাতের আধারে সাজার ভয়ে মামলার এক কলমের খোঁচায় নির্বাসনে চলে গেছে।’
তিনি বলেন, ৭ ধারায় কী আছে। প্রথম আছে বিএনপির কোনো পর্যায়ে কর্মকর্তা, সদস্য হওয়া যাবে না। জাতীয় সংসদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করা যাবে না। যদি কোনো ব্যাক্তি ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দন্ডিত হয়ে থাকে।
এ সময় ওবায়দুল কাদের বিএনপির প্রতি হুঁশিয়ারি করে বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে যদি ‘আগুন নিয়ে খেলা’ হয়। তাহলে আমরা তার সমুচিত জবাব দেব।
এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কারাগারে থাকার স্মৃতিচারণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদের একদিন রিমান্ড থেকে এসেই কান ধরে উঠবস করে বললেন, ভাই আমি আর রাজনীতি করবো না। আর পাগলামী করবো না। আমি বললাম কেনো ভাই, কি হয়েছে, আমি লেখা-পড়া করি। আমি একটা লেখা-পড়া জানা মানুষ। ভালো জায়গায় থাকতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, আমি এখন তাকে (ওবায়দুল কাদের)বলতে চাই, আপনি কথাবার্তা উল্টাপাল্টা বলতেছেন। ফলে রাজনীতি বাদ দিয়ে দিন। ঘরে বসে লেখা-পড়া করেন। কারণ আওয়ামী লীগের লোকজন গোপন কথা ফাঁস করেন না। কিন্তু আপনি তো গোপন কথা ফাঁস করছেন।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপির (উত্তর) আয়োজিত এক কর্মীসভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ওবায়দুল কাদের এছাড়াও ওই সময় আমাদের সাথে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ সাহেবও ছিলেন। তখন আমরা এক সাথে খেতাম। আমরা বাসা থেকে খাবার আানি এবং তারাও বাসা থেকে খাবার আনে। আমরা তাদের খাবার খাই, আর তারা আমাদের খাবার খায়। ওই সময় তারা বলেছিলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা সমর্থন দেবো। আর আমরা ক্ষমতায় গেলে দেশের উন্নয়নের জন্য আপনারা সমর্থন দেবেন। সবাই ভালো, এত ভালো আওয়ামী লীগ আল্লাহ কসম, এত ভালো, কি মহীউদ্দিন খান আলমগীর, কি শেখ সেলিম, কি নাসিম- এত ভালো? কিন্তু বের হওয়ার পরেই চেহারা পাল্টে গিয়েছে। এখন দেখা হলেও কথা কয় না।