ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:আজ থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায়। এবার সাতক্ষীরা জেলায় ৪১টি কেন্দ্রে থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২৬ হাজার ৩১৩ জন শিক্ষার্থী। আজ শুরু হওয়া মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও দাখিল পরীক্ষা চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় এসএসসি পরীক্ষায় ২৩টি কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৫৪৩ জন, এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ৭টি কেন্দ্রে ১ হাজার ২১৭ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় ১১টি কেন্দ্রে ৫ হাজার ৫৫৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া মাধ্যমিক ও দাখিল পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবছর সকল পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। না হলে কোন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়ার হবে না।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষা চলাকালীন ১৪৪ ধারা জারি করা হবে। প্রশ্ন ফাঁস রোধে কোন পরীক্ষার্থী ও দায়িত্বে থাকা কক্ষ পরিদর্শকগণও ঘড়ি, মোবাইল ফোন, কোন প্রকার ইলেকটিক্স ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রের আশেপাশের ফটোকপির দোকান বন্ধ রাখা হবে। প্রতি বছরের ন্যায় শ্রবণ প্রতিবন্ধীসহ অন্য প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা এবারও অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলার শিক্ষা অফিসার এসএম ছায়েদুর রহমান জানান, গত বছরের মতো এবারও শুরুতে দিতে হবে এমসিকিউ অংশের উত্তর হবে তবে এবছর দুই পরীক্ষার মাঝে কোন বিরতি থাকছে না। এছাড়া বাংলা দ্বিতীয়পত্র এবং ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র ছাড়া সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানায়, পরীক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। গত বছর তুলনায় এবছর ৩ হাজার ৯৬৫ জন পরীক্ষা বেশী অংশগ্রহণ করছে। গত বছর ২২ হাজার ৩৪৮ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে, নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ (ভোকেশনাল) কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫৭৫ জন ও দাখিল পরীক্ষায় সাতক্ষীরা আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১ হাজার ২৪৬ জন অংশ নিচ্ছে।
কলারোয়া উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় জিকেএমকে পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাবাড়িয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খোর্দ্দ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলারোয়া গার্লস পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জিকেএমকে পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ভোকেশনাল) কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪২৯ জন ও দাখিল পরীক্ষায় কলারোয়া আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৭৩১ জন অংশ নিচ্ছে।
তালা উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় সরকারি বিদে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খলিষখালী মাগুরা এসসি কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট, আমিরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমিরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ভোকেশনাল) কেন্দ্রে ৩ হাজার ৩৩৬ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় তালা আলিয়া মাদ্রাসা ও পাটকেলঘাটা আল আমিন ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৭৪১ জন অংশ নিচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় আশাশুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দরগাহপুর এসকেআরএইচ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বুধহাটা বিবিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বড়দল আফতাব উদ্দীন কলিজিয়েট স্কুল ও সুন্দরবন টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (ভোকেশনাল) কেন্দ্রে ৩ হাজার ২৬৮ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় আশাশুনি দাখিল মাদ্রাসা ও গুনাকরকাটি আজিজিয়া খাইরিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৮০৬ জন অংশ নিচ্ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চম্পা আ.প্র.চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কালিগঞ্জ পাইলট কমিউনিটি হাইস্কুল (ভোকেশনাল) কেন্দ্রে ২ হাজার ৯১১ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় কালিগঞ্জ নাছরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা ও নলতা আহছানিয়া দারুল উলুম আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৬৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
দেবহাটা উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় দেবহাটা বিবিএমপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পারুলিয়া এসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আহছানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ভোকেশনাল) কেন্দ্রে ১ হাজার ৩৭৫ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় সখিপুর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২৬৩ জন অংশ নিচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় নকিপুর এইচ, সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নওয়াবেকী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (ভোকেশনাল) কেন্দ্রে ২ হাজার ৮৬৬ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় শ্যামনগর কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা, নওয়াবেকী বিড়ালক্ষী কাদেরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১ হাজার ১২৬ জন অংশ নিচ্ছে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, এবার এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু, দুর্নীতি ও নকলমুক্ত করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পরীক্ষার দিন সকাল সাড়ে ৯টায় পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত না হলে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। প্রশ্নপত্র ১৫ মিনিট আগে খোলা হবে। পরীক্ষার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেলার সকল কোচিং সেন্টারগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র সচিব শুধুমাত্র মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন তবে এন্ড্রয়েট মোবাইল ফোন নয়। এছাড়া পরীক্ষার কেন্দ্রে কেউ ঘড়ি, মোবাইল, অন্যন্য কোন ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু, দুর্নীতি ও নকলমুক্ত পরিবেশে করতে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবে এর পাশাপাশি প্রতি উপজেলার কেন্দ্র গুলোতে একজন করে ট্যাগ অফিসার কেন্দ্রে থাকবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে যাতে কেউ বাইরে তথ্য না দিতে না পারে সে দিকে নরজরদারি থাকবে।
এছাড়া পরিক্ষা সুষ্ঠু করতে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধামেও আমাদের কঠোর নজরদারী রয়েছে।
সারা দেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেন্দ্রে আজ বৃহস্পতিবার একযোগে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় অংশ নেবে ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৯ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১০ লাখ ২৩ হাজার ২১২ জন ছাত্র; ছাত্রীর সংখ্যা ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৮৭ জন।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে অংশ নিবেন মোট ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৩৭৮ জন শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিবে মোট দুই লাখ ৮৯ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষার্থী। আর কারিগরি ও ভোকেশনাল বোর্ডের অধীনে মোট এক লাখ ১৪ হাজার ৭৬৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে।
গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা সম্পূর্ণ নকলমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যতীত অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে।কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।“
আট সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত।
২০১৭ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ১৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬শ ১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। গতবছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৬ জন।
০১ ফেবরুয়ারী,২০১৮বৃহস্পতিবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি