ক্রাইমবার্তা রিপোট: ঢাকা: জামায়াতসহ জোট শরিকরা এই ক্রান্তিলগ্নে জোরালোভাবে বিএনপির পাশে থাকার ওয়াদা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় দেওয়া হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি।
ওইদিন জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী পাশে থাকার ওয়াদা দিয়েছে বিএনপিকে। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও সামর্থ্য অনুযায়ী রাজপথে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছে।
এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্রে করে পরিকল্পনা গুছিয়ে আনছে বিএনপি।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে দলের চূড়ান্ত নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে।
যে কোনও ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশনা থাকবে বলে জানা যায়। তাই তাদের পাশে থাকতে শরিক দলগুলোর মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন রাজপথেই অবস্থান নেবেন দলটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরের জনবল-ভিত্তি কাজে লাগিয়ে যতদূর সম্ভব বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে চান তারা।
গত ২৮ জানুয়ারি জোটের বৈঠকেও জামায়াতে ইসলামী মনে করিয়ে দিয়েছে, আপাতত বিএনপির পাশেই থাকছে তারা। ওইদিন রাতে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অনেক প্রপাগান্ডা চলছে। কোনও প্রপাগান্ডায় কান দেবেন না। এতদিনে যেহেতু আমাদের মধ্যে সমস্যা হয়নি, সামনেও ইনশাল্লাহ হবে না।’
৩১ জানুয়ারি রাতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার প্রভাবশালী একজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন বিএনপির পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘ওইদিন আমরা সর্বোচ্চ জমায়েতের চেষ্টা না করলেও ঢাকা মহানগরের একটি অংশের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।’
সূত্রে জানা যায়, ঢাকার বাইরেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিএনপির সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েই প্রতিক্রিয়া জানাবেন। বিশেষ করে বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে সহিংসতার বিপক্ষে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জামায়াতও ঝুঁকিহীন জমায়েতের পক্ষে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জামায়াতের একজন জেলা আমির জানান, তার কাছে এখনও কেন্দ্রের কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একজন দায়িত্বশীল কর্মীর দাবি, তারা রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে মাঠে থাকার নির্দেশ পেয়েছেন।
তবে জামায়াতের কারও কারও প্রতিক্রিয়া— অতীতে জামায়াতের কোনও বিষয়ে বিএনপি সরাসরি অবস্থান নেয়নি। তাই দলের একটি অংশ চায়, খুব প্রয়োজন না হলে যেচে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে যোগ দিয়ে সংখ্যা বাড়ানোর কিছু নেই।
এদিকে জামায়াতের মতো বিএনপির অন্য শরিক দলগুলোও খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন সামর্থ্য অনুযায়ী জনশক্তি নিয়ে রাজপথে থাকতে চায়। শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, ‘গত ২৮ জানুয়ারি জোটের বৈঠকে নেতারা খালেদা জিয়ার সামনেই বলে এসেছেন— তারা যে কোনও পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে থাকবেন।’
ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি আবদুর রব ই্ইসূফী বলেছিলেন, ‘ম্যাডামকে বলে এসেছি, আমরা তাকে ছাড়া কোনও নির্বাচনে যাবো না।’
যদিও জোটের শরিক দলের কোনও কোনও নেতা মনে করেন, বিএনপির ভেতরেই আস্থাহীনতা আছে। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, ‘একজন আরেকজনের দালাল। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করিয়েছেন বিএনপির নেতারাই!’
জোটের নিবন্ধিত একটি দলের মহাসচিবের মন্তব্য, ‘নেতৃত্বের অভাব থাকার কারণেই এমন নড়বড়ে অবস্থা। ধরপাকড় আরও দুই দিন অব্যাহত থাকলে নেতারা পালিয়ে যেতে পারেন। তাই বিএনপির নেতারা না থাকলে আমাদের তো থাকার কথা স্বাভাবিকভাবেই উঠবে না। তবে আমরা আন্তরিক।’
বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার কথায়, ‘অবস্থার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ একই কথা বললেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক। তার ভাষ্য, ‘অবস্থা ও পরিবেশের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত আসবে। এখনই বলতে চাই না আমরা কী করবো। তবে আমরা জোটে থাকতে চাই।’
বিএনপি-জোটের জ্যেষ্ঠ নেতা ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম জানালেন তাদের দুই রকম অবস্থা।
তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে জোটের সব কর্মীরা রাস্তায় থাকবে। দ্বিতীয়ত, মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিকভাবে সর্বাত্মক সমর্থন রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর আরোপিত মামলাটি মিথ্যে মামলা, রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার শাস্তি হলে আমরা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো।’