শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে নিয়ে রাজপথে থাকুন ,ভয় নেই, বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন-পুলিশ-সশস্ত্র বাহিনী আছে: খালেদা জিয়া

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনেছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সভায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির রায় ঘিরেই বেশিরভাগ নেতা বক্তব্য দেন। বিশেষ করে অতীতের রাজনৈতিক আন্দোলন কর্মসূচি নিয়েও কিছু কিছু নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। আবার কেউ কেউ শুধু তৃণমূলে নয় রাজধানীতেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন। তবে নেতাদের বক্তব্য শোনার পর প্রায় তিন মিনিটের সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমার হারানোর কিছুই নেই। রাজনীতির জন্য স্বামী, মা, সন্তানকে এমনকি বাড়ি হারিয়েছি। আমার এক সন্তান বিদেশে আছে। আপনারাই আমার আশা। আপনাদের নিয়েই আমি রাজনীতি করছি। আমি ভিতু নই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে চলবে। আপনারা অনেক পরিশ্রম করছেন। আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। কারো ভাই, ছেলে, বোন, বাবা হারিয়েছে। এখন নতুনদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা হঠকারী কোনো কিছুতে পা দেবেন না। দলকে বিপদে ফেলার মতো কিছু করবে না। সবাই একতাবদ্ধ থাকবেন। এবার যদি কেউ দলের বিরুদ্ধে কিছু করে থাকে তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদেরকে ভবিষ্যতে কোনো পদ দেয়া হবে না। আমার বিশ্বাস সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে শক্তিশালী করবেন।

এছাড়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যারা কাজ করেছে, যারা দলের সাথে বেইমানি করেনি, দলে তাদের ভালো ভালো জায়গায় অবস্থান দেয়া হবে। কিন্তু যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা ওদিকে রাখবে, তাদের কোনো মূল্যায়নের জায়গা নেই। এদের তারাও (সরকার) নেবে না, আমরাও নেবো না। ক্ষমা কিন্তু একবার হয়, বারবার হয় না।

আজ শনিবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই এতে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক কোনো সংবাদ ব্রিফিং হয়নি।

এর আগে সকালে উদ্বোধনী পর্বে সোয়া এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বেলা সোয়া ১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাহী কমিটির মোট ৪২ জন বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে মহিলা দলের সভাপতিসহ পাঁচজন মহিলা নেত্রী বক্তব্য দেন। বক্তাদের মধ্যে মফস্বল থেকে আসা নেতারা অতীতে রাজধানীতে আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য মহানগর নেতাদের সমালোচনা করেন। এবার যেন তা না হয় সেজন্য নেতৃবৃন্দকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির বলেন, দল অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। যত ষড়যন্ত্র হোক না কেনো আমরা এক থাকবো। ম্যাডাম যেখানেই থাকুক তিনি দলের নেতৃত্ব দেবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হলে আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা প্রহসনমূলক মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে যদি কনভিকশন দিয়ে থাকে তাহলে দেশের জনগণ তা মানবে না। সেজন্য যেটা করতে হবে সেটাই আমরা করবো। অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে।

বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, আমরা মনে করি ৮ তারিখ যদি কোনো ষড়যন্ত্রমূলক রায় দেয়া হয় তাহলে সবাই রাজপথে নামবো যাতে কোনো ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে না পারে। নেত্রী সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহবান জানিয়েছেন। কোনো কর্মসূচি ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না কোনো কর্মসূচি ঠিক হয়নি। যে কর্মসূচি হবে তা হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক।

আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপিরসহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ড. মোর্শেদ হাসান খান।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় যদি বেগম জিয়াকে অন্যায় সাজা দেয়া হয় তাহলে আমরা প্রতিহত করবো। সারাদেশে এর রেশ ছড়িয়ে পড়বে। আমরা বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপি ছাড়া দেশে কোনো একদলীয় নির্বাচন হতে দেব না।

দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওয়ান ইলেভেনের মিথ্যা মামলায় ৮ তারিখ কী রায় হবে সেটা সরকার জানে। তবে আমরা জনগণকে নিয়ে রাজপথে থাকবো। আমাদের নেত্রী জেলে গেলে আমরা বাইরে থাকবো না, আমরাও জেলে যাবো। বৈঠকে খালেদা জিয়ার নির্দেশনা কী ছিলো প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেশনেত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন।

————–0————–

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপির কোনো ভয় নেই। বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন আছে, পুলিশ আছে, সশস্ত্র বাহিনী আছে। এ দেশের জনগণ আছে। দেশের বাইরে যারা আছেন তারা আছেন। কাজেই বিএনপির কোনো ভয় নেই, ভয়টা আওয়ামী লীগের।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় দলের চেয়ারপারসন উদ্বোধনী পর্বে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রশাসনকে দলীয় নেতাকর্মীদের মতো ব্যবহার করছে। তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। কিন্তু প্রশাসন যদি একটু সুযোগ পায় তাহলে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। কেননা তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে।

তিনি বলেন, পুলিশকে বাধ্য করা হচ্ছে অন্যায় ও দলীয় কাজ করতে।

বক্তব্যের শেষে এসে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাকে কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে দমাতে পারেনি, পারবেও না। আমি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছি, দেশের মানুষের সঙ্গে আছি । সাহস সঞ্চার করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আসুন সবাই এই দেশটাকে রক্ষা করি, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।’

ঐক্যের আহ্বান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, গুম, খুনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জেগে উঠবে, ২০ দল জেগে উঠবে। সকল রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। আজ দেশের এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আমরা কে কী পেলাম, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের পাওয়া ওটাই হবে, যদি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশটাকে রক্ষা করতে পারি-তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় পাওয়া।

তিনি বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ দেশ জাগবে, ‘জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে। সকলেই আমরা দেশ গড়ে তুলব। দেশ গড়ার জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন হবে। সেখানে আজ যারা জুলুম-অত্যাচার করছে, তাদের সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না, তাদেরও সঙ্গে নিতে আমরা কোনো দ্বিধা করব না।’

খালেদা জিয়া নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বহু সংকট আসবে, ষড়যন্ত্র হবে এবং নানা রকমভাবে ভয়ভীতি দেখাবার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমরা ভয়ে ভিতু নই।’

ক্ষমা একবার হয়, বারবার না
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘যারা সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যারা কাজ করেছে, যারা দলের সঙ্গে বেইমানি করেনি-দলে তাদের ভালো ভালো জায়গায় অবস্থান দেয়া হবে। ভবিষ্যতে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়-তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই তারা মূল্যায়ন পাবেন। কিন্তু যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা ওদিকে রাখবে-তাদের কোনো মূল্যায়নের জায়গা নেই।’

আগে ক্ষমা করার উদাহরণ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারপরও আমরা কিন্তু ক্ষমা করেছি। ক্ষমা একবার হয়, বারবার হয় না। তাই আমি বলতে চাই, বিপদ আসলে আসুন সকলে একসঙ্গে বিপদ মোকাবিলা করব। আর সুদিন আসলে একসঙ্গে সুন্দর করে দেশ গড়ব।’

দেশে ক্রান্তিকাল চলছে
খালদো জিয়া বলেন, দেশের ক্রান্তিকাল চলছে। আমরা এখানে সভা করতে চাইনি। ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছিল। কিন্তু কেন সভা করতে দেয়া হলো না। বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। তারপরও বলবেন দেশে গণতন্ত্র আছে?

তিনি বলেন, ডিজিটাল আইনের নামে নতুন কালাকানুন করা হচ্ছে। সাংবাদিকেরা সত্য কথা বলে। সেই কথাগুলো যখন মানুষ শোনে, তখন জনগণের অধিকার হরণ করতে নতুন আইন করা হচ্ছে।

সঠিক রায়ের সুযোগ নেই
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, সর্বোচ্চ আদালত বলছেন নিম্ন আদালত সরকারের কবজায়। পত্রিকায় যা দেখছি তাতে বোঝা যাচ্ছে, সঠিক রায় দেয়ার সুযোগ নেই। সঠিক রায় দিলে কী পরিণতি হয়, তা তো দেখেছেন। তারেক রহমানের রায় দেয়ার পর বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে। অপরাধ নেই। সেখানে কীসের বিচার হবে। কিন্তু তারা জোর করে বিচার করতে চায়।

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সময় মিলনায়তনে উপস্থিত নির্বাহী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেন। নেতারা স্লোগানে বলেন, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দী হতে দেব না।’ ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেব না।’

নৌকা ডুবেছে?
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারের সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে এত আগে প্রচারের কারণ কী?

তিনি বলেন, ‘নৌকা এমন ডোবা ডুবছে, যে তোলার জন্য এত আগে ভোট চাইতে হচ্ছে? হাত তুলে ওয়াদা করাতে হচ্ছে।’

এর আগে ১১টা ৩৮ মিনিটে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ধারণকৃত একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।

এর আগে উদ্বোধনী পর্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া দলের পক্ষ থেকে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় প্রয়াত নেতাদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ-শিল্পী-সাহিত্যিকসহ বিশিষ্টজনদের স্মরণ করে দেয়া শোকপ্রস্তাবটি গৃহীত হয়।

শীর্ষনিউজ/এইচএস

Check Also

আশাশুনিতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ব্যবসা পর্যালোচনা ও কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান(আশাশুনি)সাতক্ষীরা।।আশাশুনিতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবসা পর্যালোচনা ও কর্মী সভা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।