ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:চট্টগ্রাম টেস্টজুড়েই মুমিনুল আর মুমিনুল। প্রথম ইনিংসেও বাংলাদেশকে রক্ষা করেছিলেন ১৭৬ রানের ইনিংস খেলে। শেষ ইনিংসেও তার আরেকটি দায়িত্বপূর্ণ ইনিংসে বাংলাদেশ রক্ষা পেয়েছে সম্ভাব্য এক লজ্জাজনক হার থেকে। ফলে টেস্ট শেষে মুমিনুলের নামই উচ্চারিত হলো সর্বত্র। হাতুরাসিংহের ব্যাকারণে অচল মুমিনুল এ ম্যাচে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়ও। বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড একজনেরই। তিনি মুমিনুল হক। কক্সবাজারের এ ক্রিকেটার ২০১৪ তে এ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১০০ রানের এক ইনিংস খেলে সাঙ্গাকারাদের হাত থেকে পরাজয় মুক্ত করেছিলেন দলকে। কাল আরেক দফা দায়িত্বপূর্ণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে দলকে পরাজয় মুক্ত করেছেন। প্রথম ইনিংসে সাকিববিহীন দলে তামিম ইকবাল আউট হয়ে যাওয়ার পর থেকে টেনশন বিরাজ করছিল। সেখান থেকে মুমিনুল ক্রিজে অবিচল থেকে দলকে ৫১৩ রানের পাহাড়সম উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিলেন ২১২ বল মোকাবেলা করে ১৭৬ রানের এক ইনিংস খেলে। প্রত্যাশাটা ছিল তার কাছে ডাবল সেঞ্চুরির। কিন্তু দ্বিতীয় দিন সকালে খেলতে নেমে এক রান যোগ করেই আউট হয়ে গেছেন। ফলে ডাবলের স্বপ্ন ভেস্তে যায় দ্বিতীয় দফায়। কারণ তার ক্যারিয়ারসেরা স্কোর ১৮১। সে স্কোরটাও করেছিলেন তিনি এ জহুর আহমেদেই। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই পারফরম্যান্স তার। কাল দলের প্রয়োজনে আবারো যে দায়িত্বপূর্ণ একটি ইনিংস খেলতে হবে সেটা সম্ভবত আঁচ করতে পারেননি তিনিও। ব্যাটিং উইকেটে শ্রীলঙ্কা ৭১৩/৯ (ডিক্লেয়ার) এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে যখন প্রচণ্ড চাপে ফেলে দেয় এবং চতুর্থ দিন শেষে শ্রীলঙ্কা তুলে নেয় তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহীমকে তখন ক্রিজে ছিলেন এ ছোটখাটো গড়নের ক্রিকেটার। মুশফিকের আউট হওয়ার সঙ্গেই শেষ দিনের খেলার। কাল সকালে মুমিনুল কিছুটা নার্ভাস ছিলেন ঠিক প্রথম ইনিংসের মতোই। কিন্তু এ যাত্রায় আর সমস্যা হয়নি। ধীরে ধীরে চলে যান তিনি সেঞ্চুরির মার্কে। এবং সেঞ্চুরিপূর্ণ করে নিজের মতো করেই উদযাপন করেন। মুমিনুল প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেননি। আরো একটা রেকর্ড রয়েছে তার দখলে। সেটা এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ। এর আগে এক ম্যাচে সর্বাধিক রান করার রেকর্ড তামিম ইকবালের। ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩১ রান করেছিলেন তিনি। মুমিনুল এ ম্যাচে ছাড়িয়ে যান তাকে। মুমিনুল করেছেন ২৩২ রান। গত বছর ওয়েলিংটনে সাকিব দুই ইনিংসে মিলিয়ে সংগ্রহ করেছিলেন ২১৭।
তবে এটা ঠিক বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে মুমিনুলকে প্রতিষ্ঠা করা বড্ড প্রয়োজনও ছিল। টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেতাব পাওয়া মুমিনুলকে ওয়ানডেতে বিবেচনা করা হয় না। কেন? তার সদুত্তর নেই। বিসিবি কেনই যে তাকে শুধু টেস্টের জন্যই বিবেচনা করে সেটা তারাই ভালো বলবে। তবে দুনিয়ার সব দলেই এ ধরনের ব্যাটসম্যানদের সব ফরম্যাটেই খেলতে দেখা যায়। বিসিবি মুমিনুলের ক্ষেত্রে একটু অন্য হিসাব কষে! মুমিনুল সেটার একটা জবাবও দিয়ে রেখেছেন। কারণ প্রয়োজনে দায়িত্বপূর্ণ হয়ে যাওয়া। আবার অ্যাটাকিং সব ধরনের খেলাই যে তিনি খেলতে অভ্যস্ত তার প্রমাণ দিয়েছেন এ টেস্টে আরেকবার। প্রথম ইনিংসে ৫৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে সেঞ্চুরি করেন তিনি ৯৬ বলে। দ্বিতীয় ইনিংসে কাল দলের প্রয়োজনেই দায়িত্ব নিয়ে খেলেন। ৭৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে সেঞ্চুরি করেন ১৫৪ বলে। যার মধ্যে ছিল দুই ছক্কা ও পাঁচটি চার। ম্যাচে কুশল মেন্ডিসও করেছিলেন ১৯৬। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের জন্য নির্বাচিত মুমিনুলই।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫১৩/১০, ১২৯.৫ ওভার (মুমিনুল ১৭৬, মুশফিক ৯২, মাহমুদুল্লাহ ৮৩, তামিম ৫২, ইমরুল ৪০; লাকমল ৬৮/৩, হেরাথ ১৫০/৩)।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস : ৭১৩/৯ ডিক্লে., ১৯৯.৩ ওভার (মেনডিস ১৯৬, ডি সিলভা ১৭৩, সিলভা ১০৯, চান্দিমাল ৮৭, ডিকওয়েলা ৬২; তাইজুল ২১৯/৪, মেহেদি ১৭৪/৩)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস
রান বল ৪ ৬
তামিম ক দিকওয়েলা ব সান্দাকান ৪১ ৬২ ৬ ০
ইমরুল ক চান্দিমাল ব পেরেরা ১৯ ৪৮ ১ ১
মুমিনুল ক করুনারতেœ ব ডি সিলভা ১০৫ ১৭৪ ৫ ২
মুশফিক ক মেন্ডিস ব হেরাথ ২ ২০ ০ ০
লিটন ক পেরেরা ব হেরাথ ৯৪ ১৮২ ১১ ০
মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ২৮ ৬৫ ৩ ০
মোসাদ্দেক অপরাজিত ৮ ৫৩ ১ ০
অতিরিক্ত (বা-৩, লেবা-২, নো-৪, ও-১) ১০
মোট (৫ উই:, ১০০ ওভার) ৩০৭
উইকেট পতন : ১/৫২, ২/৭৬, ৩/৮১, ৪/২৬১, ৫/২৭৯।
বোলিং : হেরাথ ২৮-৬-৮০-২, লাকমল ৯-১-২৫-০, ডি সিলভা ১২-০-৪১-১, পেরেরা ২৬-৫-৭৪-১, সান্দাকান ১৮-২-৬৪-১, কুমারা ৬-০-১৬-০, মেন্ডিস ১-০-২০-০।
ফল : ম্যাচ ড্র
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মুমিনুল হক
Check Also
প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …