আনন্দবাজার : গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে গত কয়েক মাসে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় সারা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রতিবেশী ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ ভারত শুরু থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে তেমন তৎপর ছিল না। অন্যান্য দেশের সঙ্গে কিছু ত্রাণ পাঠানো ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী এই দেশটি তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের নির্মোহ থাকার কারণ ছিল মিয়ানমারের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক। তাদের আশঙ্কা ছিল, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তৎপর হলে মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট হবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ভারত। এদিকে এই ইস্যুতে ‘মুরব্বি’ হয়ে চীন ঢুকে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তৎপর হয়ে উঠেছে ভারত। এক্ষেত্রে চীনের আরেক বৈরী জাপানকে পাশে পেয়েছে দেশটি।
রবিবার আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারত এবং জাপান যৌথভাবে কাজ শুরু করতে চলেছে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই দুই দেশের রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। জাপানের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিপ্পন ফাউন্ডেশন এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কূটনৈতিক শিবিরের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ভারতের বিদেশনীতি রীতিমতো কোণঠাসা। এ ব্যাপারে সাউথ ব্লকের সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে চীন ঢুকে পড়ে গোল দিয়ে দিয়েছে এমনটাই মনে করা হয়। সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারে গিয়ে ‘ রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণই করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বরং সে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে মিয়ানমারকে খুশি করার চেষ্টা করেছিলেন।
কারণ, ভারতের বরাবরের আশঙ্কা মিয়নমারকে তুষ্ট রাখতে না-পারলে দেশটি পুরোপুরি চীনের কব্জায় চলে যাবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের তৎপরতাকে জাতিসংঘ যেভাবে কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে, তাতে গলা মেলাতে পারত নয়া দিল্লি। কিন্তু মোদি সরকার সেটাও করেনি। এর ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের হাসিনা সরকার।
সূত্রের খবর, এই বছরের মাঝামাঝি মোদির বাংলাদেশে যেতে পারেন। তার আগে বাংলাদেশের জন্য ভারতের তরফে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া অন্তত তিনি নিয়ে যেতে চাইছেন।
আনন্দবাজার জানায়, রোহিঙ্গা নিয়ে ত্রিস্তরীয় সমাধানসূত্র ঘোষণা করে বাংলাদেশের মন জয় করে নিয়েছে চীন। বেইজিং-এর ত্রিস্তরীয় প্রস্তাব ১. রাখাইন প্রদেশে অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা, রোহিঙ্গাদের দেশ ছেড়ে যাওয়া বন্ধ করা এবং শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনা। ২. বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো। ৩. রাখাইনের দারিদ্র দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড়। এ ব্যাপারে সিংহ ভাগ দায়িত্ব নিতেও রাজি চীন।
আনন্দবাজার লিখেছে, এর পরেই নড়েচড়ে বসেছে বিদেশ মন্ত্রক। সূত্রের খবর পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিল জাপানও। মায়ানমারে রাজনৈতিক সংস্কার শুরু হওয়ার সময় থেকেই সে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এসেছে জাপান। বহু দেনা মাফ করে দেওয়া হয়েছে। তদুপরি মিয়ানমারে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বড় প্রকল্পগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন ঋণও দেওয়া হয়। বেশ কিছু দিন আগে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহি সাসাকাওয়াকে বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে দৌত্য করার জন্য মিয়নমারে পাঠায় জাপান সরকার। উদ্দেশ্য, সে দেশের বিভিন্ন আদি জনগোষ্ঠীকে মূল রাজনৈতিক স্রোতে নিয়ে আসা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সাসাকওয়াই সমন্বয় করছেন নয়া দিল্লির সঙ্গে। এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে জাপানেরও একটি স্বার্থের যোগ রয়েছে। চীন যাতে মিয়ানমারে তার থাবা গেড়ে বসতে না-পারে তা যেমন নয়া দিল্লি চায়, চায় টোকিও-ও। আর তাই এ ক্ষেত্রে দুটি দেশ একযোগে কূটনৈতিক সহযোগিতার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
০৫ফেবরুয়ারী,২০১৮সোমবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/আনন্দবাজার/আসাবি