ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:দেশজুড়ে চলছে গণগ্রেফতার। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায়কে সামনে রেখে পাঁচ দিন ধরে এই গ্রেফতার অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ সারির বেশকিছু নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীরও অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। প্রথম চার দিন ঢাকাকেন্দ্রিক গ্রেফতার অভিযান চালানো হলেও গতকাল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ব্যাপকহারে গ্রেফতার চালানো হয়েছে। একের পর এক পুলিশি অভিযানে অনেক নেতাকর্মী এখন বাড়ি ছাড়া। কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষও গ্রেফতার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সুযোগে অনেকে ব্যক্তি শত্রুতাও হাসিল করে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার পথে হাইকোর্টের সামনে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ ভ্যান থেকে তিন বিএনপি কর্মীকে মুক্ত করে নেয় দলীয় নেতাকর্মীরা। সেই থেকে শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান। তিন কর্মীকে ছাড়িয়ে নেয়ার পর হাইকোর্টের সামনে থেকেও পুলিশ যাকে পায় তাকে ধরে নিয়ে যায়। সে সময় অনেক পথচারী গ্রেফতার হন বলে অভিযোগ আছে।
প্রথমে ঢাকায় গ্রেফতার অভিযান সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় যথেচ্ছ গ্রেফতার শুরু হয়েছে, বর্তমানে যা গণগ্রেফতারে রূপ নিয়েছে। গত পাঁচ দিনে ছয় শতাধিক মানুষ গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন, যাদেরকে বিনা কারণে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৫ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে।
ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ সারিরও অনেক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও উপদেষ্টা সাবেক ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন ও আনিসুর রহমান খোকন, সাভারের সাবেক পৌরমেয়র কেফায়েত উল্লাহ, মহিলা দলের রাজিয়া আলিম ও পেয়ারা মোস্তফা, মহানগর নেতা হাজী শফিকুল ইসলাম রাসেল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অনেকেই গত পাঁচ দিনে গ্রেফতার হয়েছেন। আরো অনেককে গ্রেফতারের জন্য বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চলছে বলে জানা গেছে। গত শনিবার এয়ারপোর্ট রোডের হোটেল লা মেরিডিয়ানের সামনে থেকে অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন।
রাজধানীতে অনেক নিরীহ মানুষ গ্রেফতার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত শনিবার রাতে মিরপুর এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে পুলিশ আটক করে। ওই ব্যবসায়ীর পরিবার থেকে বলা হয়েছে, তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। এক ব্যক্তির সাথে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি মামলার রায় প্রদানের কথা রয়েছে। এই রায়কে কেন্দ্র করে কোনোরূপ আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে না পারে সেজন্যই নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চলছে বলে জানা গেছে।
ঝালকাঠির নলছিটির এক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পুলিশ কয়েক দফায় তার বাড়িতে গিয়েছে। অনেকেই ইতোমধ্যে বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন। জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতেও অভিযান চলছে। জামায়াতে ইসলামীর বেশকিছু নেতাকর্মী ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এ দিকে, ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে যাতে কোনো জমায়েত হতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। বাইরে থেকে রাজধানীতে যাতে নেতাকর্মীরা না আসতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যেই বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও রেলওয়ে স্টেশনে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে।
তবে দেশজুড়ে গ্রেফতার অভিযান নিয়ে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। পুলিশের আইজির মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল বিকেলে বইমেলা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের গেটের সামনে পুলিশের ওপর হামলা ও প্রিজন ভ্যান থেকে দু’জনকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় শাহবাগ ও রমনা থানায় দায়েরকৃত তিন মামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন গ্রেফতার হয়েছে এবং মানুষের নিরাপত্তা রক্ষা ও রাজধানীর শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। রাজধানীতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, কোনো গ্রেফতার তৎপরতা চলছে না। যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, সেগুলো নিত্যদিনের কাজের অংশ।
৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো কিছুই হবে না। কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। যে আগুন সন্ত্রাস একবার শুরু হয়ে ছিল, সেটির আর পুনরাবৃত্তি হতে দেয়া হবে না।০৫ফেবরুয়ারী,২০১৮সোমবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/নয়াদিগন্ত/আসাবি