ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট::সিলেট সফরশেষে ঢাকায় ফিরেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আজ মঙ্গরবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসভবনে এসে পৌঁছেন বিএনপির প্রধান। গতকাল সোমবার রাত রাত ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে সড়কপথেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি।
গত সন্ধ্যায় সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরানের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন খালেদা জিয়া।
আমাদের সিলেট ব্যুরো জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সিলেটে দুই ওলির মাজার জিয়ারত শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। সোমবার রাত পৌনে ১০টায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সিলেট সার্কিট হাউজ ত্যাগ করে। এর আগে রাতে সার্কিট হাউজে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন বেগম খালেদা জিয়া। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ নয়া দিগন্তকে জানান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে দলীয় কিংবা রাজনৈতিক কোনো বক্তব্য রাখেননি।
—–0———-
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহসহ ১১টি মামলার শুনানি পিছিয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে রাজধানীর দারুসসালাম থানার নাশকতার ৮ মামলার শুনানির জন্য আগামী ১২ মার্চ এবং যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপর একটি মামলার শুনানির জন্য আগামী ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। সোমবার রাজধানীর বকশিবাজারে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা শুনানির ওই দিন ধার্য করেন।
আদালত সূত্র জানায়, মোট ১১টি মামলার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানায় যাত্রী হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। আর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ইতোমধ্যেই আসামিপক্ষ হাইকোর্টে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেছেন। ওই মামলায় চার্জ গঠন সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিলের দিন ধার্য ছিল। বাকি ৯ মামলায় চার্জ গঠন সংক্রান্ত শুনানির দিন ধার্য ছিল।
—0————–
দেশ জাতির জন্য আল্লাহর রহমত কামনা
শাহজালাল-শাহপরাণের মাজারে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মোনাজাত করলেন বেগম খালেদা জিয়া
সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ:) ও হযরত শাহ পরান (রহ:) এর মাজার জিয়ারত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে তিনি সেখানে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া দরুদ পড়ে দুহাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করেন। নিজের, পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি দেশ ও জাতির জন্যও তিনি মোনাজাত করেন। এ সময় দরগা দুটি ঘিরে ছিল হাজার হাজার মানুষের ভিড়। কেবল মাজার দুটিতেই নয়, সিলেটে প্রবেশের পর থেকে প্রতিটি সড়কেই খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ঘিরে ছিল বিএনপি নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ ও উৎসুক জনতার ভিড়। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে আসা নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে তিনি হাত নেড়ে অভ্যর্থনার জবাব দেন। এর আগে সকাল সোয়া নয়টায় সিলেটের উদ্দেশে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে রওনা দেন খালেদা জিয়া। ঢাকা থেকে সিলেট দীর্ঘ রাস্তায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে কঠোর নিরাপত্তা দিয়েছে পুলিশ। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়া হয়নি দলটির নেতাকর্মীদের। বন্ধ রাখা হয় রাস্তার দুপাশের সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাধা উপেক্ষা করে রাস্তায় জড়ো হওয়া নেতাকর্মী ও উৎসুক জনতার উপর বেশ কয়েক জায়গায় লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। ধরপাকড় চালিয়েছেন সমানে। ঢাকা থেকে নরসিংদী পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তুলনামুলক কম হলেও ভিন্ন দৃশ্যপট ছিল কিশোরগঞ্জ থেকে সিলেট পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তার। খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ছিল একটিই ¯েøাগানÑ ‘আমার নেত্রী, আমার মাÑ বন্দী হতে দেবো না’।
সকালে গুলশান থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দিয়ে গাড়িবহর তেজগাঁও, মগবাজার, কাকরাইল, নয়াপল্টন, মতিঝিল, টিকাটুলি, সায়েদাবাদ ফ্লাইওভার হয়ে এগিয়ে যায় তার গাড়িবহর। নয়াপল্টনে পৌছালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক মুহুর্তের জন্য থামে খালেদা জিয়ার গাড়ি। এ সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমদের পক্ষ থেকে শতাধিক কর্মী-সমর্থক খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার কারণে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে রাজধানীর অন্য কোন স্পটে অবস্থান নিতে পারেননি দলটির নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। গাড়িবহর সাইনবোর্ড পেরিয়ে যাবার পর পুলিশ তাকে আটক করে। রাজধানী ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এপিসি কার, জলকামান, পি্রুজন ভ্যান নিয়ে লাঠিহাতে পুলিশের এমন অবস্থানের কারণে রাস্তায় দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশী বাধার মুখেও ভুলতা গাউছিয়া, নরসিংদীর মাধবদী, ইটানগর, ভেলানগর, কামার টেক, বারৈচা ও বেলাবো পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে অবস্থান নেন। ভেলানগরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে জুতো প্রদর্শন করে মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম খান বীরুর সমর্থকরা। কামারটেকে রাস্তার পাশে অভ্যর্থনা জানাতে জড়ো হওয়া নারীদের দেখে গাড়ি থামান খালেদা জিয়া। এ সময় তার সামনেই পুলিশে নারীপুরুষের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এ দৃশ্য দেখে খালেদা জিয়া গাড়ির বহর থামিয়ে দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ বন্ধ করে। পুলিশের বাধার কারণে রারৈচা স্টেশনের আগে রাস্তার পাশে সব্জিখেতে অবস্থান নিয়েছিল শতাধিক কর্মী-সমর্থক। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর দেখে তারা ¯েøাগান দিতে দিতে রাস্তার দিকে এগিয়ে এলে বিএনপি চেয়ারপারসন গাড়ি থামিয়ে হাত নেড়ে তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে শিবপুরের কারারচর এলাকায় বিএনপির আইন সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক কারাবন্দী আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েলের সমর্থকরা খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। পুলিশ সেখান থেকে সানাউল্লাহ মিয়াকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। দুপুর সোয়া ১২টায় দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌছে গাড়িবহর। মুহুর্তেই পাল্টে যায় পরিবেশ। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গলি, মার্কেটসহ আশপাশের দোকানপাট থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের নামে ¯েøাগান দিতে দিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে আসে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখে গাড়ি থামিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। কর্মীসমর্থকরা আশুগঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত ¯েøাগান দিতে দিতে বহর এগিয়ে দেয়। গাড়িবহর ভৈরব পেরিয়ে যাওয়ার পর জমায়েত কর্মীসমর্থকদের লাঠিচার্জ করে ধাওয়া দেয় পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও পুলিশ ফাকা গুলি ছুড়ে। এতে পুলিশের ভৈরব থানার ওসি মোখলেছুর রহমানসহ কয়েকজন সদস্য আহত হয়। পুলিশ সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, বিশ্বরোড, সরাইলের কুট্টাপাড়া, মালিহাতাসহ বিভিন্ন পয়েন্টের অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। গাড়িবহর সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌছার পর পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। মাধবপুর, গোলচত্ত¡রে জেলা বিএনপি সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সালের সমর্থক, শায়েস্তাগঞ্জে হবিগঞ্জর পৌর মেয়র জি কে গউছের সমর্থক, বাহুবল, মিরপুর, আউশকান্দিতে সাবেক এমপি শেখ সুজা মিয়া সমর্থকরা রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। শায়েস্তাগঞ্জে তৌরন নির্মাণ ও রাস্তার পাশে মঞ্চ করে মাইকে ¯েøাগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে বরণ করে স্থানীয় বিএনপি। হবিগঞ্জের শেরপুর কিবরিয়া চত্বরে পুলিশের বাধার মুখেও রাস্তায় অবস্থান নেন বিএনপির হাজার হাজার বিএনপি। গাড়িবহর শেরপুর গোলচত্বর পেরুনোর পর নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে জেলা বিএনপি ও স্বেচছাসেবক দলের অন্তত ৮জন নেতাকর্মীকে গেপ্তার করে। সিলেটের গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর ও রশিদপুরে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর ছবি সম্বলিত ফেস্টুন হাতে হাজার হাজার কর্মী সমর্থক ¯েøাগানে ¯েøাগানে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে অভ্যর্থনা জানায়। সিলেট সদরের দক্ষিণ সুরমা চন্ডিপুল এলাকায পৌছালে শতাধিক মোটর সাইকেলের একটি বহর খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে স্কট দিয়ে সার্কিট হাউসে পৌঁছে দেন। বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির কারণে সুরমা নতুন ব্রিজের মেন্দিবাগ থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত দুই মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে গাড়ি বহরের প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। এ সময় নেতাকর্মীদের মুখে ছিল একটিই ¯েøাগানÑ ‘আমার নেত্রী, আমার মা- বন্দী হতে দেব না’। সার্কিট হাউসের সামনে ও কিন ব্রিজের ওপর অবস্থান নিয়েও হাজার হাজার নেতাকর্মী নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। খালেদা জিয়ার সফরকে স্বাগত জানিয়ে সিলেট মহানগরে বেশকিছু তৌরণ নির্মাণ করেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সার্কিট হাউসে পৌছে আধঘণ্টা বিশ্রাম নেন খালেদা জিয়া। এ সময় সার্কিট হাউসের বাউন্ডারী দেয়ালের পাশে সর্তক প্রহরায় ছিল পুলিশ। ওদিকে গতকাল দুপুরে সার্কিট হাউস ও শাহজালাল (র.) মাজার গেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ¯েøাগান দেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। তবে বিকাল পৌনে তিনটার দিকে বিএনি নেতা শামসুজ্জামান জামানের অনুসারী নেতাকর্মীরা পাল্টা শোড়উন দিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা সরে যায়। এদিকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যা ৬টায় নেতাকর্মীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে যান খালেদা জিয়া। সেখানে জিয়ারত শেষে একটি বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। দুহাত তুলে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। দেশ ও জাতির জন্য দোয়া করেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীও দেশজাতি এবং প্রিয় নেত্রীর জন্য দোয়া করেন। তার সে পরে হযরত শাহপরান (র.) মাজার জিয়ারত করেন। সিলেট সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেনÑ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু, ডা. জাহিদ হোসেন, আহমদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।