‘দেশ গঠনেও বিরাট ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে দেশ গঠনেও বিরাট ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী। দেশের বাইরেও সততা-নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করছে আমাদের সেনাবাহিনী।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি একথা বলেন।

রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারে যাচ্ছেন সুইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেট
ঢাকা: মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে আজ মঙ্গলবার কক্সবাজারে যাবেন সফররত সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেট।

ঢাকাস্থ সুইস দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থা দেখতে সুইস এয়ারফোর্সের বিশেষ বিমানে কক্সবাজারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে বিমানটি কক্সবাজার পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখো রোহিঙ্গা কক্সবাজারের কুতপালংসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

এছাড়া বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেট বেলা সাড়ে ১১ টায় কুতপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প যাবেন এবং দুপুর ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। এ সময় তিনি ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলবেন এবং তাদের কাছ থেকে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কাহিনী শুনবেন।

এর আগে ঢাকাস্থ সুইস দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুইস প্রেসিডেন্ট চলমান রোহিঙ্গা সংকটে সংহতি প্রকাশের জন্য বাংলাদেশে সরকারি সফর করছেন। তিনি কুতপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলবেন। পরে তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন। পরে সুইস প্রেসিডেন্ট বিকেল সোয়া ৩টায় ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ত্যাগ করবেন।

এর আগে সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফররত সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেট দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট মায়ানমার সরকার সৃষ্টি করেছে, তাই সমাধানও তাদেরকে করতে হবে, এক্ষেত্রে কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করতে হবে, রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের পাশে থাকবে সুইজারল্যান্ড’।

এসময় ১২ মিলিয়ন সুইস ফাঙ্ক সহায়তার আশ্বাস দেন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেট। এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ০৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সফররত সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেট। শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করার পর এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সুইস প্রেসিডেন্ট। পরে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে নিজের অনুভূতি লিপিবদ্ধ করেন প্রেসিডেন্ট অ্যালেই বারসেট। পরে স্মৃতিসৌধের ভিআইপি বাগানে একটি নাগেশ্বর চাপা গাছের চারা রোপন করে স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করেন তিনি।

এর আগে গত রবিবার দুপুরে সোয়া ১টায় তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তাকে সেখানে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিমানবন্দরে লাল গালিচা অভ্যর্থনাও দেওয়া হয় সুইস প্রেসিডেন্টকে।

এছাড়া বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি সুইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেই বারসেটের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। সফরকালে বারসেট সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্যদিয়ে বারসেটের আনুষ্ঠানিক সফর কার্যক্রম শুরু হয়।

বৈঠকে দুই দেশ বর্তমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতা বৈঠকের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।’

মঙ্গলবার বারসেট কক্সবাজারে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত আগস্ট থেকে দেশটির সামরিক বাহিনীর ভয়ঙ্কর অভিযানে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা দেশত্যাগ করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সুইজারল্যান্ড বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের এই নাগরিকদের মানবিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সফরকালে সুইস প্রেসিডেন্ট সুশীল সমাজের সদস্য, বাংলাদেশে সুইস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ঢাকা আর্ট সামিট পরিদর্শন করবেন। এই আর্ট সামিটে সুইস আর্ট কাউন্সিল প্রো হেলভেসিয়া অন্যতম অংশীদার।

সুইস প্রেসিডেন্ট তিনদিনের সফর শেষে বুধবার ঢাকা ত্যাগ করবেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ১৩ মার্চ দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। সেদিনই সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫ বছর পূর্তি হয়েছে ২০১৭ সালে। সুইজারল্যান্ডের রীতি অনুসারে গত ১ জানুয়ারি এক বছরের মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন অ্যালেই বারসেট।

ইতিপূর্বে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে ১৬ জানুয়ারি রাতে ৫ দিনের সরকারি সফরে সুইজারল্যান্ডে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডব্লিউইএফ নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী প্রথম বাংলাদেশী নির্বাচিত নেতা হিসেবে এ ফোরামে যোগ দিয়েছিলেন। সুইজারল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় আল্পস অঞ্চলে গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট ডাভোসে ১৭ থেকে ২০ জানুয়ারি ৪ দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সুইজারল্যান্ড
সুইস বা সুইজারল্যান্ড (জার্মান: die Schweiz ডি শ্বাইৎস, ফরাসি: la Suisse লা স্যুইস্, ইতালীয়: Svizzera স্বিৎস্স্রা, রোমান: Svizra স্বিৎস্রা) ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। তবে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়। এর মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাংক এবং বাৎসরিক স্থুল দেশজ উৎপাদের পরিমাণ ৫১২.১ বিলিয়ন সুইস ফ্রাংক (২০০৭ খ্রিস্টাব্দ)। এটি পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্রসমূহের অন্যতম।

২০০৬ খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা ছিল প্রায় পৌণে এক কোটি। এদেশে মানুষের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ৬৭,৮২৩ সুইস ফ্রাংক (২০০৭ খ্রিস্টাব্দ)। বের্ন শহরটি সুইজারল্যান্ডের রাজধানী। অন্যতম বিখ্যাত অন্য দুটি শহর হলো জুরিখ এবং জেনিভা। জুরিখের দিকের লোকেরা জার্মান এবং জেনিভার দিকের লোকেরা ফরাসি ভাষায় কথা বলে। আল্পস পর্বতমালা ও প্রশস্ত হ্রদ সুইজারল্যান্ডকে অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রূপে ভূষিত করেছে। বিশ্বের পর্যটকদের জন্য এটি বিশেষ আকর্ষণীয় একটি দেশ।

সুইজারল্যান্ডের ঘড়ি, ট্রেন এবং চকলেট খ্যাতি বিশ্বজোড়া। অবশ্য সুইস ব্যাংকসমূহ কালো টাকা নিরাপদের সংরক্ষণের জন্য কুখ্যাত। দেশটির কোন নিয়মিত সেনাবাহিনী নেই। দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা ভারসাম্যমূলক ও অত্যন্ত সুস্থির। সুইস সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবছর ১লা জানুযারী তারিখে এর রাষ্ট্রপতি পরিবর্তিত হয়। ছয় বৎসরের জন্য গঠিত মন্ত্রীপরিষদের একে জন মন্ত্রী পালাক্রমে এক বৎসরের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

Check Also

ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই: সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

সব ধর্ম, ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চান বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।