ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া রায়কে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার বিশেষ আদালত ৫ এর বিচার ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। এর পর মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক আল জাজিরা, ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ওয়ার্ল্ড, পাকিস্তানের জিও নিউজ, ভারতের আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস, ইরানের পার্সটুডেসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খবরটিকে গুরুত্বের সঙ্গে তাদের অনলাইনে প্রকাশ করেছে।
এ নিয়ে আল জাজিরা ‘বাংলাদেশের বিরোধীয় নেতাকে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড’ শিরোনামে ব্রেকিং সংবাদ দিয়েছে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ডের সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ঢাকার আদালত খালেদাকে ওই সাজা দিয়েছেন। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকার রাস্তায় খালেদার হাজার হাজার সমর্থককে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের আন্তর্জাতিক সহায়তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও ৭২ বছর বয়সী খালেদা তা অস্বীকার করেছেন।
বিবিসি বলছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদার বিরুদ্ধে আরো এক ডজনের বেশি মামলা ঝুলে রয়েছে।
তবে দুর্নীতির একই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের দণ্ড দিয়েছেন আদালত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির প্রধান বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, আগামী ডিসেম্বরে দেশটির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও কারাদণ্ড হওয়ায় এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি।
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে বিরোধীদলীয় কর্মী-সমর্থকরা।
ভারতীয় সরকারি বার্তাসংস্থা পিটিআই বলছে, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও দুই বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলায় তিনি এ দণ্ড পেয়েছেন। একই মামলায় খালেদার ছেলে তারেক রহমান ও আরো অন্য চার আসামিকে ১০ বছরের দণ্ড দেয়া হয়েছে।
ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ একটি আদালত।
‘৫ বছর কারাদণ্ড বেগম খালেদা জিয়ার, উত্তপ্ত ঢাকা’ শিরোনামে সংবাদ দিয়েছে ভারতের আনন্দবাজার।
সংবাদে বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ঘোষিত হল। শারীরিক ও সামাজিক দিক বিবেচনা করে তাঁকে এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ মামলার অপর আসামি তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান-সহ বাকি পাঁচ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকারও বেশি জরিমানাও ধার্য হয়েছে।
এর আগে বেলা সোয়া ২টার দিকে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রায় শোনার পর আদালতে উপস্থিত খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করেন।
সংবাদে আরও বলা হয়, দলনেত্রীর এই অভিযোগের পর থেকেই বিএনপি কর্মী-সমর্থকরা পথে নামতে শুরু করেন। আজ সকাল থেকেই ঢাকার রাজপথে শুরু হয় বিএনপি-র বিক্ষোভ। খালেদা জিয়ার সাজা ঘোষিত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু হয়।
‘খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড, তারেকের ১০ বছর’ শিরোনামে রেডিও তেহরানের অনলাইন ভার্সন পার্সটুডের সংবাদে বলা হয়েছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছর ও দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার করে টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা আড়াইটায় ঢাকার বকশীবাজার কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিশেষ জজ ৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় দেন। ৪০৯ ও ১০৯ ধারা মোতাবেক আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়া বিনাশ্রম ও অন্য পাঁচ আসামি সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করবেন বলে জানিয়েছে আদালত।
একই ধরনের সংবাদ দিয়েছে পাকিস্তানের জিও নিউজ।
এছাড়াও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, পাকিস্তানি দৈনিক ডন, ডেইলি পাকিস্তান, মার্কিন সংবাদসংস্থা এপি, সিএনএন, দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিট্রিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে খালেদার দণ্ডের খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন। ১২০ কার্যদিবসের বিচারকার্য শেষ হয়েছে ২৩৬ দিনে। আত্মপক্ষ সমর্থনে সময় গেছে ২৮ দিন। যুক্তি উপস্থাপন হয়েছে ১৬ দিন এবং আসামিপক্ষ মামলাটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে গেছেন ৩৫ বার। গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য ছিল।