স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, অগ্নিসংযোগ-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি ও অংগ সংগঠনের বেশ ক’জন নেতা কর্মীকে আটক করেছে। সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ ক’জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রায়কে কেন্দ্র করে জনমনে ভীতি, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা সৃষ্টির ফলে অস্বস্তি নেমে আসে। আইনশৃংখলা বাহিনীর অতি মাত্রার তৎপরতায় রাজধানী অঘোষিত হরতালের রূপ পরিগ্রহ করে। গতকাল সকাল থেকেই যানবাহন চলাচল তেমন একটা ছিল না। ঢাকার সাথে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলেও ছিল সীমিতভাব। এ কারণে গতকাল জনভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায়। বিশেষ করে এস এস সি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা বিপদে পড়েন। রাজধানীতে দোকানপাট খুলেছে সীমিত পরিসরে। রাস্তাঘাট ছিল প্রায় ফাঁকা।
রাজধানীর চিত্র
মামলার রায় শুনতে আদালতে যাওয়ার পথে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সামনে পেছনে পুলিশের নিরাপত্তার মধ্যে থাকা বেগম জিয়ার গাড়িবহর মগবাজারে পৌঁছালে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তেড়ে আসে। ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা বিপুলসংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী প্রতিহত করলে হামলাকারীরা পিছু হটে। বহরের সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমুদ্দিন হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহেল রানা জানান, ‘বহরের পেছন থেকে যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী হামলা করেছিল। পরে আমরা প্রতিহত করলে তারা পালিয়ে যায়।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার পর এ ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া বহরে থাকা নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে, লাঠিপেটা করে। ধরপাকড়ের শিকার হয়েছেন বেশ ক’জন। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আটক হয়েছেন বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এডভোকেট শিমুল বিশ্বাস। রায়ের পর বিকেলে পল্টন এলাকায় বিএনপির অফিসের সামনে থেকে আটক হন ছাত্রদল সভাপতি।
দুপুরে কাকরাইল মোড়ে গাড়িবহরটি পৌঁছার পর সেখানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ১০-১২ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এরপর কাকরাইল মোড়ে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় ইট-পাটকেলে আহত হন দুই পুলিশ সদস্য।
এছাড়া, খালেদা জিয়া দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছার পর চানখাঁরপুলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের ফের সংঘর্ষ হয়েছে। এখানে মহিলা দলের নেত্রী পপিসহ ১০-১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে কাকরাইল মোড়ে আসার আগেই তিন দিক থেকে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থলে আহত হন পুলিশের দুই সদস্য। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি। এখানে খালেদা জিয়ার গাড়ি ৭-৮ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর আবারও আদালতের পথে রওনা দেয়।
কর্তব্যরত পুলিশের এসি (লজিস্টিক) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে থাকা অতি উৎসাহীরাই পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’
তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম বলতে পারেননি কর্তব্যরত পুলিশের এসি। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
দুপুর পৌনে ২ টার দিকে চানখারপুল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরুর অ্যাকশনে যায় পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ, হানিফ ফ্লাইওভার ও চানখারপুল মোড় এলাকায় আগে থেকে অবস্থান নেওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আশপাশের গলি থেকে হঠাৎই বিএনপির সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী বের হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তাদের প্রতিরোধে পুলিশও পাল্টা টিয়ারশেল রাবার বুলেট ও পাঠিপেটা করছে। এ সময় পুরো এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রের রূপ নেয়। এ ঘটনায় বিএনপির ১২ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
এর আগে কাকরাইল চার্চ মোড়ে বিক্ষোভকারীরা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের পূর্ব ফটকে একটি মোটরসাইকেল ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ফটকের সামনে আরেকটি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়। এ সময় অধিদফতরের সামনের সড়ক বিভাজনেও আগুন দিতে দেখা গেছে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেটে আগুন দেওয়া বাইকটি এনএসআই কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের বলে জানিয়েছেন ওই সংস্থার আরেক সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা ব্যক্তিরাই গাড়িতে আগুন দিয়েছে।’
এর আগে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর মগবাজার মোড় পার হয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের রাস্তায় পৌঁছালে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। মগবাজার মোড় থেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবন পর্যন্ত দুই দফা সংঘর্ষ হয়। মগবাজারে ছাত্রদল কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
পাল্টাপাল্টি হামলার পাশাপাশি বিক্ষুব্ধরা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের বহির্বিভাগের বাইরের অংশে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। তখন সড়ক বিভাজকের ওপর থাকা ছোট ছোট গাছ ভাঙে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদল নেতা আশরাফুল আলম রবিনের অভিযোগ, ‘পরীবাগের দিক থেকেই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা প্রথম হামলা করে।’
দুর্নীতির মামলার রায় শুনতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে রওনা হন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩০টির বেশি গাড়ি থাকতে দেখা যায়। ইউনিফর্মধারী সদস্যরা ছাড়াও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সাত রাস্তা পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ধীর গতিতে চলতে থাকে। সাত রাস্তা পার হওয়ার পর ছাত্রদল, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল করে এসে বহরে যুক্ত হয়। এ সময় তাদের কোনও ধরনের বাধা দেয়নি পুলিশ।
ছাত্রদল সভাপতি আটক
খালেদা জিয়ার কারাদন্ডের প্রতিবাদে নয়া পল্টনে মিছিল বের করা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সংঘর্ষের পর ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। দুপুরে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ কারাদন্ডের রায় দেয় আদালত। ওই রায় ঘোষণার পর বকশীবাজারে আদালত এলাকা থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে পুলিশ আটক করে বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমীর জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজীব আহসানের নেতৃত্বে ছাত্রদলের একদল নেতাকর্মী বিকাল পৌনে ৫টার দিকে রায়ের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন। তখন পুলিশ ধাওয়া দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। কয়েকজন নেতাকর্মীকে লাঠিপেটা করে পুলিশ। ছাত্রদলকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে রাজীবসহ তিনজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
এর আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল দুপুরে বকশীবাজার অস্থায়ী আদালত এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। দুপুরে খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পরপরই আদালত এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানায় বেসরকারি টেলিভিশনগুলো। তবে তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্বীকার করেননি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য।
এদিকে, শিমুল বিশ্বাসকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার।
পুলিশের সঙ্গে আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি
শিক্ষা ভবনের উল্টো দিকে হাইকোর্টের গেটে অবস্থান নেয় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সকাল ৯টা থেকে শতাধিক আইনজীবী সেখানে অবস্থান নেন। সকাল ১০টার দিকে আইনজীবীরা একবার গেট থেকে বের হয়ে সামনের সড়কে অবস্থান নেন। তবে পুলিশ তাদের সেখানে বসতে দেয়নি। পুলিশ আইনজীবীদের আবারও ফটকের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি হয়।
সুলতান মাহমুদ নামে একজন আইনজীবী বলেন, পুলিশ তাদের সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে ওকালতনামায় নাম থাকলেও পুলিশ তাদের আদালতে যেতে দিচ্ছে না।
অবশ্য সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বলেছেন, তারা সড়কে কাউকে বসতে দিচ্ছেন না। আইনজীবীদের সঙ্গে তারা কোনো খারাপ ব্যবহার করেননি।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই এলাকা থেকে সাইফুল নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে বাধার মুখে দাঁড়িয়ে থেকেও তালাবদ্ধ গেট ধরে বারবার শ্লোগান দেয় বিএনপি সমর্থিত এই আইনজীবীরা।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মনির হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা মামলা আর সাক্ষ্য সাজিয়ে বিএনপি চেয়ারপাসনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে জেলে পাঠানোর নামে দেশে গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা চলছে। এই রায়ের মাধ্যমে সরকার বাকশাল কায়েম করতে চাইছে। তাই প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের আটকে দিয়েছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারেনা। খালেদা জিয়ার কিছু হলে আমরা আরও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।
আটকহাইকোর্টের মাজার সংলগ্ন গেটের বাইরে থেকে সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল ১১টা ৩৩ মিনিটে সাইফুল ইসলাম ও ১১টা ৫৪ মিনিটে আমিনুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
জানা গেছে, আটক সাইফুল ইসলামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরে। তিনি শান্তিনগরে কাপড়ের ব্যবসা করেন। সাইফুল সকালে বঙ্গবাজারে কাপড় কিনতে এসে মার্কেট বন্ধ পান। এরপর হাইকোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিল দেখছিলেন। তখন পুলিশ তাকে আটক করে। আর আমিনুল ইসলাম পেশায় রিকশাচালক। তার দাবি, তিনি এই এলাকায় ঘুরতে এসেছিলেন। এরপর পুলিশ তাকে আটক করে।
আতঙ্কে রাজধানীবাসী: দোকানপাট বন্ধ, সড়ক ফাঁকা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণার পর মুহূর্তের মধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। কোনো কোনো সড়ক একেবারেই জনমানবহীন হয়ে যায়। সেই সাথে সকাল থেকে দু’টি দোকান খোলা দেখা গেলেও রায় ঘোষণার পর তাও বন্ধ হয়ে যায়। এমন দৃশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার।
তবে বিকেলে রাজধানীর সড়কগুলোতে সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। যদিও দোকানপাট আর খুলতে দেখা যায়নি। খাবার হোটেল, ওধুধের দোকান ছাড়া ফুটপাথের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় শপিং মল সবই বন্ধ রয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পরও আতঙ্ক কাটেনি রাজধানীবাসীর। যে কারণে বাহিরে জনমানুষের উপস্থিতিও কম বলে অনেকের সঙ্গে কথা বলে গেছে।
রিকশাই হয়ে উঠে রাজধানীতে চলাচলের প্রধান বাহন। তবে মাঝে মধ্যে কয়েকটি যাত্রীবাহী লোকাল বাস চোখে পড়লেও তাতে যাত্রী সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতার ভয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশের দোকান-পাটও রয়েছে বন্ধ। রায় ঘোষণার পর বকশীবাজার, শাহবাগ, বাংলামটর, কাকরাইল, নয়াপল্টন, মালিবাগ, মৌচাক মগবাজার, নীলক্ষেত ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল সীমিত ছিল। এর মধ্যে সকালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছাতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সাড়ে ১১টার পর পরিবহন চলাচল ও মানুষের উপস্থিতি কিছুটা বাড়লেও খালেদা জিয়ার গাড়িবহরসহ আদালতে যাওয়ার সময় দুপুর পৌনে ১টায় কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এদিকে দুপুর আড়াইটায় রায় ঘোষণার পর থেকে সড়কগুলো আবারও ফাঁকা হতে শুরু করে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, দুপুরের দিকে কাকরাইলে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অরপদিকে, খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পর নগরীর বিশেষ বিশেষ মোড়ে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। এসব চৌকিতে সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই তল্লাশি চালিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নগরবাসী না ঠেকলে রাজপথে বের হচ্ছেন না।
পুলিশের ধরপাকড় অব্যাহত
গ্রেফতারকৃত জামায়াত কর্মীরা হলেন, কাউসার আলী (৬০), আবু আলম খান উজ্জ¦ল (৩২) ও বিএনপি নেতা বাকি বিল্লাহ (৪৮)। পুলিশ জানায়, রাজশাহী মহানগরীর চারটি থানা ও ডিবি পুলিশের মধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানা ৮ জন, রাজপাড়া থানা ১০ জন, মতিহার থানা ৬ জন, শাহমখদুম থানা ২ জন, ও ডিবি পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করে। এরমধ্যে ১৬ জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী, ২ জনকে মাদকদ্রব্যসহ, ৩ জন রাজনৈতিক ও অন্যান্য অপরাধে ৬ জনকে আটক করা হয়। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
দিনাজপুর অফিস : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি-জামায়াতের ২১ জন নেতা-কর্মীসহ মোট ৬৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দিনগত রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর পর্যন্ত তাদের আটক করা হয়।
দিনাজপুর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিএসবি) ওসি মাসুদ আল আহসান হাবিব চৌধুরী জানান, নাশকতা রোধে বিশেষ অভিযানে আটক ব্যক্তিদের দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দিনভর টহল দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদলতে রায় দেয়াকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা বিএনপি ও জামায়াতের ৩৭ নেতা-কর্মীসহ ৫৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শহরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুরে অনেকটা শহর ফাঁকা দেখা গেছে। সন্ধায় ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরা লিঃ এর প্রশাসনিক ইনচার্জ হামিদুল ইসলামকে তার কর্মস্থল থেকে আটক । হাসপাতাল স্টাফরা জানান বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে ১০ থেকে ১১ জনের ডিবি পুলিশের একটি ফোর্স দুটি গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যায়। সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের ওসি জানায়, জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। তবে যাচাই বাছাই চলছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরায় পুলিশের সন্ত্রাস, নাশকতা বিরোধী বিশেষ অভিযানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৩৭ নেতা-কর্মীসহ ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে, বিএনপির ১৩ জন ও জামায়াতে ইসলামীর ২৪ জন নেতাকর্মী রয়েছে। এদিকে, রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতা এড়াতে জেলায় পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে ৪টি নতুন মামলা দায়ের হয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে, সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ১৭ জন, কলারোয়া থানা ৫ জন, তালা থানা ৩ জন, কালিগঞ্জ থানা ৬ জন, শ্যামনগর থানা ৫ জন, আশাশুনি থানা ১৪ জন, দেবহাটা থানা ৪ জন ও পাটকেলঘাটা থানা থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মিজানুর রহমান আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। তিনি আরো জানান, খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে যে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে জেলায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
এছাড়া জেলাব্যাপী পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে তল্লাশি বসানো হয়েছে। সন্ধা পর্যন্ত এরির্পোট লেখাপর্যন্ত জেলার কোথাও কোন সহিংশতার খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে কোন মিছিল মিটিং বা কোন পিকেটিং এর খরব পাওয়া যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৬৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার সকাল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আশুগঞ্জ উপজেলার মোঃ মাসুম মিয়া, মোঃ রুস্তম মিয়া, আবুল ইসলাম-(৩৫), আল আমিন-(২৯), লিটন মোল্লা-(৩১), মোঃ সোহবার মিয়া-(৩০), রবি হোসেন-(৩২), মোঃ মিজান-(২৮), রুবেল মিয়া-(২২), আপেল-(২৬), মোঃ জয়নাল মিয়া-(২৮), হারুন মিয়া-(৩২), জয়নাল আবেদীন রাজু-(৩৬), সরাইলের ইসহাক মিয়া-(২৩), মোঃ ইমরান- (৩৬), তাবারক মিয়া-(৩৬), মোবারক মিয়া (২৬), জালাল মিয়া-(৫৫), নাজমুল হোসেন খান রাসেল-(৩৫), নাসিরনগর উপজেলার মীর রুবেল মিয়া-(২৫), রহমত খাঁ-(৩৭), মফিজ মিয়া-(৩৫), ইয়াছিন মিয়া-(২৪), মোঃ জাকারিয়া-(১৯), মনির হোসেন মাঞ্জু-(২৮), রহমত আলম-(২৪), নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিম মিয়া-(৩০), মোঃ রফিক-(২৮), অলিউল্লাহ-(২২), আল আমিন-(২০), মোঃ জালাল মিয়া-(৩৫), সাদ্দাম-(২৫), বেলায়েত হোসেন- (৪২), হাফিজ মিয়া-(৩৫), বাঞ্চারামপুর উপজেলার মোঃ ইব্রাহিম-(২৮), বিজয়নগর উপজেলার ময়দর আলী-(৪৫), মোঃ সোহেল মিয়া-(২২), মোঃ জামাল চৌধুরী-(৪২), কসবা উপজেলার মোঃ সাইফুল ইসলাম-(৩৭), মোঃ সাইফুল ইসলাম-(৩৭), আবু হানিফ মিয়া-(৫০), মোঃ আবুল খায়ের-(৬৫), মোঃ আবুল কালাম-(২৫), মোঃ শাহজাহান মিয়া-(৬৫), আলমগীর হোসেন-(১৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার তারেকুল রহমান ইমন-(৩০), মোঃ হারুনুর রশিদ-(৪১), মোঃ ইউসুফ মিয়া-(৩৫), হান্নান মিয়া, গিয়াস উদ্দিন-(২৬), জসিম উদ্দিন- (২৩), শাফি মিয়া-(২৯), হাবিবুল্লাহ-(১৯), মঞ্জু মিয়া-(৩৫), সুজন মিয়া-(২৫), মোঃ জালাল আহমেদ-(৩৭), জামাল হাসান-(২৪), আলাল উদ্দিন-(৩০), আনিছুর রহমান, ফিরোজ সর্দার-(৩০), সাদেক মিয়া, আক্তার -(৩৮),দিদারুল ইসলাম-(৩৪),
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইওয়ান) মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ পিপিএম বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সবাই বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। তারা সবাই গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।