কারান্তরীণ খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:     ঢাকা: বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন। তাকে কারান্তরীণ করায় দলটির নেতাকর্মীসহ দেশবাসী মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। দলটি এখন সাম্প্রতিক বছরগুলোর যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। যেটা মনে করা হয়েছিল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বা মনোবল ভেঙে পড়া- সেটা আদৌ হয়নি। বরং রায়ের পর ‘সরকারের পাতানো ফাঁদে’ পা না দেয়ায় বেড়েছে খালেদা জিয়া ও বিএনপির জনপ্রিয়তা। আর অন্যদিকে হতাশ হয়েছে বলা যায়, আওয়ামী লীগ। এমনটাই মন্তব্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। একই কথা বলছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ অভিজ্ঞজনরাও। তারা বলছেন, এ রায়ে বেগম জিয়া ও বিএনপি’র জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে বহুগুণ। মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে কারাবন্দী খালেদা জিয়া এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। ভারতীয় গণমাধ্যমও বলছে, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে।’ এদিকে, পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ৭৩ বছরের নারী- খালেদা জিয়া রায় শুনতে আদালতে ও রায়ের পর কারাগারে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই তার সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। দেশ, জাতি ও দলের জন্য এমন দৃঢ়তা ও সাহসিকতা দেখানোর দৃষ্টান্ত স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস স্থাপন করেছে বলেও মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেই আশার আলো দেখছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ৬ জনকেই সাজা দেয়া হয়। খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন সড়কের পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে।
এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করছেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, বেগম জিয়া ও বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যই দেয়া হয়েছে এমন রায়। শীর্ষ-ব্যক্তি কারাগারে যাওয়ায় মর্মাহত দলের নেতাকর্মীরা। প্রশ্ন উঠেছে, এতে কি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলো বিএনপি? জবাবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষমতাসীনরা ভেবেছেন খালেদা জিয়া জেলে ঢুকলেই বিএনপি দুর্বল হয়ে যাবে। তাদের এই ধারণা ঠিক নয়। খালেদা জিয়া ও বিএনপির জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে।
বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলে নেতৃত্ব সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই বলেও জানান বিএনপির শীর্ষ-নেতারা। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই দেবেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করেই তিনি লন্ডন থেকে নির্দেশনা দেবেন। দল সেটি পালন করবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক দল। এখানে স্তরে স্তরে নেতৃবৃন্দ আছেন। যখন যাদের যে ভূমিকা রাখার তারা সে ভূমিকা রাখবে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান সেই ভূমিকা পালন করবেন।
এদিকে রায় ঘোষণার পর দলের ঘোষিত দুদিনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সারা দেশের মতো ঢাকায়ও দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নামে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুক্রবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। শনিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল সমাবেশের পাশাপাশি হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে ফকিরাপুল থেকে চেয়ারপারসনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে একটি মিছিল বের হয়। একই কর্মসূচি পালিত হয়েছে চট্টগাম, বরিশাল, বগুড়া, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ সারা দেশে। পুলিশও জানিয়েছে, এ সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল। তার পরও পুলিশ রাজধানীসহ সারা দেশে গণ-গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জও করে। এ প্রসঙ্গে শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ডিএমপির উপসহকারী পুলিশ কমিশনার শিবলী নোমান।
রায়কে ঘিরে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে ৩ হাজার ৭শ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সিনিয়র অনেক নেতাই রয়েছেন। শনিবার এ সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশের  নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতা নয়, এমন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই থাকতে চায় দলটি। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে আমরা চলছি। সেই পথেই আমরা চলবো।
শুধু আন্দোলন নয়, মামলা মোকাবিলায় আইনি লড়াইও সমানতালে চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকসহ খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও গণ-জমায়েত নিষিদ্ধ করেছিল ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার ঘোষণা দিয়ে ছিলেন, রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে বিএনপি নেতাকর্মীদেও কোনও ছাড়া দেওয়া হবে না। এমনকি তিনি ‘ঝামেলা করলে চেহারা পাল্টে’ দেয়ার কথাও বলেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বিএনপিকে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দেন। কিন্তু এসব হুঙ্কার আর ভয়-ভীতি আটকাতে পারেনি বিএনপি কর্মীদের। এদিন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশান থেকে আদালতের পথে রওয়ান দেয়ার পর তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে তার গাড়িবহরকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে। যা দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে যান। রমনায় আওয়ামী লীগের ইটপাটকেল, কাকরাইলে পুলিশের টিয়ারশেল আটকাতে পারেনি হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে। শেষ পর্যন্ত তারা আদালতের নির্ধারিত স্থানে নেত্রীকে মিছিলসহ পৌঁছে দেন। যা সারা দেশে দলীয় কর্মীদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি করেছে।


‘কারাগার হলো রাজনীতিকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়’ এই প্রবাদবাক্য দেশের কোন নেতার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে সে হিসেব অজানা হলেও ‘কারাগার’ যে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আলোকিত করছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। গত কয়েক বছর বিশ্বরাজনীতির খাতা থেকে অনেক দূরে থাকলেও কারাগারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়ার নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর গুরুত্বপূর্ণ খবর হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করছেন; কেউ পরিস্থিতি জানতে চান, কেউবা ঘটনার ওপর রাখছেন তিক্ষè দৃষ্টি।
গোটা বিশ্বের দৃষ্টি যেন ঢাকার দিকে, বন্দী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর। জাতিসংঘ বেগম জিয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের প্রতি সম্মান দেখানোর আহবান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে মামলা পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত খালেদা জিয়ার কারাবরণ শতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ঢাকায় কর্মরত প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা নড়েচড়ে উঠেছেন। অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য ঢাকায় কর্মরত নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ‘বন্দী খালেদা জিয়ার’ ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করছেন। ইন্ডিয়া এক্সেপ্রেস বলছে, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে।’ দেশের সর্বত্রও একই অবস্থা। সবার মুখে মুখে খালেদা জিয়ার নাম।
বেগম জিয়ার কারাদ- নিয়ে দেশের মানুষ কী ভাবছেন? বর্তমান সময়ে ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার এবং পাঠক মতামত জনমত গঠনে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে তাকালে দেখা যায়, বেগম জিয়ার কারাবন্দী হওয়া এবং ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলার রায়ে ৫ বছরের কারাদ- নিয়ে তর্ক-বিতর্কের ঝড় বইছে। সাধারণ মানুষ দুর্নীতির মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার দ- নিজেদের মতো করেই মূল্যায়ন করছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন।
এই বক্তব্যগুলোর মধ্যে অধিকাংশের মতই হলো, বেগম জিয়ার দ- তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টায় করা হয়েছে। যারা মামলার রায়কে স্বাগত জানান, তারাও অভিমত দেন- হলমার্ক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিচার না করে মাত্র দুই কোটি টাকা দুর্নীতির বিচারের প্রতি অতি উৎসাহ প্রশ্নের জন্মই দেয়। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যাতে কেউ মামলা করতে না পারেন সে জন্য জাতীয় সংসদে ইনডিমনিটি বিল পাস করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের নামে মেগা মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ এবং দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি কি দুর্নীতি নয়? খালেদা জিয়ার কারাদ-ে যে মন্ত্রীরা উৎফুল্ল তারা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখেন না কেন? ‘এক মাঘে শীত যায় না’ প্রবাদবাক্যটি ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ স্মরণ করে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
টিভির টকশোগুলোতেও একই আলোচনা হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ টিভি মিডিয়া সরকারের পক্ষের লোকদের মালিকানায় হওয়ায় টকশোতে সরকারি দল অনুগত ব্যক্তিদের বেশি আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীক কারণে দর্শক ধরে রাখার কৌশল হিসেবে ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকেও মাঝেমধ্যে টকশো’য় ডাকা হয়। তারমধ্যে বশির ভাগ আলোচনায় উঠে এসেছে ‘মুক্ত খালেদা জিয়ার’ চেয়ে ‘বন্দী খালেদা জিয়া’ অনেক বেশি শক্তিশালী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তার চাইতেও বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনের সময় তিনি জেলের ভেতরে থাকবেন না মুক্ত থাকবেন? খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে নাও পারেন, তবুও তিনি যদি জামিনে থাকেন এবং প্রচারাভিযানে অংশ নিতে পারেন; তাহলে এই কারাদ- বিএনপির জন্য নেতিবাচক না হয়ে বরং ইতিবাচক হতে পারে।
এদিকে, বেগম জিয়াকে ৫ বছর কারাদ- প্রদান এবং পুরান ঢাকার কারাগারে নেয়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়া তাদের বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখপাত্র এ প্রতিনিধির কাছে প্রেরিত এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের প্রতি সম্মান দেখানোর আহবান জানিয়েছেন। লিখিত প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাদ-ের বিষয়টি আমরা সম্যক অবগত আছি। মামলার প্রক্রিয়াটি যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বৃহস্পতিবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের বিষয়টি ছিল সাংবাদিকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

জাতিসংঘের ডেপুটি স্পোকসপার্সন ফারহান হক লিখিতভাবে জানান, খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টি জাতিসংঘ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে কি না তা জাতিসংঘ খতিয়ে দেখছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত- বেগম জিয়ার কারাদ-ের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দিল্লী থেকে প্রকাশিত দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’য় বলা হয় বেগম জিয়ার কারাদ-ের পর প্রতিবেশী এ দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না ভারত। বাংলাদেশে উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে চীন অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এ বিষয়টি পুরোপুরি খুব ভালভাবে জানে ভারত। তা সত্ত্বেও ভারত এমন অবস্থান নিয়েছে। খালেদা জিয়ার কারাদ- ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ঘটনাকে যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে তা বোঝা যায় খররের শিরোনাম ও ছাপার গুরুত্ব দেখে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি ও সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট, ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি, বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, কাতারভিত্তিক আল জাজিরা, পাকিস্তানের জিও টিভি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল.ইন, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ইকোনোমিষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে খবরটি প্রকাশ করেছে।
খালেদা জিয়ার কারাদ-ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের ১৪ দলীয় জোট নেতারা ছাড়া প্রায় সব দলই উদ্বেগ জানাচ্ছেন, প্রতিবাদ করেছেন। বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্য’র আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, জনমনে সন্দেহ দৃঢ় হচ্ছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ আইনী পদক্ষেপ (আপিল, জামিন ইত্যাদি) সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রভাবিত হবে কিনা। এ ছাড়া মাহমুদুর রহমান শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দুই কোটি টাকা নিয়ে এতো হুলুস্থুল ঘটনা, অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট নিয়ে নিরব কেন?’ শনিবার এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেছেন, ১০ দিনে ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় লেখা সম্ভব নয়। এটি আগেই লিখে রাখা হয়েছে। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিও করেন।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতার কারণে নির্বাচনী পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) এর কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয় জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, খালেদা জিয়ার রায়ের মধ্য দিয়ে সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই এবং রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে সকল দুর্নীতিবাজের শাস্তি চাই। বর্তমানে অবাধে দুর্নীতি-লুটপাট চলছে। শুধু ২/৪ কোটি টাকা নয়, ক্ষমতার ছত্রছায়ায় শত শত ও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট এবং বিদেশে পাচারের খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকায় অপরাধীরা দুর্নীতির সাজা থেকে দায়মুক্তি পাচ্ছে।

নানা কারণে জনগণ মনে করছে যে, খালেদা জিয়ার বিচার কার্যক্রমের পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করেছে। জনগণের মন থেকে সে সংশয় দূর করা এখন সরকারেরই দায়িত্ব। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় দেশের রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে। দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিচার হয় না; অথচ সামান্য ইস্যুর বিচার নিয়ে হৈচৈ হয়; তাতেই বোঝা যায় খালেদা জিয়ার মামলায় কী হয়েছে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়াররম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বেগম জিয়ার মামলায় যে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে তার প্রমাণ আওয়ামী লীগ নেতাদের কথাবার্তায় বোঝা যায়। দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন নেত্রী বেগম জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার নীলনকশায় কারাদ- দিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার খায়েশ সরকারের পুরণ হবে না। আমরা বেগম জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দেয়ার দাবি জানাই।শীর্ষনিউজ

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।