ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: দলের চেয়ারপারসনের কারাদণ্ড হওয়ার পর বিএনপি ক্ষুব্ধ অবস্থানে থাকলেও অত্যন্ত ‘সংযত ও সতর্কতা’র সাথে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। নির্বাচনী বছরে এখনই কঠোর কোনো কর্মসূচির দিকে না গিয়ে দলটি কৌশল নিয়েছে ধীরে চলার।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা’ একটি দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড দেয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরাই শুধু নন, সাধারণ মানুষও চরম ক্ষুব্ধ। এই ইস্যুতে সরকার তাদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে নানাভাবে উসকানি দিয়েছে। কিন্তু সে ফাঁদে তারা পা দেয়নি। বিএনপির লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবি আদায়ে প্রয়োজনে তারা আন্দোলনে নামবেন। এ কারণে আগে ভাগেই কঠোর কর্মসূচিতে নেমে সাংগঠনিক শক্তি ক্ষয় করতে চান না তারা।
গত বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এটিই এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। এর প্রতিবাদে বিএনপি দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। দলীয় প্রধানের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে এই ‘নরম কর্মসূচি’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও বিএনপির তৃণমূলে এক ধরনের জিজ্ঞাসা রয়েছে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বিএনপির এই অবস্থানকে ইতোমধ্যে ইতিবাচকভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসনের স্পষ্ট নির্দেশনার ভিত্তিতেই কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। আদালতে হাজিরা দেয়ার আগের দিন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি প্রধান। কারাদণ্ডের রায়ের পরও তিনি উপস্থিত আইনজীবীদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেন এবং একইসাথে তিনি আইন হাতে তুলে না নেয়ার নির্দেশ দেন।
দলটির এক নেতা গতকাল বলেন, তাদের দলের তৃণমূল পর্যায় চেয়েছিল কঠোর কর্মসূচি। কিন্তু তারা চেয়ারপারসনের নির্দেশ মেনে সংযতভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। পরবর্তী বৃহত্তর আন্দোলনকে সফল করতেই হার্ডলাইনে যাননি তারা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দলের শক্তি অক্ষুণœ রাখতে চায় বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড মনে করছে, বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের দাবি উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীনরা দলীয় সরকার তথা নিজেদের অধীনে নির্বাচন করে আবারো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে চাইবে। সে জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মানতে বর্তমান সরকারকে বাধ্য করতে হবে। আর এই দাবি আদায়ে আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। সে জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দলের শক্তি অক্ষুণœ রাখতে হবে। তাই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বেগম জিয়ার রায়কে ঘিরে সরকারের কোনো ফাঁদে পা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একইসাথে রায় ঘিরে তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে কোনো স্যাবোটাজ (অন্তর্ঘাতমূলক কাজ) করতে না পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক দলটি। দলটির নেতাদের পর্যালোচনা, রায়কে ঘিরে আক্রমণাত্মক কর্মসূচি ঘোষণা করলে সরকারও সর্বোচ্চ হার্ডলাইনে চলে যাবে, সারা দেশে নেতাকর্মীদের আরো ব্যাপক ধরপাকড় করবে। সহজে তাদের জামিনও হবে না। এর ফলে বিএনপি আবারো ব্যাকফুটে চলে যেতে বাধ্য হবে।
২০১৪ ও ২০১৫ সালে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে নেমেছিল দলটি। আন্দোলন দমনে সরকারও বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে দুই-তিন বছর লেগে যায় বিএনপির। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে ভবিষ্যৎ আন্দোলন সফলে এক্ষুনি কঠোর কর্মসূচিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
দলটির আশা, আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া জামিন পেয়ে যাবেন। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন দীর্ঘায়িত হলে এবং সারা দেশে নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের মাত্রা যদি আরো তীব্র হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে দলটির কর্মকৌশলেও পরিবর্তন আসতে পারে, পাল্টে যেতে পারে কর্মসূচির ধরন।
একাধিক নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সামনে এগিয়ে যেতে চান। এ ক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। তার নির্দেশনায় চলবে দল। ইতোমধ্যে তিনি দলটির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতা ও আইনজীবীদের সাথে কথা বলেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি তিনি আইনি উপায়ে ও সতর্ক রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মোকাবেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেলেই তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল করবেন। তারা আশা করছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন এ সপ্তাহেই জামিনে মুক্ত হয়ে আসবেন।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় দেশে-বিদেশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়টিকে বিরোধী দল দমনের অংশ হিসেবেই দেখেছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদেরও বিএনপি পুরো পরিস্থিতি অবহিত করেছে। খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়ার দিন রাজধানীতে উদ্ভূত ঘটনার সচিত্র বর্ণনা পাঠানো হয় সাথে সাথেই। কেউই খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড দেয়ার বিষয়টি মেনে নেয়নি বলে দাবি করছেন বিএনপি নেতারা। নয়াদিগন্ত
Check Also
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল
র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …