পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরতলীর বকচরা বাইপাস সড়কে ভ্যানচালক রমজান আলীর বাড়ির পাশে এ হামলায় নিহত হয় নাজমুল হোসেন সাকিব (১৬)। সে পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ও পলাশপোল মেহেদীবাগে বসবাসরত কলারোয়া উপজেলার সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত সিপাহী নজরুল ইসলামের ছেলে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শহরের রসুলপুরের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আব্দুল আজিজের ছেলে আব্দুর রাশেদ জানায়, সেসহ তার দু’সহপাঠী অমি ও সাকিব মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বকচরা আহমদিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠে ইছালে সওয়াব মাহফিল শুনতে যায়। কামালনগরের রনির প্রেমিকার সঙ্গে সাকিবের পুরানো প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মাদ্রাসা মাঠের সামনে একটি স্টলে কামালনগর কলোনীর রনি, আব্দুল কাদের ও শান্তর সঙ্গে তারা বচসায় জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হলেও স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাশেদ, সাকিব ও অমি বাড়ি ফেরার পথে বাইপাস সড়কের বাসিন্দা ভ্যানচলক রমজানের বাড়ির কাছে পৌঁছানো মাত্র পিছন দিক থেকে রনি, কাদের ও শান্তসহ কয়েকজন তাদের উপর গাছের ডাল দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করে। হামলার একপর্যায়ে অমি পালিয়ে গেলে স্থানীয়রা গুরুতর জখম সাকিব ও রাশেদকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সাকিবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাফিজুল্ল¬াহ জানান, ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত লাগার ফলে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়ে সাকিবের মৃত্যু হয়েছে। তবে রাশেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (আইসিটি) মহিদুল হক জানান, বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর হাপসাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে সাকিবের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। নিহতের পিতা নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে ছয়জনের নাম উল্লে¬খসহ ২৭ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত রনি বিচারিক হাকিম রাজীব রায়ের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সামিউজ্জামান অমি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ১৬১ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
এদিকে, পুলিশ ঘটনার পরপরই মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ জনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন, শহরের কামাননগরের হাফিজুল ইসলাম (৬০), মেহেদি হাসান ফয়সল (১৫), যোবায়ের হোসেন (১৮), রনি (১৮), শাহিনুর (২৪) ও ইটাগাছার আবু হাসান (৩৮)।
-0——-
সাতক্ষীরায় পুলিশ কনস্টেবলের ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা
এদিকে স্কুলছাত্র সাকিব হোসেন হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো-শহরের কামাল নগরের হাফিজুল ইসলাম (৬০), মেহেদি হাসান ফয়সল (১৫), যুবায়ের হোসেন (১৮), রনি (১৮), শাহিনুর (২৪), অমি (১৪) ও ইটাগাছার আবু হাসান (৩৮)।
পুলিশ ও অন্যান্য সূত্র জানায়, সাকিব হোসেন, রাশেদ ও অমি সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্স স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বকচরায় মাহফিল শুনতে যায়। সেখানে গিয়ে কামালনগর কলোনীর আব্দুল কাদের ও একই এলাকার শান্তর সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি সেখানেই নিষ্পত্তির পর মাহফিল শুনে বাড়ি ফেরার পথে বকচরা বাইপাস সড়কে পৌঁছানো মাত্রই কাদের ও শান্তসহ তাদের কয়েকজন সঙ্গী সাকিব, রাশেদ ও অমির ওপর হামলা করে। এ সময় গাছের ডাল দিয়ে তাদের এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। সাকিব ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে। আহত হয় রাশেদ। দৌঁড়ে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যায় অমি। পরে স্থানীয়রা গুরুতর জখম অবস্থায় সাকিব ও রাশেদকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক সাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর সঙ্গী আহত রাশেদ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাফিজুল্লাহ জানান, ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে সাকিবের মৃত্যু হয়েছে। রাশেদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) মহিদুল হক জানান, সাকিব হোসেন হত্যার ঘটনায় সাতজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া হামলার শিকার অমিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, চিকিৎসাধীন রাশেদ কিছু তথ্য দিয়েছে। তারই ভিত্তিতে শহরের কামালনগরের আমিরুজ্জামান বাবুর ছেলে অমিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতেই পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মেরিনা আক্তার বলেন, ‘আমার প্রাথমিক তদন্তে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার পরে মারামারি হয়েছে বলে ধারণা করছি। এ ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা মিলন জড়িত কিনা বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।’