ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ভারত আবারও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিকৃতির জন্য ভূমিকা রাখবে-এমন সম্ভাবনা কম। ২০১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেকানিজমে ভারতের সমর্থন দেয়াটা অন্যায় ও অন্যায্য হবে বলে লিখেছেন ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক ভারত ভূষণ।
বৃহস্পতিবার ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য এশিয়ান এজে ‘ইটস ভেনডেটা ইন ঢাকা, ইন্ডিয়া মাস্ট নট মেডল’ শিরোনামে লেখা এক কলামে তিনি এসব কথা লেখেন।
ভারত ভূষণ লিখেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে, যেটা বিএনপি থাকলে হতো না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রাখার জন্য হয়তো আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে জয়ের জন্য আওয়ামী লীগের আইনি কৌশলের সাথেই তাল মিলিয়ে চলবে ভারত। ভারত যদি কোন নির্দিষ্ট দল বা ব্যক্তিকে সমর্থন দেয়, তাহলে আবারও তাদের যন্ত্রণার পুণরাবৃত্তি হতে পারে, বিশেষ করে নেপাল ও মালদ্বীপে যেটা হয়েছে।
কলামে তিনি লিখেছেন, ২০১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেকানিজমে ভারতের সমর্থন দেয়াটা অন্যায্য হবে, যেটার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা তৈরি হবে এবং আরও ভারতবিদ্বেষী হয়ে উঠবে বাংলাদেশের মানুষ। ভারতের সে ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা উচিত। যদি তাদের পরামর্শ চাওয়া হয়, ভারতের সে ক্ষেত্রে শুধু সে ধরনের কাজকেই সমর্থন দেয়া উচিত যেটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সততাকে সংহত করবে এবং অবাধ ও মুক্তভাবে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটাবে- সেটা যাদের পক্ষেই হোক না কেন।
ভারত ভূষণ লিখেছেন, বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। আর প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত রয়েছে ভারত। এতে হয়তো মনে হবে যে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য ভারতের সমর্থন জারি রয়েছে।
কলামে লেখা হয়েছে, ভারত কিছুটা কৌশলে ২০১৪ সালের একপক্ষীয় সাধারণ নির্বাচনকে সমর্থন জানিয়েছিল, যেটা বয়কট করেছিল বিএনপি। অর্ধেকের বেশি আসনে (৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি) ভোটগ্রহণ ছাড়াই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল সে সময়। মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়লেও ভারতের সমর্থনের কারণে বৈধতা পায় ওই নির্বাচন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের সময়কাল ১৯৯১ সাল এবং মামলাটা করাই হয়েছে ১৮ বছর পরে। নির্বাচনের ঠিক আগ দিয়ে রায় দেয়াটা নিশ্চিত করার জন্য মামলায় তাড়াহুড়া করা হয়েছে, যাতে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা যায়।
এটা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিএনপি নির্বাচন ব্য়কট করবে না। তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণার মধ্য দিয়ে, বিএনপি যখন সম্ভাব্য খারাপতম পরিস্থিতির জন্য তৈরি হচ্ছে, সে সময় বেগম জিয়ার জামিন নাকচ করা হয়েছে।
ভারত ভূষণ লিখেছেন, এখন অন্তত মনে হতে পারে যে, শেখ হাসিনা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই উপরে। তার শাসনামলে দেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতিও হয়েছে- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের উপরে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, পণ্যের কেনাকাটা এবং আয়ের মাত্রা বেড়েছে এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
এর পরও বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ বাড়তে থাকায় (বিগত প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে একরকম তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে), সরকার পরিচালনার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী- বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা, মিডিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের দমননীতি, নাগরিক সমাজ ও বাক স্বাধীনতার উপর হুমকি এবং প্রতিপক্ষের লোকজনকে গুম করার কারণে জনগণের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় অসন্তোষ রয়েছে। অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন হলে, তাই অনিশ্চিত একটা ফলাফল আসবে।
তিনি লিখেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপারে ভারত অতিমাত্রায় খুশি এবং তারা ক্ষমতায় ফিরে আসলে ভারত খুশিই হবে। বিএনপি সম্পর্কে ভারতের ধারণার উৎস হলো দলটির আগের ইতিহাস, যখন তারা ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল এবং দলটির উপর এবং তাদের প্রদান মিত্র দল জামায়াতে ইসলামীর উপর পাকিস্তানের কথিত প্রভাব। এই জোটের আদর্শকেও নিজেদের জন্য উদ্বেগের মনে করে ভারত যদিও বিএনপি এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছে যে, এটা কেবল একটা নির্বাচনী জোট।
কিছু বাংলাদেশী তাই বিশ্বাস করে যে, যদি একটা দুর্বল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে ভারত বরং স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে। শেখ হাসিনা সে ক্ষেত্রে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসবে।