ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন ইসলাম সম্মত: সৌদি আলেম

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: রিয়াদ: পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি সৌদি আরবেও এ বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হয়েছে। কাগজ-কলমে সৌদিতে ভালোবাসা দিবস পালন নিষিদ্ধ হলেও সে আইন এখন অনেকটাই শিথিল।

পরিবর্তনের যে হাওয়া সৌদি আরবে বইছে, এ যেন তারই আরেক দৃষ্টান্ত। সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় এক আলেম ভ্যালেন্টাইনস ডে প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন শরিয়াহ আইনের পরিপন্থী নয়।

মক্কা নগরীর সাবেক ধর্মীয় পুলিশপ্রধান আহমেদ কাসিম আল গামদি বুধবার টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে একটি ইতিবাচক সামাজিক আচার। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক বা বিরোধ নেই।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আল অ্যারাবিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কাসিম বলেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে একটি সামাজিক ইস্যু, জনগণ এটি উদযাপন করতেই পারে। কেননা এটি কোনো হারাম কিছু নয়।

সৌদি আরবে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের উদ্যোগে চলা সংস্কারের অংশ হিসেবে ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা কমিয়ে ফেলা হয়। এতে করে এখন পুলিশ ধর্মীয় অনাচারের জন্য নাগরিকদের সরাসরি গ্রেফতার করতে পারবে না।

বুধবার ভালোবাসা দিবসে সৌদি আরবের জেদ্দায় প্রশাসনের কোনো বাধা ছাড়াই ফুল বিক্রি হতে দেখা যায়, যা গত বছরেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি। বিভিন্ন গিফটের দোকানও খোলা থাকতে দেখা যায়।

আহমেদ আল কাসিম আরব নিউজকে বলেন, ভালোবাসা মানুষের সহজাত অনুভূতি। আর তার উদযাপন অমুসিলমদের মধ্যেই কেন সীমাবদ্ধ থাকবে। ধর্মীয় দিক থেকে ভালোবাসা দিবস পালনের অনুমতি রয়েছে।

এদিকে ১৩ ফেব্রুয়ারি মিসরের আলেম আহমেদ মামদুহ ফতোয়া দেন যে, নির্দিষ্ট একটি দিনে একে অন্যকে ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশে কোনো ক্ষতি নেই।

তবে তিউনিশিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি ওসমান বাটিক এ ফতোয়ার বিরোধী। তিনি বলেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্য। মুসলিমরা ইসলামী নৈতিকতার বিরোধী কোনো কিছু উদযাপন করতে পারে না।

সৌদি আরবের নারীদের বোরকা পরতে হবে না
সৌদি আরবের একজন শীর্ষ ধর্মীয় নেতা বলেছেন, সেদেশে মেয়েদের ‘আবায়া’ বা বোরকা পরতেই হবে এমন কোন ব্যাপার নেই। মেয়েদের আব্রু বজায় রেখে পোশাক পরতে হবে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের আবায়া পরতে হবে।

সৌদি আরবে মেয়েরা পা পর্যন্ত পুরো শরীর ঢেকে রাখা যে ঢিলেঢালা আচ্ছাদন ব্যবহার করে, তাকে আবায়া বলে। সেখানে আবায়া না পরে বাইরে যেতে দেখা যায় কম মহিলাকেই। সেখানে এটি পরা আইনত বাধ্যতামূলক।

কিন্তু সৌদি আরবের ‘কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস’ বা সবচেয়ে বয়েজ্যোষ্ঠ ধর্মীয় চিন্তাবিদদের কাউন্সিলের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ আল মুতলাক বলেছেন, এটার দরকার নেই।

সৌদি সমাজে যখন নানা রকম সংস্কারের চেষ্টা চলছে, তখনই একজন শীর্ষ ধর্মীয় নেতা এ ধরণের একটি ধর্মীয় ব্যাখ্যা হাজির করলেন।

শেখ আবদুল্লাহ আল মুতলাক শুক্রবার বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের ৯০ শতাংশ মহিলাই ‘আবায়া’ পরেন না। কাজেই আমাদেরও উচিৎ হবে না মেয়েদের এটা পরতে বাধ্য করা।’
সৌদি আরবে এই প্রথম এরকম উচ্চ পদের কোন ধর্মীয় নেতার মুখে এরকম কথা শোনা গেল।

তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে ইতোমধ্যে অনলাইনে তীব্র বিতর্ক এবং আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই তার সমর্থনে কথা বলছেন। বিরোধিতাও করছেন অনেকে।

টুইটারে মাশারি ঘামদি নামে একজন লিখেছেন, ‘আবায়া আমাদের অঞ্চলের একটা ঐতিহ্য। এটি োন ধর্মীয় ব্যাপার নয়।’

তবে আরেকজন তীব্র বিরোধিতা করে লিখেছেন, ‘যদি একশো ফতোয়াও জারি করা হয় তারপরও আমি আামার আবায়া ছাড়বো না। মরলেও না। হে মেয়েরা, তোমরা এই ফতোয়ায় কান দিও না।’

সৌদি আরবে মেয়েরা যখন আবায়া না পরে বাইরে যায়, তখন অনেক সময় ধর্মীয় পুলিশ তাদের এসে ভর্ৎসনা করে।

২০১৬ সালে রিয়াদের রাস্তায় এক মহিলা তার আবায়া খুলে ফেলার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সৌদি আরবে মেয়েদের কেবলমাত্র কালো রঙের আবায়ার পরিবর্তে আর বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের আবায়া পরতে দেখা যায়।

লম্বা স্কার্ট বা জিন্সের সঙ্গে খোলা আবায়া পরাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আধুনিক তরুণীদের মধ্যে।

সৌদি আরবে গত কিছুদিন ধরেই পরিবর্তনের হাওয়া বইছে।

গত বছর সেখানে বাণিজ্যিক সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এ বছরের মার্চে সেখানে প্রথম সিনেমা হল খুলবে।

গত ডিসেম্বরে সেখানে প্রথম কোন গানের কনসার্টে মহিলা সঙ্গীত শিল্পীকে গান গাইতে দেখা গেছে।

সৌদি আরবে স্টেডিয়ামে গিয়ে মেয়েদের খেলার দেখারও অনুমতি দেয়া হয়েছে।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।