ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় খুনের ঘটনা বাড়ছে। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। জেলাতে গত ৭দিনে ৬ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে একশ টাকার জন্য চাচাতো ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, তুচ্ছ ঘটনায় স্কুল ছাত্র খুন, ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে নিখোঁজ হওয়া মা মেয়ের লাশ ইছামতি থেকে উদ্ধার, কুখরালিতে পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন এবং কালিন্দী নদীর চর থেকে অর্ধ গলিত ভাসমান লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলাবাসি। প্রতি দিন অর্ধশতাধীক ব্যক্তি গেস্খফতার হচ্ছে।রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা বাড়ি ছাড়া। এরই মধ্যে এত খুন জেলা বাসিকে ভাবিয়ে তুলেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মাত্র ১’শ টাকার জন্য চাচাতো ভাইয়ের হাতে খুন হলো কলারোয়ার হেলাতলার ভ্যান চালক ও এক সন্তানের জনক রুবেল হোসেন। সে ওই গ্রামের হাসানুর রহমান দফাদারের পুত্র। এঘটনায় ঘাতক আবু সাঈদ পলাতক থাকায় মা তরুণা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি বিপ্লব দেবনাথ জানান, পাওনা ১’শ টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডার জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার উত্তর হেলাতলা গ্রামের আবুল হাসানের পুত্র রুবেল হাসান (২৮) কে চাকু দিয়ে গলায় টান দেয় তারই চাচাতো ভাই একই গ্রামের আফছার আলীর পুত্র আবু সাঈদ (৩০)। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে রাতে চিকিৎসক রুবেলের মৃত্যু ঘোষণা করেন। ওসি জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাতকের মা তরুণা বেগমকে আটক করা হয়েছে। আর ঘাতক রুবেলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। অপরদিকে লাশের ময়না তদন্তের প্রক্রিয়া চলছে।এদিকে পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় সাতক্ষীরা শহরতলীর পারকুখরালি গ্রামের রাহাতুল্যার রাইচ মিলের কর্মচারি সাদ্দাম হোসেন তার স্ত্রী এক সন্তানের জননী সোনিয়া খাতুনকে পিটিয়ে হত্যার পর গলায় রশি দিয়ে ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার দেয়। কিন্তু পুলিশী তদন্তে বেরিয়ে এসেছে হত্যার মোটিভ। শুক্রবার ভোরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত সোনিয়া শহরের ইটাগাছার নতুনপাড়ার কওছার আলীর মেয়ে। সকালেই খবর পেয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার, সদর থানার ওসি মারুফ আহম্মদসহ সঙ্গীয় ফোর্স সেখানে পৌছে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩জনকে আটক করে। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মদ জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে নিহত সোনিয়ার লাশের ময়না তদন্ত শেষে তার স্বজনদের হাতে মরদেহ তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই জিয়াউর রহমান বাদি হয়ে সাদ্দাম হোসেন তার প্রেমিকা সদরের ঝাউডাঙ্গা গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী নাজমা খাতুন ও মাতা ফাতেমা খাতুনের নাম উল্লে¬খ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারভুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারির রাতে জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কালিন্দী ও ইছামতি নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের দেয়া খবরের ভিত্তিতে কালিগঞ্জের বসন্তপুর সীমান্তের বিজিবি সদস্যরা ওই মরদেহ উদ্ধার করে।
এরপর ১২ ফেব্রুয়ারির বিকালে দেবহাটা উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতির ছুটিপুর এলাকা থেকে আরও এক কন্যা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের দেয়া খবরের ভিত্তিতে দেবহাটা থানার পুলিশ ৫ বছর বয়সী এই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পরদিন নিহতদ্বয়ের পরিচয় পাওয়া যায়। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার যাদবপুর গ্রামে। গৃহবধু ওই গ্রামের মো. মুছার স্ত্রী ও কন্যা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ওসি লস্কর জায়াদুল হক জানান, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ ও দেবহাটা সীমান্তের ইছামতি থেকে উদ্ধার হওয়া গৃহবধুর নাম রিক্তা বেগম ও তার কন্যা মুন্নী আক্তার (৫)। তারা গত ১০ ফেব্রুয়ারি ডাক্তার দেখানোর নাম করে ঝিনাইদহের বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর তাদের আর কোন খোজ পাওয়া যাইনি। এব্যাপারে গৃহবধুর স্বামী মুছা বাদী হয়ে মহেশপুর থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি করে। ডায়েরি নং ৫২১। তাং-১২.০২.১৮। এঘটনায় কালিগঞ্জ থানায় বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাতদের আসামী করে অপহরণ ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি লস্কর জায়াদুল হক আরও জানান, এঘটনায় মহেশপুর থানার যাদবপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে পুলিশের ডিএমপি’তে কর্মরত পুলিশ সদস্য আব্দুল আলিমকে (৩০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মা মেয়ে হত্যাকান্ডে তার কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপর দিকে মা মেয়ের মরদেহ সাতক্ষীরায় দাফন করা হয়েছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারির রাতে শহরের বকচরা বাইপাস সড়কের উপর নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় পুলিশ লাইন্স স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ও পুলিশ পুত্র সাকিব হোসেন (১৭)। এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শান্ত নামের একজনকে আটক করেছে ওই রাতেই। এঘটনায় ৬জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাত ২৫/৩০ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহত সাকিবের বাবা নজরুল ইসলাম।
এছাড়াও ১০ ফেব্রুয়ারির দুপুরে জেলার শ্যামনগরের কালিন্দী নদীর চর থেকে অর্ধ গলিত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের নাম আবু বক্কর সিদ্দিক (১৯) সে উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের কাঠালবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গনি গাজীর ছেলে। ভারত থেকে নদী পথে দেশে আসার সময় বিএসএফএর তাড়া খেয়ে পানিতে পড়ে তার মৃত্যু হয় বলে ধারনা নিহতের পরিবার ও পুলিশের।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মান্নান আলী জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।
Check Also
এমপি জগলুলের ভাই জহিরুল হায়দার বাবু গ্রেফতার
সাতক্ষীরার শ্যামনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম জরুহুল …