ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতিয়েরেস। তিনি প্রত্যাশা করছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এদেশে তেমন একটি পরিবেশ গড়ে উঠবে।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান দুজারিক নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই প্রত্যাশার কথা জানান। ব্রিফিংয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও কথা বলেন দুজারিক।
‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের কার্যালয় কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি-না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুজারিক বলেন, ‘আমরা আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং প্রত্যাশা ব্যক্ত করি…যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই…এটা আমাদের মৌলিক অবস্থান।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আশা করছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেন হতে পারে, সেরকম একটি পরিবেশ গড়ে তোলা হবে।’
জিয়ার অরফারেনজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারপর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে বিদেশি গণমাধ্যম ও কূটনীতিকদের আলাদাভাবে ডেকে ব্রিফ দিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি খালেদার মুক্তি দাবিতে মানববন্ধন, অবস্থান, অনশন, গণস্বাক্ষরের মতো কর্মসূচি চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এই সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদার দুর্নীতির জন্য তার সাজা হয়েছে। নির্বাচনে না এলে বিএনপিই অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, যেকোনো প্রত্যাবাসনই হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং জোরজবরদস্তি ছাড়া।
দুজারিক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের যেন কোনো তাঁবুতে ফিরতে না হয়। তাদের আপন ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে, যেখান থেকে তাদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হয়েছিল।’
গত আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন শুরু হলে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় লাখো রোহিঙ্গা, যা এখন পর্যন্ত ৭ লাখের বেশি। বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে, সবমিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।
প্রথম দিকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই রোহিঙ্গাদের ‘অনুপ্রবেশকারী বাঙালি’ বলে আখ্যা দিলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে জনগোষ্ঠীটির লোকদের ফিরিয়ে নিতে সমঝোতায় পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকার অভিযোগ, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় এ প্রক্রিয়া এখনই শুরু হচ্ছে না।
এরমধ্যে শুক্রবারই ঢাকায় দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় জনগোষ্ঠীটির ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ে’র নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের হাতে তুলে দেয় ঢাকা। বাংলাদেশ আশা করছে, প্রথম পর্যায়ে এই নাগরিকদের ফেরানোর মাধ্যমে মিয়ানমার তাদের সব রোহিঙ্গাকে স্বদেশে প্রত্যাবাসন করবে।