নাটোরের কাদিরাবাদ স্যাপার কলেজের এক ছাত্রীকে তিন ছাত্রের ধর্ষণ মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন প্রত্যাখান ॥ অভিযোগ আমলে নিলো আদালত

মোঃ রিয়াজুল ইসলাম;নাটোর সংবাদদাতা:
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কাদিরাবাদ স্যাপার কলেজের এক ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর মামলায় অভিযোগ হতে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন তদন্তকারি পুলিশ কর্মকর্তা। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে নাটোরের শিশু আদালতের জজ মো.হাসানুজ্জামান রোববার পুলিশের দেওয়া ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন। একই সঙ্গে তিনি পলাতক দুই আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারীর নির্দেশ দিয়েছেন, জামিনে থাকা এক আসামীর জামিন বাতিল করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন এবং হাজতে থাকা অপর আসামীর জামিনের আবেদন নাকোচ করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২ জুলাই দুপুরে কাদিরাবাদ স্যাপার কলেজের প্রথম বর্ষেও এক ছাত্রীর সহযোগীতায় দুই ছাত্র কলেজের অপর এক ছাত্রীকে নেশা জাতীয় পানীয় পান করায়ে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে দুই ছাত্র ও তাদের এক বন্ধুসহ তিন তরুণ (১৬) পালাক্রমে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং তাদের সহযোগী এক ছাত্রী ধর্ষণের দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে। পরে জ্ঞান ফিরে আসলে তারা ওই ছাত্রীকে ভিডিওর দৃশ্য দেখিয়ে হুমকি দেয় যে,এ ঘটনা যেন কাউকে সে না জানায়। জানাজানি করলে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হয়। একই সাথে তাকে ও তার ছোটভাইকে হত্যা করার ভয় দেখানো হয়। ওই ছাত্রীকে অসুস্থ অবস্থায় সিএনজিতে করে তার বাড়ির ফটকে রেখে যায় অভিযুক্তরা। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে একই কায়দায় আবারও ধর্ষণ করা হয়। ছাত্রীটি এই ধারাবাহিক পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত বছর ৬ আগষ্ট সকালে নিজ বাসায় হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক তাকে বগুড়া সিএমএইচ এ ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে ১৭ দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। এ সময় জানা যায় মেয়েটি নি¤œাঙ্গ দিয়ে ধারাবাহিক রক্তক্ষরন হওয়ায় সে রক্তশূন্যতায় ভুগছে। এ সময় ছাত্রীটি সব ঘটনা তাঁর বাবা-মাকে জানায়। অবশেষে গত বছর ২৪ আগষ্ট মেয়েটির মা বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া থানায় চারজনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও গণ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন কুমার চৌধুরী মামলাটি তদন্ত করেন। মামলার প্রধান আসামীকে র‌্যাব সদস্যরা কাদিরাবাদের একটি ছাত্রাবাস থেকে একটি বিদেশী পিস্তলসহ আটক করে। পুলিশ ওই ছাত্রীর এক বান্ধবীকেও গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়।
চারমাস তদন্ত শেষে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা সব (চার) আসামীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে সুপারিশ করেন। খবর পেয়ে মামলার বাদী গত বৃহষ্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে দরখাস্ত দেন। গতকাল রোববার ওই দরখাস্ত শুনানী হয়। উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আদালতের বিচারক মো.হাসানুজ্জামান পুলিশ প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার সুপারিশ অগ্রাহ্য করে সব আসামীর বিরুদ্ধে অপহরণ ও পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ আমলে গ্রহণ করেন। একই সাথে পলাতক দুই আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারীর নির্দেশ দেন,জামিনে থাকা আসামীর (বান্ধবী) জামিন বাতিল করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং হাজতী আসামীর জামিনের আবেদন নাকোচ করেন। আগামি ২৫ ফেব্রুয়ারী মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
আদালতের আদেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাদী রশিদা পারভিন বলেন,তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীদের বাঁচানোর জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি আমাকে না জানিয়ে গোপনে মনগড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। আদালত তা প্রত্যাখান করায় আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি।
বাগাতিপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন কুমার চৌধুরী আসামীদের সাথে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,অভিযোগটি গুরুতর। তাই আদালত যেটা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। এতে আমাদের কিছু বলার নাই।

 

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।