ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারের নেয়া পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই হাজার ৪শ ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করার কথা। কিন্তু কোম্পানিগুলোর কাজের ধীরগতির কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে দশভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার শর্ত দেয়া হয়। সরকার সেই লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ শুরু করলেও দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগামীতে এসব বিষয়ে কঠোর হচ্ছে মন্ত্রণালয়।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উৎসাহিত করতে চায়। এজন্য প্রণোদনা দিতেও প্রস্তুত। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে একটু বেশি দামেই বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একশ্রেণির উদ্যোক্তা এ সময় কেন্দ্র নির্মাণের আবেদন করে। সরকারও তাদের আবেদন গ্রহণ করে কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়। অথচ সরকারের কাছ থেকে সুযোগ পাওয়ার পরও তা কাজে লাগাতে পারেনি। এ কারণে অনেক কোম্পানিকে নোটিশ দিচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ বিভাগ অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি) রহমত উল্লাহ্ মোঃ দস্তগীর এনডিসি বলেন, টেকনাফে ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কেন্দ্রটির স্টিলের ফ্রেম বসানো হয়ে গেছে। তারা সোলার প্যানেল নিয়ে এসেছে। আশা করা যায় তা শিগগিরই বসে যাবে। তিনি বলেন, আর অন্য কোম্পানীগুলো কারও তেমন অগ্রগতি নেই। সরকার আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে চাইলেও উদ্যোক্তারা পেরে উঠছেন না।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তাতে একটি কেন্দ্রের অবস্থাকে ভালো বলা হচ্ছে। বাকিগুলোর কাজ এখনও শুরুই হয়নি। বাস্তবায়ন অগ্রগতি নেই বলে অনেক প্রকল্প বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই হাজার ৪শ ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়িতে ৫০ মেগাওয়াট, টেকনাফে ২০০ মেগাওয়াট, সুমানগঞ্জের ধর্মপাশায় ৩২ মেগাওয়াট, কক্সবাজারে ২০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ৫০ মেগাওয়াট, কক্সবাজারে ২০০ মেগাওয়াট, রংপুরে ৩০ মেগাওয়াট, গাইবান্ধায় ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কোনও অগ্রগতি নেই। এর মধ্যে ৩৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে কক্সবাজারের ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ চলছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে কেন্দ্রটি চালু হওয়ান কথা রয়েছে। এছাড়া দুটি কেন্দ্র বাস্তবায়নকারী কোম্পানির তাদের সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। দুটি কেন্দ্র বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরুনা করার কারণে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাকিগুলো কোনও কাজই শুরু করতে পারেনি। বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সৌর বিদ্যুতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে দ্রæত কাজ শুরু করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সরেজমিন কেন্দ্রের বাস্তবায়ন এলাকাও পরিদর্শন করা হয়েছে। এলাকায় মালামাল না দেখলে এসব উদ্যোক্তাকে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র টেকনাফে বাস্তবায়নাধীন ৩০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির মালামাল এসেছে। বাকিগুলোর এখন পর্যন্ত কোনও খবর নেই। একদিকে সময়মতো কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে পারছে না, অন্যদিকে এই কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুতের দাম বেশি। বর্তমানে প্রযুক্তির দাম কমায় সারাবিশ্বে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় কমে আসছে। সেখানে বাস্তবায়ন না করতে পারা এসব বেশি দামের বিদ্যুৎ প্রকল্প ঝুলিয়ে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে ১৮ থেকে ১৯ সেন্টে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ক্রয় চুক্তি হয়েছে। এখন এই দর ১২ সেন্টে নেমে এসেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বাস্তবায়ন হয়নি এমন প্রকল্প থেকে এখনও অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎ কেনা সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে না। দিনের পর দিন সৌর বিদ্যুতের দাম সারাবিশ্বে কমছে। আমাদের এখানেও কমবে। কাজেই এখন অতিরিক্ত দামের এসব কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা যেতেই পারে। তবে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিআর) শর্ত অনুযায়ী, কোনও প্রকল্প বাতিল করতে হলে ২ বছর থেকে ১৮ মাস সময়ের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সুনামগঞ্জের ৩২ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি স্থাপন করবে এডিসন-পাওয়ার পয়েন্ট অ্যান্ড হাওড় বাংলা- কোরিয়া গ্রিন এনার্জি লিমিটেড। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রটি চালু হওয়ার কথা থাকলে এখন তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। কক্সবাজারের ২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি জৌলাস পাওয়ার লিমিটেড (জেপিএল) স্থাপন করবে। কেন্দ্রটির চলতি মাসের ১২ তারিখ উৎপাদনে আসার কথা অর্থচ এ কেন্দ্রের এখন সিভিল ওয়ার্ক ও স্ট্রাকচারাল কন্সট্রাকশন ওয়ার্ক চলছে। ময়মনসিংহের কেন্দ্রটি স্থাপন করবে এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেড। এ বছরের ৮ এপ্রিল উৎপাদনে আসার কথা এই কেন্দ্রের। কিন্তু কোনও কাজ না শুরু হওয়ায় কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারের ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি স্থাপন করবে সান এডিসন এনার্জি হোল্ডিং। আগামী ৮ জুলাই তাদের উৎপাদনে আসার কথা কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না করার কারণে তাদেরকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আর তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও তা বাতিল করা হয়েছে। রংপুর ৩০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি যৌথভাবে স্থাপন করবে ইন্ট্রাকো সিএনজি ও জুলি নিউ এনার্জি কোম্পানি। এ বছরের ২৬ নভেম্বর এই কেন্দ্রের উৎপাদনে আসার কথা কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও কাজ শুরু করতে পারেনি কোম্পানিটি। গাইবান্ধায় ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিতেও কোনও কাজ শুরু হয়নি। তাদের উৎপাদনে যাওয়ার কথা আগামী বছরের ২৫ এপ্রিল।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সময় তারা যেন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল। এখন বিভিন্ন অজুহাতে তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, কিছু কোম্পানির কাজের অগ্রগতি বিবেচনা করে সময় বাড়ানোর আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বাকিদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হতে পারে। কারণ, এই সময় বসে থাকার চেয়ে নতুন করে চুক্তি করা ভালো। এতে কাজের গতি বাড়বে।ইনকিলাব
Check Also
ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি
পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …