মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ্ : ২১শে ফেব্রুয়ারি এলে প্রতি বছর পুরো বাংলাদেশ নড়েচড়ে ওঠে। চারিদিকে মহা ধুমধামে প্রস্তুতি চলে একুশ উদ্যাপনে। এর সাথে যখন ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বব্যাপী “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” উদ্যাপন অন্তর্ভূক্ত হয়, তখন একুশের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে, শিক্ষাঙ্গনে, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সাড়া পড়ে যায় একুশ উদ্যাপনে। উঠতি কবিরা, তরুণ শিল্পিরা ও প্রকাশকরা নতুন নতুন কবিতার বই, গল্পের বই ও উপন্যাস প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। ঢাকায় বাংলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত ঐতিহাসিক একুশের গ্রন্থমেলা শুধু নয়, বিভাগীয় শহর এমন কি জেলা-উপজেলা পর্যায়েও একুশকে কেন্দ্র করে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ভাষাপ্রেমিক এমন জাতি পৃথিবীতে খুব কমই আছে। কবি কত সুন্দরভাবেই না বলেছেন….
সেই যে কবে কয়েকজন খোকা
ফুল ফোটালো-রক্ত থোকা থোকা-
গাছের ডালে পথের বুকে ঘরে
ফাগুন মাসে তাদেরই মনে পড়ে।
সেই যে কবে-ষাটটি বছর গেলো-
ফাগুন মাসের দু-চোখ ছলোছলো।
বুকের ভেতর ফাগুন পোষে ভয়-
তার খোকাদের আবার কী যে হয়!
ফাগুন মাসে রক্ত দেয়া এই খোকারা আজ জাতীয় বীর। তারাই আমাদের গর্ব, তারাই আমাদের প্রেরণা। একুশে রক্ত ঝরিয়ে যে প্রেরণার চারাগাছ তাঁরা রোপণ করেছিল তাই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা নামের এক বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছিল। বস্তুত ১৯৫২ সালের একুশই আমাদের স্বাধীনতার সূতিকাগার।
বাংলা আর বাংলায় নেই। বাংলা হয়ে গেছে বাংলিশ। আমাদের আমলারা, আমাদের শিক্ষকগণ, আমাদের শিল্পি-কলাকুশলিরা ইংরেজি ছাড়া দু’টি বাক্যও বলতে পারেন না শুদ্ধ বাংলায়। আর তরুণ প্রজন্ম তো কি বলে তারা নিজেরাই জানেনা। এফ.এম. রেডিও অথবা ফেইসবুক ও টুইটার নিয়ে যারা আছে তারা তো ভিনগ্রহের বাসিন্দা হয়ে গেছে। তাদের বলা, কলা ও চলা একেবারে বেসামাল। এই প্রজন্মের কাছে আমাদের মা হয়ে গেছেন মাম্মি, বাবা হয়ে গেছেন ডেডি, খালা, ফুফু ও চাচি হয়ে গেছেন আন্টি। আর মামা-চাচা-ফুফাদের চৌদ্দগোষ্ঠি আংকেল। চাচাতো মামাতো ফুফাতো খালাতো সব কাজিন। আমরা কি আমাদের মাঝে আছি? এভাবে না বললে নাকি জাতে ওঠা যায় না!
একটা মহা ধ্বংসাত্মক সাংস্কৃতিক ঝড় আমাদের বাঙালি মুসলমানদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যার ভয়াবহ তা-বে আমরা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। আমরা বুঝেও এর কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছি না। আর একুশের শহীদগণের আত্মা কেঁদে কেঁদে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
একথা বললে অসত্য হবে না যে, আমাদের পহেলা বৈশাখ ও ২১শে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন নিজ মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির সাথে প্রতারণা মাত্র। আমি দেখেছি পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন একটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজো উদ্যাপনের মতো নানা কদাচারে ভর্তি। যাতে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের শিক্ষা ও সাংস্কৃতির কোনো গন্ধ নেই। অথবা মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশসমূহের ‘নওরোজ’ উদ্যাপনের সাথেও কোনো মিল নেই। আর একুশে ফেব্রুয়ারির সকাল বেলা কোনো মতে কাটলেও বহু বছর ধরে শুনে আসছি একুশে ফেব্রুয়ারির মঞ্চ থেকে বাজানো হচ্ছে হিন্দি ছবির সুর-বেসুর অথবা ধামাকা মার্কা উৎকট গান। এই কি আমাদের মাতৃভাষা প্রেম।
Check Also
আশাশুনিতে শোভনালী ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী সম্মেলন
স্টাফ রিপোর্টার :আশাশুনির শোভনালী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ।সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল …