ধর্ম রক্ষা’র পথ নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে:ধর্ম মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ

॥ আব্দুর রাজ্জাক রানা ॥
বাঙালিরা সহিষ্ণুতাতে বিশ্বাস করেন, বাঙালিরা সব ধর্মতেই সত্য বিদ্যমান বলে বিশ্বাস করেন। এ কেবল কথার কথা নয়। বাংলাদেশে প্রত্যেক জনপদে ধর্মীয় বিচিত্র অনুষ্ঠান হয়, শুধু কোনও একটা ধর্মের জন্য করা হয় না। বাঙালি নিজের ধর্মের প্রশংসা, আর অপরের ধর্মের নিন্দা করেন না। বাঙালিরা ভাল করেই জানেন, যে যতো বেশি নিজের ধর্মের প্রশংসা করে, তার ধর্ম ততো অন্তরে শুকিয়ে যায়। নিজের শ্রেণি, গোষ্ঠীর প্রশংসা করা ঠিক না এবং নৈতিক আত্মশ্মাঘা অসহিষ্ণুতার মূল এটাও বাঙালি জাতি উপলব্ধি করেন।
পরধর্মের নিন্দা করা না। যদিও সে ধর্মে অসহিষ্ণুতা আছে বলে জানা যায়, তবুও না। বাংলাদেশে আজ সব ধর্মাবলম্বীদের একাংশ যা করছেন, তা এর বিপরীত। অপর সকল ধর্ম, নীতি, আনুষ্ঠানিকতা তারা নির্বিচারে নস্যাৎ করছেন। ভয় ছড়াচ্ছেন অন্য ধর্ম বা সম্প্রদায় সন্বন্ধে। ধর্মের হিসেব-কষা লোকদের বলা হয়ে থাকে ধর্মবণিক বা ধর্মজীবি, যে ধর্ম বেঁচে খায়। কার বেশি, কার কম, এটা ধর্মের বিষয় নয়। যে ধর্ম আচরণ করে, সে তা নিয়ে চিন্তা করে না।
ধর্ম রক্ষার জন্যও অপর ধর্মকে আঘাত করা চলে না। নিজের জীবনে ধর্ম রক্ষা। ধর্মাচরণ থেকে বিচ্যুত না হওয়া। বিধর্মীর হাত থেকে ধর্মকে রক্ষা করার কথা বলা হয়নি। নিজের জীবনে নৈতিক ধর্ম আচরণ করলে ধর্মই তাকে এবং তার সমাজকে রক্ষা করে।
হিংসা না করে কেউ থাকতে পারে না। ধর্ম আনৃশংস্য। নৃশংস যে সবাইকে ক্ষুধার্ত দেখে নিজে চর্বচোষ্য খায়। অসাম্য সহ্য করাই নৃশংসতা। ‘ধর্ম’-র এক বৈশিষ্ট হলো, উৎকট অসাম্য সহ্য না করা। সমতাই যোগ। সমতা সব রুচি বা পন্থার বৈচিত্র্য, বৈশিষ্ট্য লোপ করে একই ছাঁচে কোটি কোটি লোককে দিয়ে ধর্মধ্বজী কুচকাওয়াজ করানো নয়।
ব্যক্তির ধর্মাচরণ সমাজকে রক্ষা করে। ধর্মাচরণ মানে কেবল দিবা-রাত্রি প্রার্থনা নয়। অন্যের প্রতি আমার কী আচরণ হবে, বলে দেয় ধর্ম। ব্যক্তির সন্তোষ ও প্রসন্নতার উপায় মৈত্রী, করুণা, নির্লিপ্তততা এবং উপেক্ষা। সমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, মিত্রতা। দুঃখী, হীনবলের প্রতি তাচ্ছিল্য ও উদাসীনতা নয়, করুণা। অধিক সম্পন্নের প্রতি ঈর্ষা নয়, আনন্দিত চিত্তে তার সাফল্যের উদযাপন এবং নৈতিক দৃষ্টিতে যে হীন, তার প্রতি ঔদাসীন্য। অন্য লোক কতটা দুষ্টচরিত্র তা নিয়ে উত্তেজিত না হওয়া। তার অপরাধের শাস্তির ভার প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থার। সেখানে জানালেই যথেষ্ট, শাস্তির দায়িত্ব নেয়ার অধিকার কোন ধর্মাবলম্বীর নেই।
দেশে যখন ধর্মীয় লেবাসধারীরা রাজনীতিতে নেমে পড়েছেন ব্যাপকভাবে, ধর্মজীবিরা বহুজাতিক বিশ্ববণিকদের আঁতাতে গড়ে ওঠা পরধর্মদ্বেষী রাজনীতিককুলের জিঘাংসু ‘স্বাজাত্যবোধ’-এর ঝড়ে শহর-গ্রামে বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ঘরে-ঘরে নির্লোভ অতিথি পরায়ণ গৃহস্থের সন্ধ্যাপ্রদীপগুলো নিবু নিবু, তখন ধর্মীয় চিন্তাবিদদের ‘ধর্ম রক্ষা’র পথ নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে, এটাই সময়ের দাবি।
মসজিদ ভেঙে মন্দির বা মন্দির ভেঙে মসজিদ বানালে ধর্ম রক্ষা হয় না, এমনকী যদি সেই মসজিদ বা মন্দির কোনও কালে ভেঙেও তৈরি হয়ে থাকে। প্রতিদিন কাউকে ঈর্ষা না করার সংযম, কারও আঘাত না দিয়ে সত্য কথা বলা, এক আল্লাহ্ নামকীর্তনের দ্বারা সর্বজীবের কল্যাণ কামনা করলে ধর্ম রক্ষা হয়। এই রকম ধর্মকে নিজেদের জীবনচর্যায় বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রতিবেশী ভিন্নধর্মীয় সংস্কৃতি, দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের বিষয়ে সাগ্রহে সশ্রদ্ধভাবে জানবার চেষ্টা করা শ্রেয়। নিজের ধর্মের ‘পাষন্ডদের অন্যায় ও ত্রুটিগুলোর প্রতিবাদ করতে হয়। নিজের জাতি, বর্ণ, শ্রেণি, বর্গকে প্রশংসা করাটা স্ব-ধর্মনিষ্ঠার লক্ষণ নয়। ‘সম্প্রদায়প্রশংসী’ যারা প্রচার করে বেড়ায় ‘আমার গোষ্ঠী সবার থেকে ভাল’ তারা হলো নৃশংস। ধর্মের লক্ষ্য অনৃশংসতা।
ধর্ম মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধর্মে বিশ্বাস মানব হৃদয়ের সহজাত প্রবৃত্তি। বিশ্বের প্রায় সব মানুষই ধর্মে বিশ্বাসী। ধর্ম মানুষের ব্যক্তি-সমাজ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতি-রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সৃষ্টিগত দিক দিয়ে সব মানুষই সমান ও অভিন্ন। ভাষা-ধর্ম-বর্ণের ভিন্নতা থাকলেও মৌলিকভাবে সব মানুষই সমান। গোটা মানব সম্প্রদায় একক সত্তা হতে সৃষ্ট। এক আদম থেকে সব মানুষ সৃষ্টি বিষয়ে সকল সেমেটিক ধর্মই অভিন্ন মত প্রকাশ করে। অর্থাৎ সেমেটিক সকল ধর্মই স্বীকার করে দুনিয়ার সব মানুষ আদম-হাওয়া থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।
হিন্দু ধর্মমতে, জগতের সব মানুষের সৃষ্টি হয়েছে এক ব্রহ্মা হতে। অন্যান্য ধর্মেও অভিন্ন সত্তা থেকেই বিশ্বের সব মানুষ সৃষ্টির উল্লেখ আছে। তবে সব মানুষই এক সত্তা হতে সৃৃষ্ট হলেও আকৃতি-প্রকৃতির দিক দিয়ে সবাই এক নয়। চিন্তা-চেতনা, বোধ-বিশ্বাস সব মানুষেরই সমান নয়। এসব ভিন্নতা, কালের বিবর্তন, সাংস্কৃতিক রূপায়ন, আবহাওয়া-জলবায়ুর প্রভাব প্রভৃতি কারণে মানুষের জাতি-গোষ্ঠী-ধর্মভেদের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মভেদের কারণে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সব ধর্মাবলম্বীই মূলত এক ¯্রষ্টারই আনুগত্য জ্ঞাপন ও মাহাত্ম্য প্রকাশ করে থাকে। ইবাদাত-বন্দেগি, পূজা-অর্চনা, প্রার্থনা-উপাসনা ইত্যাদি সব কিছুই বিশ্ব নিয়ন্ত্রক এক আল্ল¬াহর জন্যই করা হয়। ভাষা-সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে এক মহান সত্ত্বাকেই ‘ঈশ্বর’ ‘গড’ ‘প্রভূ’ ‘আল্ল¬াহ’ ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। যুগ-সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে ধর্মের পাথর্ক্য থাকলেও লক্ষ্য অভিন্ন। মহান ¯্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর আশির্বাদ কামনা সকল ধর্মীয় আরাধনার মূল লক্ষ্য। ইহলৌকিক শান্তি আর পারলৌকিক মুক্তি অর্জনই সব ধর্মের উদ্দেশ্য। স্বর্গ-নরক, জান্নাত-জাহান্নাম প্রায় সব ধর্মের পারলৌকিক স্থায়ী আবাসস্থল। সৎ-মহৎ কাজ করলে পরকালে সব ধর্মের বিধানে স্বর্গ বা জান্নাত লাভের কথা বলা হয়েছে। আবার অন্যায়-পাপ কাজ করলে সব ধর্মের বিধানে পরকালে চরম শাস্তির স্থান জাহান্নাম বা নরকের শাস্তির উল্লে¬খ আছে। হত্যা-খুন, চুরি-ডাকাতি, অনাচার-ব্যভিচার, মারামারি-চোগলখোরি ইত্যাকার সব অনৈতিক বা অপরাধকর্ম সব ধর্মেই নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে সততা-ন্যায়পরায়ণতা, উপকারিতা-আতিথেয়তা, সৃষ্টির সেবা ইত্যাদি সৎ গুণাবলী সব ধর্মেরই আদিষ্ট বিষয়। উদারতা-সহমর্মিতা-সহানুভূতিকে সব ধর্মেই উৎসাহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে কঠোরতা-সংকীর্ণতাকে সব ধর্মে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নিজ ধর্ম প্রচারের বিধান থাকলেও অন্য ধর্মাবলম্বীকে অযথা আক্রমণ কোন ধর্মেই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রত্যেক ধর্মই নিজ ধর্ম পালনের নির্দেশ থাকলেও অন্য ধর্মকে নস্যাৎ করার নির্দেশ কোন ধর্মেই নাই।
ধর্মই মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায় এবং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আর ধর্মের মাধ্যমেই আত্মিক উন্নতি সাধন ও নৈতিক শক্তি অর্জন সম্ভব হয়। ধর্মই বিপদে ধৈর্য কর্মে নিষ্ঠ এবং আনন্দে-উৎফুলে¬ স্থিত থাকার শিক্ষা দেয়। ধর্মনিষ্ঠাই মানুষকে দায়িত্বশীল এবং কর্তব্যনিষ্ঠ করে। তাই প্রকৃত ধার্মিকেরা সৎ ও মহৎ হয়ে থাকেন। তাদের কাছে জাতিভেদ-ধর্মভেদ গৌণ হয়ে থাকে। সব ধর্মেই মানবতার নির্দেশ এবং অমানবিকতার নিষেধ আছে। মানবসেবা ও সৃষ্টির সেবাকে সব ধর্মই পুণ্য জ্ঞান করে। এছাড়া সব ধর্মেই সহনশীলতা-সহিষ্ণুতার নির্দেশ আছে।
অন্যদিকে সংঘাত-সহিংসতার নিষেধ আছে সব ধর্মেই। এসব সত্ত্বেও বিশ্বে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কম হয় নাই। তবে এসব দাঙ্গায় নিহত মোট সংখ্যা রাজনৈতিক যুদ্ধে নিহত সংখ্যার তুলনায় খুবই কম। আর লক্ষণীয় বিষয় হলো, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নেতৃত্বদানকারী ও ধ্বংসযজ্ঞে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে মোল্ল¬া-পুরোহিত, যাজক-পাদ্রীর সংখ্যা বেশি নয়। বরং যারা নিজ ধর্ম পালনে আগ্রহী নয় তারাই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বেশি উৎসাহী হয়। তারা ধর্ম পালনের চেয়ে ধর্মীয় আগ্রাসনকে বেশি পুণ্য মনে করে। নিজ ধর্ম পালনের চেয়ে অন্য ধর্মের কুৎসা রটনাকেই তারা বেশি ধর্মীয় কাজ মনে করে। নিজ ধর্মের লোকদের রক্ষার চেয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীকে হত্যা করা তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। জীবনে যারা ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনে অভ্যস্ত নয় তারাই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সামনে থাকে।
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মূল কারণ ধর্মীয় অজ্ঞতা। ধর্মীয় অজ্ঞরা নিজ ধর্ম সম্পর্কেই জানে না। তাই স্বাভাবিক কারণে অন্য ধর্ম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকারই কথা। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অপূর্ণ আর ধর্মীয় কাজ হয় লোক দেখানো। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজনে। ধর্ম পালনকে তারা সামাজিক দায়বদ্ধতা ও লৌকিকতা প্রদর্শনের বিষয় মনে করে। আত্মিক শুদ্ধি কিংবা নৈতিক উন্নতি সাধনের জন্য তারা ধর্মীয় বিধান পালন করে না। এ জন্য তাদের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতাও থাকে না। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে শুধু সাম্প্রদায়িক পরিচয় হিসেবে। আর তাদের ধর্মীয় পরিচয় শুধুই নামসর্বস্ব। ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে তারা অজ্ঞ-মুর্খ। ধর্মীয় আবরণে বৈষয়িক স্বার্থ হাসিল তাদের ধর্ম পালনের মূল উদ্দেশ্য। যাদের ধর্মীয় জ্ঞান নাই তারাই পেশী শক্তি দিয়ে অন্য ধর্মের উপর প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা করে। এসব কারণে ধর্মীয় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সংঘাত-সংঘর্ষ বাধে। তবে আচারনিষ্ঠ ধার্মিক লোকেরা ধর্ম পালন করে ইহলৌকিক শান্তি আর পারলৌকিক মুক্তির মন্ত্র হিসেবে।
অন্যদিকে মতলববাজ ধার্মিকেরা ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের সুবিধার্থে। মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডা ইত্যাদি ধর্মীয় উপাসনালয়ে তারা ধার্মিক সাজে আর বাইরে ধর্মবিরোধী কাজ করে। শুধু আনুষ্ঠানিক উপাসনাগুলোকেই তারা ধর্ম মনে করে। আর এগুলোকে তারা পাপ মোচনের উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে। এ জন্য তারা উপাসনালয়ে ধর্মীয় কাজ করলেও বাইরে পাপের কাজে নিযুক্ত থাকে। ধর্মকে তারা আবরণ মনে করে। তাই ধর্মীয় বাতাবরণে তারা বেশি খারাপ কাজ করে থাকে। তবে ধর্মের সঠিক জ্ঞান থাকলে এ সব ধর্মীয় মতলববাজি এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা-সংঘাত বন্ধ হতে পারে। আর ধর্মের সঠিক জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজন যথাযথ ধর্মশিক্ষার। আর ধর্মীয় শিক্ষার জন্য উপযুক্ত সময় ছাত্রজীবন। তাই স্কুল-কলেজের পাঠ্য তালিকায় ধর্ম বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এতে শিক্ষার্থীরা একই সাথে জাগতিক ও ধর্ম শিক্ষার সুযোগ পাবে।
ধর্মীয় শিক্ষিত লোকেরা পবিত্র আত্মায় বিশ্বাস করে। আর পবিত্র আত্মাই মানুষকে উন্নতির পথে পরিচালিত করে এবং বোধ-বিশ্বাসকে শানিত করে। ইসলাম হিন্দু বৌদ্ধ ইহুদি খ্রিস্টান কনফুসিয়াস জরাথুস্টসহ বিশ্বের প্রায় সব ধর্মই সংঘাত নয় সহনশীলতায় বিশ্বাসী। কোন ধর্মই হয়তো অন্য ধর্মের প্রবর্তককে হেয় জ্ঞান করে না। ইসলাম ধর্ম তো ইহুদি খ্রিস্টানদের ধর্মীয় কিতাব ও ধর্ম প্রবর্তকদেরকে আল্ল¬াহ প্রেরিত হিসেবে স্বীকৃতিদান ছাড়া নিজ ধর্মাবলম্বীকে মুসলিম হিসেবেই গণ্য করে না। ইসলাম ধর্মের অধিকাংশ বিধি-বিধান পূর্ববর্তী ইহুদি-খ্রিস্টান ধর্মের সংস্করণ মাত্র। ইহুদি খ্রিস্টান ও ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য অভিন্ন।
ইসলাম এ অভিন্নতার স্মৃতি উল্লে¬খ করে সেমেটিক ধর্মাবলম্বীদেরকে মিলনের আহবান জানিয়েছে এভাবে, ‘আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি আল্ল¬াহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে। ইবরাহিম ইসমাইল ইসহাক ইয়াকুব ও তার বংশধরদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসা ঈসা ও অন্যান্য নবিগণকে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা দেয়া হয়েছে সেগুলোর প্রতিও আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আর আমরা তাদের (নবীদের) মধ্যে কোন পাথর্ক্য করি না। মূলত আমরা সবাই তার (আল্ল¬াহর) প্রতি আত্মসমর্পণকারি’ (ইমরান-৮৪)।
শুধু তাই নয়, সমমনা ধর্ম ছাড়াও মূর্তিপূজারি অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহনশীল আচরণের নির্দেশ দিয়ে ইসলাম ঘোষণা করেছে, ‘আল্ল¬াহর পরিবর্তে তারা যাদের ডাকে তোমরা তাদের গালি-গালাজ করো না। কারণ শত্রুতাবশত তারা না জেনেই আল্ল¬াহ তায়ালাকেও গালি দিবে’ (আনআম-১০৮)। অন্যান্য ধর্মেও অনুরূপ ধর্মীয় সহনশীলতা থাকা স্বাভাবিক। ধর্মীয় সহনশীলতা সম্পর্কে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘ধর্মে ধর্মে বিরোধ হতে পারে না। কারণ ধর্ম হলো মিলনের সেতু আর অধর্ম বিরোধের। যখন ধর্মে বিকার উপস্থিত হয় তখনই বিচ্ছেদ প্রবল হয়ে ওঠে।’
তাই বর্তমান সংঘাতময় বিশ্বব্যবস্থায় শান্তি-সংহতি ফিরে আনতে ধর্মীয় সহনশীলতা প্রয়োজন। আন্তঃধর্ম সংলাপ-সহনশীলতা পৃথিবীতে বসবাসকারি বিভন্ন ধর্মাবলম্বীতে বিভক্ত মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। এতে সমাজ-রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহনশীলতার পরিবেশ তৈরি হবে। ফলে দেশ ও জাতি সুখি-সমৃদ্ধশালী হতে পারে ।
প্রকৃতপক্ষে ধর্ম ব্যক্তিকে মহৎ, জীবনকে উন্নত, পরিবারকে সুখময় এবং সমাজকে সুন্দর-সুশৃঙ্খল করে। ধর্মের মধ্যেই ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শান্তি বিরাজ করে। তাই যথাযথ ধর্ম চর্চার মাধ্যমেই বিশ্বের সকল অন্যায়-অসত্য, সংঘাত-সংঘর্ষ দূর করে সুখ-শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তঃধর্ম সংলাপ ও সহনশীলতা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।#
(লেখক-সাংবাদিক)

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।