মোঃ রিয়াজুল ইসলাম,নাটোর প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত ও সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনীকেও গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। দেশ ও আন্তজার্তিক নানা দূর্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে অনন্য দৃষ্ট্রান্ত স্থাপন করেছেন। তারা তাদের একাগ্রতা, কর্মদক্ষতা ও নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকান্ডের জন্য সার্বজনীন আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে ্নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বৃহস্পতিবার নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে সেনাবাহীনির ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৬ষ্ঠ পুণর্মিলনী ও অধিনায়ক সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র সংবিধান এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় তাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোন হুমকি মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। জাতিসংঘের শান্তি মিশন ও মিয়ানমার প্রসঙ্গ টেনে তিনি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকান্ড বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া দেশের যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও দূর্ঘটনায় দূর্গতদের সাহায্য ও সহযোগিতা করে সশস্ত্র বাহিনী অনন্য দৃষ্ট্রান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সাথে পারিবারিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের রয়েছে সুদৃঢ় সম্পর্ক। তার দুই ভাই সোনবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ছোট ভাই রাসেলেরও বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘাতকরা তাদের সবাইকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। সেনাবাহিনীর মাঝেই তিনি তার হারানো ভাইদের খুঁজে পান বলে উল্লেখ করেন। এসময়ে তিনি সেনাবাহিনীতে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দেশের জন্য একটি উন্নত, পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেন। সেই নীতিমালার আলোকে ‘আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ সময় সেনাবাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের বিগত ও বর্তমান সময়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০০ মেয়াদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাপক উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার গত নয় বছরে সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপশি সক্ষমতাও বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের এই সময়ে আর্থসামাজিক প্রতিটি খাতে দেশ যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল। মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। দেশের অর্থণীতি শক্তিশালী হয়েছে, দেশের উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যখাতে সরকারের উন্নয়ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। তিনি জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি, দারিদ্রতার হার হ্রাস ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির নানা সমীকরণ তুলে ধরেন। স্বাধীনতা বিরোধী কোন অশুভ শক্তি যেন দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে না পারে সে জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্ত্রীতে দেশ মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের আগেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেনা প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহম্মদ শফিউল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ( অবঃ) তারিক আহম্মেদ সিদ্দিক, নৌ বাহিনীর প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, উদ্ধতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ সহ ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকুরিরত কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি কুচাকওয়াজ পরিদর্শণ ও সালাম গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি বেলা ১১ টার দিকে আকাশ পথে ঢাকা থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে সেনানিবাসে সেনাবাহীনির ইঞ্জিনিয়ার কোরের ৬ষ্ঠ পুনর্মিলনী ও অধিনায়ক সম্মেলন অনুষ্ঠানে পৌঁছলে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেনানিবাসের অনুষ্ঠান শেষে তিনি দুপুরে দলীয় জনসমাবেশ ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনের জন্য হেলিকপ্টারে যোগে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।