ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতাদের টার্গেট করে এখনও গুম করছে নিরাপত্তা বাহিনী। কোনো কোনো নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের হদিস মিলছে না। বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে। ৪০৯ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনটি বিশ্বের ১৫৯টি দেশের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটন থেকে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি। বাংলাদেশ অংশে লন্ডনভিত্তিক সংস্থাটির প্রতিবেদনে জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে মানবাধিকার কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর। স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে গত এক দশকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে দারিদ্র্য বিমোচনে অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়- বিরোধী দলের সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশে নিয়মিত গুমের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের গুমবিষয়ক পর্যবেক্ষক দলের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা এক বার্তায় বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গুমের ঘটনা অনেক বেড়েছে। গত বছর ৮০ জনেরও বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মার্চে বিএনপির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেতার ছেলে হাম্মাম কাদের চৌধুরীকে ৬ মাস আটক রাখার পর মুক্তি দেয়া হয়েছে। জামায়াতের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই নেতার ছেলে আহমদ বিন কাসেম ও আবদুল্লাহিল আমান আজমিকে ২০১৬ সালের আগস্টে গুম করা হয়। তারা এখন কোথায় আছেন কেউ জানেন না। তাদের ফিরে পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি।
এপ্রিলে সুইডেনের এক বেতারে গোপনে র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন কর্মকর্তার বক্তব্য প্রচার করা হয়েছিল উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ওই কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন কীভাবে তারা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেন। অক্টোবরে গুমের শিকার হওয়া শিক্ষক মোবাশ্বার হাসানের প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রতিবেদনে। গুম হওয়ার ৪৪ দিন পর তিনি বাড়ি ফেরেন। অ্যামনেস্টি বিচার ব্যবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছে। সংস্থাটি বলছে, অসদাচরণ ও অক্ষমতার কারণে বিচারপতিদের সংসদের দ্বারা অপসারিত হওয়ার বিধান প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ খারিজ করে দেয়ার পর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সংস্থাটি জানায়, আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান। বাংলাদেশ সরকার তাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারেও জোর তৎপরতা চালাচ্ছে দেশটি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নভেম্বরে একটি চুক্তিতে উপনীত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তবে সেটি স্বেচ্ছা প্রত্যর্পণ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টির আরও অভিযোগ- সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের হেনস্তা করার জন্য নিপীড়নমূলক আইন ব্যবহার করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করে অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা করছে। সাংবাদিক নির্যাতনেরও অভিযোগ তুলেছে অ্যামনেস্টি। আবদুল হাকিম শিমুল নামের একজন সাংবাদিককে হত্যা করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বহু সাংবাদিক শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। সংস্থাটির আরও অভিযোগ, কারাগারে পুলিশি নির্যাতন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এর তেমন কোনো তদন্ত হয় না। আইন প্রণেতাদের অনীহা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে ২০১৩ সালের নির্যাতন ও বন্দিমৃত্যু প্রতিরোধ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই।