ভারতীয় সেনা প্রধানের বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইতে পারে বাংলাদেশ

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:চীনকে সাহায্য করতে পাকিস্তানের কল্পিত প্রক্সিযুদ্ধে বাংলাদেশ জড়িত বলে ভারতীয় সেনা প্রধান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার তার ব্যাখ্যা চাইতে পারে ভারতের কাছে। ঢাকার কর্মকর্তারা স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-কে এ কথা বলেন।

ভারতের বিরুদ্ধে প্রক্সিযুদ্ধে বাংলাদেশ জড়িত বলে জেনারেল বিপিন রাওয়াত মন্তব্য করার পর বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের দু’দিকেই টানাপোড়ন তৈরি হয়েছে। এই মন্তব্য ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ নিউ এজকে বলেন, জেনারেল রাওয়াত একটি সুদূরপ্রসারী বক্তব্য দিয়েছেন এবং এই বক্তব্য ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিপন্ন করতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে এখনই নয়া দিল্লির সঙ্গে ঢাকার কথা বলা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

রাওয়াতের এমন মন্তব্যের পেছনে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক সেনা প্রধান।

রশিদ বলেন, মনে হচ্ছে তারা বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বাস্তু সমস্যা তৈরি করতে চায়, যা আরেকটি রোহিঙ্গা সংকটের রূপ নেবে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে সেনা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন রশিদ।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়, গত বুধবার জেনারেল রাওয়াত বলেন যে বাংলাদেশ থেকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ মানুষ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রবেশ করছে, যা চীনের সহায়তায় পাকিস্তানের পরিচলিত ‘প্রক্সি যুদ্ধ।’ এই অঞ্চলকে অশান্ত রাখতে এটা করা হচ্ছে।

রাওয়াত বলেন, ‘তারা সবসময় এই অঞ্চলটি দখলের জন্য চেষ্টা করেছে, এজন্য প্রক্সিযুদ্ধ চালানো হচ্ছে।’

আসামে ১৯৮০’র দশক থেকে বিজেপি’র তুলনায় বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধিন ‘অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে রাওয়াত বলেন যে এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতীয় সেনা প্রধান এমন এক সময় এই বক্তব্য রাখেন যখন আসামে অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিত করার জন্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) হালনাগাদ করা হচ্ছে।

রাওয়াত দাবি করেন যে বাংলাদেশে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং বন্যার কারণে অভিবাসন ঘটছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে রাওয়াতের বক্তব্যের ব্যাপারে দিল্লি’র কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া নিয়ে ঢাকায় অনানুষ্ঠানিকভাবে কথাবার্তা চলছে। অবশ্য তারা বিস্তারিত কিছু বলেননি।

বাংলাদেশের ব্যাপারে রাওয়াতের বক্তব্য সম্পর্কে মতামত জানতে চেয়ে নিউ এজ-এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর কাছে মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়।

তবে তাদের কেউই এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি।

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির বলেন যে বাংলাদেশ সরকার যখন উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে ‘ভারতের নিরাপত্তা ইস্যুগুলো থেকে শুরু করে সকল উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করেছে তখন বাংলাদেশ ‘প্রক্সি যুদ্ধে’ জড়িত বলে ভারতের বর্তমান সেনা প্রধানের মন্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত কবির বলেন, জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্য বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করায় সহায়ক হবে না।

ভারতীয় সেনা প্রধানের বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন কর্মরত সিনিয়র কূটনীতিক।

নয়া দিল্লি’র বাংলাদেশ হাই কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন একজন রাষ্ট্রদূত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘অত্যন্ত হাস্যকর একটি মন্তব্য।’

আরেক সিনিয়র কূটনীতিক বলেন, ‘জেনারেল রাওয়াত যে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন সে বিষয়ে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা নাহলে তুচ্ছ রাজনীতির কারণে দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।’http://bn.southasianmonitor.com

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।