সাতক্ষীরায় বোরো পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা *আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভবনা
* উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় কুষকরা
* চলতি সম্পাহে সারের দাম বৃদ্ধি
* কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতা না পেয়ে অসন্তোষ কৃষকরা
আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা সাতক্ষীরায় বোরো পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। আগাছা দমন,সেচ দেয়া,সার প্রয়োগ সহ পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা নানা মুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে উৎপান খরচ বেশি হওয়াতে কৃষকরা অনেটা দুশ্চিন্তায়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ধান চাষে লাভের মুখ দেখবে এমনটায় আশা কৃষকদের।
জেলা কৃষি খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে,চলতি মৌসুমে জেলাতে ৭৩ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবাদ হয়েছে আরো বেশি। অন্যদিকে উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৬২৬ মেঃটন।
চলতি সপ্তাহে মাঠ পর্যায়ে সারের দাম কেজি প্রতি এক-থেকে দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রান্তীক কৃষকরা জানান। অন্যদিকে পাইকারী ব্যবসায়ীদের দাবী চলতি সপ্তাহে বস্তা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি বলে সার ডিলারদের অভিযোগ।
বিঘা প্রতি ধানের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৭ হাজার টাকা। বাজার মুল্যে কৃষকরা বিঘা প্রতি ধানের দাম পান ১৮ হাজার টাকা। বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন না হলে কিছুটা হলেও কৃষকরা ধান চাষ করে মুনাফার মুখ দেখবে এমন তথ্য দিলেন কয়েক জন কৃষক।
জেলা খামারবাড়ি সূত্র মতে এবছর সাতক্ষীরা সদরে বোরোর আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে ধানের উৎপাদন ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৫১৭ মেঃটন। কলারোয়া উপজেলাতে আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। সব ঠিক থাকলে ধান উৎপান হবে ৪৮ হাজার ৭৮৫ মেঃটন। তালাতে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে । যার উৎপাদিত ধানের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৭৮ মেঃটন। দেবহাটাতে আবাদের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩০ হেক্টর এবং ধান উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ১৮৯ মেঃটন। কালিগঞ্জ উপজেলাতে আবাদের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদিত ধানের পরিমান ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৭৯৬ মেঃটন। আশাশুনিতে আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদিত হবে ২৭ হাজার ৫৪৪ মেঃটন। অন্যদিকে লোনা অধ্যুষিত শ্যামনগর উপজেলাতে বোরোর আবাদ হয়েছে ০১ হাজার ৩৮৬ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদিত ধানের পরিমান ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ মেঃটন।
বোরো রোপনের আগে বীজ তলা তৈরি করে কৃষকরা। জেলা খামারবাড়ি সূত্র মতে এবছর সাতক্ষীরা জেলাতে ৩ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমিতে বীজ তলা তৈরির লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয় ৪হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। সরবরাহ বেশি থাকায় বোরো ধানের অনেক চারা নষ্ট হয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
সার,ডিজেল,বিদ্যুৎ সহ ওষধের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে গত কয়েক বছর ধরে ধানের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ধান চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষকরা।
মুনছুর আলী(৫০),সাতক্ষীরা শহরের ৫নং ওয়ার্ডের মিয়াসাহেবের ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক। তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি এবছর দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছে। ধানের বাড়ন ও ভাল। তার ক্ষেত যেন সবুজের সমারহ। কিন্তু তার দুঃখ ধানের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তিনি জানান,বিঘা প্রতি তার উৎপাদন খরচ দাড়াবে ১৭ হাজার টাকা এর মধ্যে বিঘা প্রতি বীজতলা তৈরিতে খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। ১০কেজি বীজ,সার পানি,পাতা উঠানো বাবদ এসব খরচ করতে হয়েছে তাকে। এর পর জমিতে তিন চাষ,নয়শ টাকা,রোপন এক হাজার টাকা,সার ওষধ দুই হাজার টাকা,আগাছা দমন,ওষধ স্প্রে তিনশ টাকা,ধান কাটা পনেরশ টাকা,বহন-ঝাড়া বারশ টাকা,জমির হারি ছয় হাজার টাকা,পানি সরবরাহের জন্যে তিন হাজার টাকা তাকে দিতে হবে। তার এক বিঘা জমিতে ১৮ মন ধান পাবে বলে তিনি আশা করছেন।
তার মতে ধান কাটার মৌসুমে দাম বেশি থাকলে মণপ্রতি এক হাজার টাকা তিনি পেতে পারেন। এতে তার এক হাজার টাকা লাভ থাকবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে।
শহরের চালতে তলা এলাকার আজগর আলী(৬০)। সারা জীবণ ধরে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু ধানের উৎপাদন খরচ এত বেশি তিনি কখনো দেখিনি। তার অভিযোগ,ধানের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরণের পোকার আক্রমণ দেখা যায়,কিন্তু সরকারী ভাবে কোন কৃষি কর্মকর্তার দেখা পায়নি। কোন পরামর্শ দেয়ার কোন লোক তার কাছে কখনো আসেনি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা খামার বাড়ির কৃষি কর্মকতা উপপরিচালক আব্দুল মান্নান,জানান জনবল সংকটের কারণে সব কৃষকের কাছে পৌছানো সম্ভব হয় না। তবে বিভিন্ন প্রসপেকর্টাস, কৃষি মেলার আয়োজন সহ বিভিন্ন ভাবে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর সাতক্ষীরাতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী।– । ২৬/২/১৮