নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত সাতক্ষীরা পৌরবাসি*ধুলা বালির শহর সাতক্ষীরা

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা : প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হওয়ার পরও নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত সাতক্ষীরা পৌরবাসি। শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবার নামে হরিলুট। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ কিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আতœস্যাৎ। রাস্তা-ঘাট তৈরি,ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার সহ সড়ক সংস্কারের নামে বিপুল পরিমানে অর্থ অপচয় হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লক্ষাধিক মানুষ মৌলিক অধীকার থেকে বঞ্চিত। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, অপর্যাপ্ত পয়োনালা ঠিকমতো পরিষ্কার না করা এবং খালে পানি নিষ্কাশিত না হওয়া পৌরসভার এমন অবস্থা। দায়সারা ভাবে মেরামত করা হয়েছে বেশির ভাগ রাস্তা। বর্তমানে শহর ব্যাপি ধুলা আর ধুলা।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে,১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা পৌরসভা কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণী হিসেবে মর্যাদা পেলেও বর্তমানে পরিপূর্ণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার যে সুযোগ সুবিধা হওয়ার কথা তা নেই, নেই তেমন নাগরিক সুবিধাও। ৩১.১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ পৌরসভা ০৯ টি ওয়ার্ড ও ৪০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত।
শহরে পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অধিকাংশ পয়োনালা রাস্তার কাছে উঁচু এলাকায় হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার পানি গড়িয়ে যেতে পারে না। অন্যদিকে মোট পয়োনালার এক-পঞ্চমাংশ কাঁচা হওয়ায় সেগুলো দ্রুত মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হয় না। আবার শহরের দেড় কিলোমিটার পয়োনালার জন্য একটি করে কালভার্ট থাকায় সেগুলো দিয়ে পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হয় না।
পৌরসূত্র জানায়, শহরে পানিবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করা। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার কোল ঘেঁষে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার একজনের বাড়ি থেকে অন্যজনের বাড়ির প্রাচীর একই থাকছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ থাকছে না। পয়োনালা নির্মাণ করার জন্য পথ পর্যন্ত দেওয়া হয় না। ফলে পানি জমে যায়।
এছাড়া শ্যামনগর,কালিগঞ্জ সহ উপকুলীয় অঞ্চল বসবাসের অনুপোযোগী হওয়াতে পৌর এলাকাতে বসবাসের ভীড় পড়ছে। শহরে কাজের বন্ধানে নিন্ম আয়ের মানুষ প্রতিনিয়ত শহরের বিল অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলছে। তুলনা মুলক দাম কম হওয়াতে নিন্ম আয়ের মানুষের পচ্ছন্দের জায়গা শহরের বিল এলাকা। নিয়ম না মেনে জমি ক্রয়-বিক্রয় ও বসবাড়ি নির্মাণের কারণে এসব অঞ্চলে পানি সরানোর তেমন কোন পথ থাকছে না বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পয়োনালা ও কালভার্টগুলো পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিষ্কার করে না। ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে শহরের নিচু এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শহরের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়ের খালে গভীরতা না থাকায় পানি সরতে পারে না। ফলে পয়োনালার পানির সঙ্গে তা একাকার হয়ে যায়।
শহরের ইটাগাছা,কামাল নগর, মুন্সিপাড়া, রথখোলা, উত্তর কাটিয়া, রসুলপুর, বাকাল, পুরাতন সাতক্ষীরা, সুলতানপুর ও খড়িবিল এলাকার কিছু স্থানে সারা বছরই জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। ফলে পৌরসভায় বাস করেও এই এলাকার কয়েকটি পরিবারকে পানির মধ্যে বসবাস করতে হয়।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্ষায় পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায় তা সত্য। এটা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। আমরা পৌরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিছু এলাকায় পয়োনালা নির্মিত হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।’

সাতক্ষীরা জেলা শহরের অন্যতম সমস্যা ফুটপাত দখল। জেলা শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা পাকাপুলের (পাওয়ার হাউজ মোড় ) মোড়। সেখানে চলছে ফুটপাত দখলের যেনো মহাউৎসব। ব্রীজের ( পাকাপুলের মোড়ে ) দুই ধারের ফুটপাত পুরোটাই অবৈধ দখলদারের কবলে। বড় বাজারের ব্রিজটিও দখলদারদের কবলে। ফলে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সড়কটি জ্যামের কবলে পড়ে থাকে।
পাকাপুলের ব্রীজের ফুটপাত দখল করে তৈরী করা হয়েছে ফলের দোকান। অথচ ফুটপাত দখলের ফলে ব্যস্ততম ওই এলাকায় জানজট ভয়াভহ আকার ধারন করেছে।
সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, ‘পৌরবাসীর সেবার লক্ষ্যে আমি কাজ করছি। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে চেষ্টা করছি।
তিনি আরো জানান,শহরের পানিবদ্ধতা নিরশনে সরকারের কাছে বরাদ্ধ চেয়েছি। পর্যাপ্ত বরাদ্ধ পেলে পানিবদ্ধতা স্থায়িরূপে নিরাশন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন পৌরসভার প্রশাসনিক বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে ইতিমধ্যে নাগরিকের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, চলতি বছরে জার্মানি অর্থায়নে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এতে পৌরসভার সুপেয় পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার আধুনিকায়নসহ একটি আধুনিক ও সেবামূলক পৌরসভা উপহার দিতে পারবো। এছাড়া মার্চ মাস থেকে পৌরসভার অর্থায়নে শহরের প্রাণ সায়ের খালটি পরিচ্ছন্নতা করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে ।

Check Also

প্রত্যেক উপজেলায় একটি সরকারি মাদ্রাসা করার সুপারিশ: সাতক্ষীরা ডিসি

ক্রাইমবাতা রিপোট,  সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেছেন, যদি প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা সরকারি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।