রক্তাক্ত সিরিয়া : সংকটের শুরু যেভাবে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:বহুধাবিভক্ত বিভিন্ন পক্ষের বিভিন্ন স্বার্থের বিভিন্ন বাহিনীর বর্বরতা-নৃশংসতা আর চোখের পানিতে ভেসে যাওয়া এক জনপদের নাম সিরিয়া। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেন এর পথ ধরে সিরিয়া, বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের রক্ত ঝরা থামছেই না, বরং দিন দিন বাড়ছে।  পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে মুসলিম দেশগুলো। বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলিমদের আহাজারি আর কান্নায় পুরো পৃথিবীর আকাশ বাতাশ আজ ভারি হয়ে উঠেছে।

দীর্ঘ সাত বছর ধরে চলছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। ইতোমধ্যেই পাঁচ লাখ লোক নিহত হয়েছে, আরো অন্তত পাঁচ লাখ আহত হয়েছে, দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ। অন্তহীন যুদ্ধে যখন সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল, তখনই একটা সমাধান হাতের কাছে বলে মনে হচ্ছিল। রাশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশের এগিয়ে আশায় এই আশার সৃষ্টি হয়েছিল; কিন্তু তখনই আবার তীব্র হয়ে ওঠে সিরিয়া যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান এখন আসাদ সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তবে নতুন মাত্রা হলো প্রকাশ্যে ইসরাইলের আগমন। আসাদ বাহিনীর বিপক্ষেই তাকে দেখা গেছে। বিমান হামলা পর্যন্ত করেছে। সিরিয়া আবার ইসরাইলি সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করার কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও এখন স্বীকার করে নিচ্ছে।

সিরিয়ায় যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে তার এক পক্ষে আছে, সিরিয়ার বিগত ৪০ বছর ধরে শাসনকারী আলাওয়াইটস গোত্রের নেতৃত্বে বাথ পার্টি এবং তাদের সমমনারা, অন্য দিকে আছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা, যাদের মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার ৬০% জনগোষ্ঠীর সুন্নি জনগোষ্ঠী এবং তাদের সমমনারা।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, রাশিয়া এবং চীন সকল বিষয়ে সিরিয়ার সরকার বাসার আল আসাদ এর পক্ষে থেকেছে এবং আমেরিকা বা তাদের ইউরোপিয়ান বন্ধুরা জাতিসংঘে সিরিয়ার বিরুদ্ধে যত ধরনের প্রস্তাব এনেছে তার সব গুলোর বিরুদ্ধে তারা ভেটো দিয়েছে। আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রধান প্লাটফর্ম আরব লিগ শুরু থেকেই বিদ্রোহীদের পক্ষে ছিল। আরব লিগ ইতিমধ্যেই সিরিয়া সরকার এর মেম্বার-শিপ বাতিল করেছে এবং বিদ্রোহীদের প্লাটফর্ম সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশনকে মেম্বারশিপ দিয়েছে।

সিরিয়ার ডেমো গ্রাফিক্স এর মধ্যে ৬৯% সুন্নি। এর মধ্যে ৯% কুর্দি বাকী ৬০% আরবীয়। ১২.৮% আলাওয়াইটস আরব, ১৩% ক্রিস্টিয়ান তার মধ্যে ৯% অর্থোডক্স এবং ৪% আর্মেনিয়ান, ড্রুজ আরব ৩.২% এবং ইসমায়লি শিয়া ৩%।

আলাউই গোত্রকে ফরাসী শাসকদের ডাকা উচ্চারিত অপভ্রংশ থেকে আলাওয়াইটস নামটা এসেছে। ইতিপূর্বে তাদের নুসায়রী বলেই বেশি ডাকা হতো। নুসায়রী শব্দটা থেকে আলাউই শব্দটা বেশি গ্রহণযোগ্য কারণ আলাওয়াইটস শব্দটার মানে হজরত আলীর অনুসারী। বর্তমানে আসাদ এর বিরোধীরা, গালি দিতে গিয়ে আলাউইদেরকে নুসায়রী বলে ডাকে। শিয়া ধর্মে ১২ জন ইমাম এর একটা ধারা আছে যাদেরকে টুয়েল্ভার বা বারোদের অনুসারী বলা হয়। আলাউইদের ধর্মগুরু ইবনে নুসায়ের শিয়াদের ১২ জন ইমাম এর একজন।

সংকটের শুরু যেভাবে

২০১০ সালের ডিসেম্বরে যখন আরব বসন্তের আগমনে সারা আরব জাহান টালমাটাল, সিরিয়া তখন মোটামুটি শান্ত। অনেক গবেষক মনে করেছিলেন, সিরিয়াতে আরব বসন্তের প্রভাব পড়বেনা, কারণ সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থায় গত ৪০ বছর ধরে শক্ত কন্ট্রোল বজায় রেখেছে বাসার আল আল আসাদ এর নেতৃত্বে বাথ পার্টি। আর তাছাড়া সেখানে বাসার সেক্যুলার রাষ্ট্র কায়েম করায় অনেক সুন্নী মুসলিমেরও সমর্থন পেয়েছে।

যাই হোক, খুব সামান্য একটা ঘটনা থেকে সিরিয়াতে প্রটেস্ট শুরু হয়। ২০১১ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়। ১০/১২ জন ছেলে দেয়ালে সরকার বিরোধী চিকা মারার ঘটনার পর সরকারি বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে টর্চার করে। তার প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ হয় সেই বিক্ষোভে সরকারী বাহিনী ব্যাপকভাবে গুলিবর্ষণ করে। হতাহত হয় অনেক। কয়েকজন বিক্ষোভকারী মারা যায়। সেই সূত্র ধরেই বিক্ষোভ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পরে। বাসার আল আসাদ এর সরকারি বাহিনী ব্যাপক এগ্রেসিভ ভূমিকা নেয়। ফলে বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পরে এবং এপ্রিল মাসে আসাদ সারা দেশের শহরগুলোতে আর্মি এবং তার অনুগত সিক্রেট সার্ভিসকে মাঠে নামায়। যারা ট্যাঙ্ক , আর্টিলারি এবং হেলিকপ্টার গান-শিপ সহকারে দেশব্যাপী অপারেশন চালায়। মাত্র তিন মাসে ২০১১ সালের জুলাই নাগাদ প্রায় ১৬০০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয় আসাদ বাহিনীর হাতে।

এরপর ঘটনা প্রবাহ এত জটিল হয়েছে যে তার সঠিক হিসেব রাখা মুশকিল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, শহর দখল, দখল থেকে মুক্ত হওয়াসহ অনেক ঘটনার পালাক্রমে সাতবছরে প্রায় পাঁচ লক্ষ বিদ্রোহী গেরিলা, নিরীহ জনগণ, সরকারী সেনা এবং সরকারী সমর্থক নিহত হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা প্রথমে অগোছালো থাকলেও ধীরে ধীরে তারা টার্কি এবং সৌদি আরবের সাপোর্ট পেয়ে সংগঠিত হয় এবং সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সংগঠিত করে। বিরোধীদের মধ্যে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১২০ গ্রুপ এবং উপগ্রুপ তাদের নিজেদের মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব থাকলেও আপাতত বিদ্রোহীরা একত্রিত হয়ে একটি অর্গানাইজড ফোর্স গঠন করেছে যার নাম দেয়া হয়েছে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। ফ্রি সিরিয়ান আর্মিতে সিরিয়ান সরকার এর অনেক সৈন্য পক্ষ ত্যাগ করে যোগদান করে।

ফ্রি সিরিয়ান আর্মি

জুলাই ২০১১ সালে সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহীরা ফ্রি সিরিয়ান আর্মি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। এদের মূল লক্ষ্য ছিল সিরিয়ান বাসার সরকারের পতন। এই বিদ্রোহের ঘোষণার মধ্য দিয়েই সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলো। যদিও ২০১১ সালে বিক্ষোভের বেশিরভাগ অসাম্প্রদায়িক দল ছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সশস্ত্র সংঘাত ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেয়। সিরিয়ার অধিকাংশ সুন্নি মুসলমান। কিন্তু সিরিয়া আলাউই সম্প্রদায়ের দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে শাসিত হয়েছে, আর আল-আসাদ ঐ সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। অধিকাংশ সুন্নী জাতিগত বিরোধকে সামনে রেখে ফ্রি সিরিয়ান আর্মিতে যোগ দেয়।

১৯৮২ সালে বাশারের বাবা হামার মুসলিম ব্রাদারহুডের উপর এক সামরিক অভিযানের আদেশ দেয়। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। এর জের ধরে ব্রাদারহুডের কর্মীরাও ফ্রি সিরিয়ান আর্মিতে যোগ দেয়।

২০১১ সালের বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে গ্লোবাল ওয়ার্মিং একটি ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৭ থেকে ১০ সালে সিরিয়া তীব্র খরা জর্জরিত ছিলো। যার ফলে প্রায় দেড় মিলিয়ন মানুষ গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরগুলোতে স্থানান্তরিত হয়, যা দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতাকে ত্বরান্বিত করে। এর ফলশ্রুতিতে গরীব মানুষরাও ফ্রি সিরিয়ান আর্মিতে যোগ দেয়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে, সিরিয়ায় সামরিক বাহিনী আলেপ্পোতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার পর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তার সবচেয়ে বড় বিজয় অর্জন করে। তারপর থেকে FSA উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার সীমিত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি ফ্রি সিরিয়ান আর্মি কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আফরিনকে তুরস্ককে সাথে নিয়ে যুদ্ধ করছে।

বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ

প্রথমে শুধু হালকা অস্ত্র এবং মর্টার বা এই ধরনের অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করলেও ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ফ্রি সিরিয়ান আর্মি তুরস্ক থেকে প্রত্যক্ষ সাপোর্ট পায়। ২০১১ সালের অক্টোবরে সরকারি সেনাদের উপর ট্যাঙ্ক এবং হেলিকপ্টার সহযোগে প্রথম হামলা চালায় কোম শহর দখল করার জন্যে। এরপর থেকে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি দেশের অনেক অংশ দখল করে।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদেশী সমর্থন ও নগ্ন হস্তক্ষেপ বড় ভূমিকা পালন করেছে। রাশিয়া ২০১৫ সালে সংঘাতে প্রবেশ করেছে এবং আসাদ সরকার তখন থেকেই এর প্রধান সহযোগী ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া ইরান ও ইরাক সরকার এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ বাসার আল-আসাদকে সাপোর্ট করে। অন্যদিকে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যেমন, তুরস্ক, কাতার, এবং সউদি আরব আসাদ বিরোধী গোষ্ঠীকে সাপোর্ট করে।

২০১৬ সাল থেকে তুরস্কের যোদ্ধারা ইস্লামিক স্টেট অফ ইরাক এবং ISIL এর বিরুদ্ধে তাদের সীমান্তে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থনপুষ্ট কুর্দিশ বাহিনির বিরুদ্ধেও।

যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই অস্ত্র দিয়ে আসাদ বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সহযোগিতা করে। ২০১৪ সাল থেকে ISIL এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ পরিচালনা করে। অনেকে মনে করেন ISIL প্রতিষ্ঠা করে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মাধ্যমে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নিজেদের অনুপ্রবেশ নিশ্চিত করে।

ইসরাঈল সিরিয়ায় বোমা হামলা করে আসাদ সরকার ও হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। সিরিয়ান সেনাবাহিনী ইসরাঈলী বিমান ভূপাতিত করে।

২০১৩ সালে CIA আসাদের বিরোধিতা করে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র, তহবিল ও প্রশিক্ষণের জন্য একটি গোপন প্রোগ্রাম শুরু করে। কিন্তু প্রকাশিত হওয়ার পর এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে সিআইএ 500 মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। কিন্তু তারা প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছিল মাত্র ৬০ জন যোদ্ধাকে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়া সিরিয়ায় ফ্রি সিরিয়ান আর্মি ও ISIL কে “সন্ত্রাসী গোষ্ঠী” হিসাবে অভিহিত করে এদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা শুরু করে। রাশিয়া আসাদের প্রতিরক্ষার জন্য সামরিক উপদেষ্টা নিয়োগ করেছে।

ব্যর্থ শান্তি আলোচনা

সিরিয়ায় একটি সামরিক যুদ্ধবিরতি এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন অর্জনের জন্য সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু থেকেই অব্যাহতভাবে চলছে।

জেনেভা: ২০১২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে জাতিসংঘের সহযোগিতামূলক আলোচনার প্রথম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি পরিবর্তনশীল সরকারে আল আসাদের ভূমিকা কী হবে, এই আলোচনায় একমতে আসতে পারেনি বিধায় শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়।

আস্টানা: ২০১৭ সালের মে মাসে রাশিয়া, ইরান এবং তুরস্ক সিরিয়া মধ্যে সমঝোতা হয় একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরী হওয়ার ব্যাপারে। যেখানে সিরিয়ার এবং রাশিয়ান যুদ্ধ বিমান ওড়া নিষিদ্ধ হয়েছিল।

সোচি: ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে সিরিয়া সরকার আলোচনার প্রস্তাব দেয় কৃষ্ণসাগরের নিয়ন্ত্রনের বিষয়ে। কিন্তু বিদ্রোহী গ্রুপগুলো সেই শান্তি আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে।

লাখ লাখ শরনার্থীর বিভিন্ন দেশে আশ্রয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চাইতেও বেশি সময় ধরে চলছে এই গৃহযুদ্ধ। দীর্ঘ সময়ের কারণে মানুষ সিরিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাবে, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) সিরিয়ায় ৫.৫ মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থীকে নিবন্ধিত করেছে। আনুমানিক ৬.৫ মিলিয়ন অভ্যন্তরীণভাবে শরনার্থী হয়েছে।

লেবানন, জার্মানি, ইরান এবং তুরস্ক সিরিয়ান শরনার্থীদের আশ্রয় দেয়। তাদের অনেকে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে আরো ভালো সুবিধা পাওয়ার জন্য। ২০১৭ সালে ৬৬ হাজার শরণার্থী সিরিয়াতে ফিরে আসে।

বর্তমান পরিস্থিতি

আসলে সিরিয়া পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার সরাসরি সম্পৃক্ততায়। বিমান, নৌ ও স্থল সব বিভাগেই সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়া। তখন সিরিয়াই ছিল মধ্যপ্রাচ্যে ভালোভাবে পা রাখার একমাত্র স্থান রাশিয়ার কাছে। সেটি তারা হারতে চাইছিল না। আবার ইরান মনে করেছিল, সিরিয়ার পতন ঘটলে, সে মিত্র হারাবে। এই প্রেক্ষাপটে ইরান ও রাশিয়ার সরাসরি অংশগ্রহণের ফলে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক ও সৌদি আরব-সমর্থিত বিদ্রোহীরা বেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। এই গত ডিসেম্বরে আলেপ্পোর পতন ঘটলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটটি ভয়ঙ্কর আঘাত পায়।

তবে এখন সব পক্ষই বুঝতে পেরেছে, সামরিকভাবে সিরিয়া সঙ্কটের সমাধান হবে না। সমাধান করতে হবে আলোচনার টেবিলে বসে। কিন্তু শান্তি আলোচনার ভিত্তি কী হবে? আরব বসন্তের সময় আসাদ ছিলেন বেশ কোণঠাসা। যেকোনো মুহূর্তে রাজধানী দামেস্কের পতন হতে পারে বলে ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি মুখরক্ষা করে কেটে পড়তেও প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বারাক ওবামা সেটা মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হয়তো সেটা হয়ে যেত। কিন্তু ইরান, রাশিয়া এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ যে সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে, সেটা ওবামাদের হিসাবের মধ্যে ছিল না।

যতই দিন গেছে, আসাদের শক্তি বেড়েছে। এখন তারা বেশ শক্ত অবস্থানে। আবার নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখন কী করেন তা বোঝার উপায় নেই। তবে এটা সত্য, তিনি ওবামার মতো সিরিয়া নিয়ে ভাবতে নারাজ। এতে করে এত দিন সিরিয়ায় যেসব গ্রুপ মার্কিন সহায়তায় ভালো অবস্থায় ছিল তারা বেশ সমস্যায় পড়ে যায়।

এমন প্রেক্ষাপটেই এখন তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়েছে সিরিয়া। শান্তি আলোচনায় নিজ নিজ গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য ভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। আর এ কারণেই সবাই লড়াই তীব্র করতে চাইছে। আলেপ্পো থেকে বিদায় নেয়ার পর আসাদবিরোধীরা এখন অন্যান্য স্থানে হামলা জোরদার করতে চাইছে; কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছে।

এদিকে রাশিয়াও তার ঘাঁটির সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না। যুদ্ধের মধ্যেই আসাদ সরকারের সাথে তারা চুক্তি করে নিচ্ছে। ইরান তার প্রভাব বৃদ্ধির প্রক্রিয়াতে সচেষ্ট। অন্যদিকে তুরস্কও সিরিয়ার দিকে নজর দিয়েছে। তবে যুদ্ধের শুরুতে তুরস্ক ছিল প্রচণ্ডভাবে রুশবিরোধী। কিন্তু এখন পুতিনের সাথে এরদোগানের চমৎকার বোঝাপড়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই বোঝাপড়াও সিরিয়া যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।