ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: সাতক্ষীরায় গত এক মাসে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। এর আগে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় এ সংখ্যা ছিলো ১৮ জন। ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাতক্ষীরায় খুন হয়েছে ৮ জন, আত্মহত্যা করেছে ৬ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০ জন, পানিতে ডুবে মারা গেছে ৬ জন, বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে প্রাণ হারিয়েছে ২ জন। এছাড়া একটি পরিবহন থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় গত একমাসে খুন হয়েছে ৮জন। সূত্রমতে, চলতি সালের ২৭ জানুয়ারি বেলা ২টার দিকে জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার তারালিতে লীমা পারভিন (১৯) নামের এক গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় শাশুড়ি জাহানারা বেগম। ৩ ফেব্রুয়ারি অগ্নিদগ্ধ লীমার মৃত্যু হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি জেলার আশাশুনি উপজেলার বেতনা নদীর চর থেকে ইসরাফিল হোসেন বুড়ো (১৮) নামের এক ব্যক্তির ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন শহরের সঙ্গীতা মোড় থেকে একটি পরিবহন থেকে পুলিশ হবিগঞ্জের ফিরোজ হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে। ১০ ফেব্রুয়ারি জেলার শ্যামনগর উপজেলার কালিন্দী নদীর চর থেকে আবু বক্কর সিদ্দিক (১৯) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে কাাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গণি গাজীর ছেলে। ১২ ফেব্রুয়ারি দেবহাটার ইছামতি সীমান্ত নদীর চর থেকে ঝিনাইদহের যাদবপুর গ্রামের আবু মূছার ৫বছরের শিশু কন্যা মুন্নি আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর দুদিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি মুন্নির মা রিক্তা বেগমের লাশ কালিগঞ্জের কালিন্দি নদীর চর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ১৩ ফেব্রুয়ারি সদরের বকচরায় বাইপাস সড়কে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্স স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র পুলিশ পুত্র সাকিব (১৫) কে তুচ্ছ ঘটনায় নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মাত্র ১০০ টাকার জন্য চাচাতো ভাই আবু সাইদের হাতে খুন হন কলারোয়ার হেলাতলার হাসানুর রহমানের ছেলে ভ্যানচালক ন্তবেল হোসেন (২৮)। একইদিন পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বামী সাদ্দাম হোসেনের হাতে খুন হন শহরতলীর কুখরালি এলাকার সোনিয়া খাতুন। আর্থিক লেনদেন, পরকীয়া ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এসব খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে পুলিশ ও এলাকাবাসির ধারণা।
পুলিশ জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০জন। সূত্রমতে, ৩ ফেব্রুয়ারি তালায় মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় বাপ্পি (২৭) ও আতাউর রহমান (৩০) নামে দুজন নিহত হয়। ৫ জানুয়ারি সদরের আলিপুরে ট্রাক চাপায় নিহত হন আহমদ আলি (৫৫) নামের এক ব্যক্তি। ৭ ফেব্রুয়ারি সদরের ছয়ঘরিয়া মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুল মজিদ (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। ১০ ফেব্রুয়ারি জেলার দেবহাটায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিত্যপদ সরকার (৪০) নামে এক দুধ ব্যবসায়ি নিহত হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিনেরপোতায় সড়ক দুর্ঘটনায় আগরদাড়ির আহমদ আলি (৫৫) নামে এক ব্যক্তি আহত হয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সেখানেই তিনি মারা যান। ২২ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগরের ট্রাক উল্টে আবুল হোসেন (৫৫) নামে এক এনজিওকর্মী নিহত হন। ২৪ ফেব্রয়ারি পাটকেলঘাটায় দুই ট্রাকের মুখোমখি সংঘর্ষে চালকের হেলপার লিটন (৩৫) নিহত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি কলারোয়া পৌর মেয়রের ভাইপো ইমন যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি সদরের আলিপুরে রবিউল ইসলাম নামে এক হলুদ ব্যবসায়ি নিহত হয়।
পুলিশ ও এলাকাবসির দেয়া তথ্যমতে, জেলায় গত একমাসে আত্মহত্যা করেছে ৬ জন। সূত্রমতে, ৩১ জানুয়ারি তালার মাগুরায় রিপা খাতুন (১৪) নামে এক স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করে। একই দিন পাটকেলঘাটার লালচন্দ্রপুরে রাবেয়া বেগম (৫৬) নামে এক নারী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ৪ ফেব্রুয়ারি শ্যাম নগরের মথুরাপুরে সুরাইয়া খাতুন (১৮) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করে। ৬ ফেব্রুয়ারি জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা চৌমুহনী এলাকায় আবুল হোসেন বাবু নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি পাটকেলঘাটার কুমিরায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অনুপম পাল সাম্য নামের এক স্কুল ছাত্র। সে বন্তণ পাল ও শিখা চৌধুরির ছেলে। ২৫ ফেব্রুয়ারি কালিগঞ্জে পিংকি সরকার (২১) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
এদিকে, গত একমাসে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৬ জন। সূত্র জানায়, ৩১ জানুয়ারি জেলার শ্যামনগরে পানিতে ডুবে মারা যায় আইরিন (৪) নামের এক শিশু। ১৩ ফেব্রুয়ারি কলারোয়ায় বেত্রাবতী নদীর পানিতে ডুবে তাহমিদ (৫) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। একই দিন পাটকেলঘাটার যুগিপুকুরিয়ায় পানিতে ডুবে আরফাজ (২) নামে এক শিশু মারা যায়। ১৯ ফেব্রুয়ারি কালিগঞ্জের পুটিয়ায় পানিতে ডুবে মা আছিরণ (৮০) ও তার প্রতিবন্ধী মেয়ে আলেয়া খাতুন (৫৫) মারা যায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি কালিগঞ্জে মোহনা (২) নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে।
এছাড়া ২৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে সদরের ফিংড়ীতে আলাউদ্দিন নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। এর আগে কালিগঞ্জে সফেদ আলি শিকারী নামের এক ব্যক্তি বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। এছাড়া বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগিরা।
এদিকে পুলিশ গত একমাসে জেলায় বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সহ¯্রাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি শহরের নারকেলতলা এলাকা থেকে অস্ত্রসহ খুলনার দুই অস্ত্র ব্যবসায়িকে আটক করে র্যাব-৬ এর সদস্যরা। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশ ৫০ রাউন্ড গুলিসহ আনসার উল্যাহ বাংলা টিমের দুই সদস্যকে আটক করে বলে দাবি পুলিশের। এছাড়া গত একমাসে মাদক বিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির অভিযানে আটক হয়েছে বিপুল পরিমান চোরাচালান পণ্য।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …