ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার বিকেলে তার সাথে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিনিয়র নেতাদের সাক্ষাতের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারের বাইরে পুলিশি ব্যারিকেডের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এই কথা জানান।
তিনি বলেন, দেশনেত্রীর সাথে আলাপ করে আমরা এটুকু বুঝতে পেরেছি, তার মনোবল অত্যন্ত উঁচু আছে। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিকূল পরিবেশকে মোকাবিলা করছেন। এই কারারুদ্ধ অবস্থায় তিনি দেশের জন্যই চিন্তা করছেন। সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি মনে করেন। আমরা মনে করি যে, সত্য একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে কোনো উস্কানিতে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে দলকে নির্দেশনাও দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে দলীয় প্রধানের কাছে সাক্ষাতের জন্য পত্র দিয়েছিলাম। তারা আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ মোট ৮ জন সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন। বিকেল সোয়া তিনটার সময়ে আমরা দেশনেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছি। সাড়ে ৪টায় এই সাক্ষাৎ শেষ হয় বলে জানা যায়। মির্জা ফখরুলসহ অন্য নেতৃবৃন্দ কারাগারে প্রবেশ করেন পুলিশী ব্যারিকেড থেকে পায়ে হেঁটে। আবার কারাগার থেকে সাক্ষাতের পর পায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসেন পুলিশী ব্যারিকেডের কাছে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে গাড়িতে উঠেন তারা।
এরআগে বিকেল ২টা ৫০ মিনিটে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৭ সদস্য পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। প্রতিনিধি দলের অন্যরা হলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এম বি এম আবদুস সাত্তার।
কারাগারে বেগম জিয়া ‘সুস্থ আছেন’ জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) দেশবাসীকে জানাতে বলেছেন, তিনি অটুট আছেন, তার শরীর ভালো আছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বেআইনিভাবে সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি মামলা দিয়ে তাকে যে কারা অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে এবং এখন বিভিন্ন কারসাজির মধ্য দিয়ে, ছলচাতুরির মধ্য দিয়ে তারা কারাবাসকে দীর্ঘ করবার চেষ্টা করছে। এর সবকিছুই দূরীভুত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আইনী লড়াইয়ের সাথে সাথে আমাদের রাজনৈতিক যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামও চলছে তাকে মুক্ত করা ও গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবার জন্যে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দল এখন যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। দেশনেত্রী কারা অন্তরীণের পর থেকে আমরা একটা যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালনা করছি, আন্দোলন পরিচালনা করছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত যিনি চেয়ারম্যান রয়েছেন তার সঙ্গে পরামর্শ করেই আমরা সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি ।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের মন্তব্য এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া কি বলেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, এসব হচ্ছে সরকারের উসকানি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে তারাই পরিকল্পিতভাবে উসকানি দিয়ে অশান্তি করবার পায়তারা করছে। কিন্তু দেশনেত্রী আমাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, কারো উসকানিতে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য যে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হলে তাকে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাবাসের একমাসের মাথায় সিনিয়র নেতারা তার সাথে দেখা করার সুযোগ পেলেন। এরআগে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, স্ত্রী কানিজ ফাতিমাসহ পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন।
এর বাইরে আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান ও এ জে মোহাম্মদ আলী গত ১০ ফেব্রুয়ারি খালেদার সাক্ষাৎ পেলেও বিএনপির অন্য সিনিয়র নেতারা সে সুযোগ পাননি।
বেগম জিয়ার সাথে সাক্ষাতের পর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্য আলাপকালে নয়া দিগন্তকে বলেন, কারাগার কোনো শান্তির জায়গা হতে পারেনা। তবে খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলার সময় তাকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
তিনি মানসিকভাবে শক্ত আছেন। কারাগারে থাকলেও তিনি চলমান আন্দোলন সংগ্রামের খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিশেষ করে যেসব নেতাকর্মী কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে সফল করছে তাদের ব্যাপারে তিনি ওয়াকিবহাল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিএনপি নেতৃবৃন্দ খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলার সময় কারা কর্তৃপক্ষের লোকও পাশে উপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে।