নাজমুল আলম মুন্না,সাতক্ষীরা: আজ ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস।বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় সাতক্ষীরা জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় জেলা অফিসার্স ক্বাবের সামনে হতে এক বর্নাঢ্য রেলি আরম্ভ হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়। রেলিতে নেতৃত্ব প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। রেলি পরবর্তী এক আলোচনা সভায় জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তারাময়ী মুখার্জীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরার সংরক্ষিত নারী আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মিসের্স রিফাত আমীন।
নারী-পুরুষ সকলের জন্য এক বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস। চলতি বছর জাতিসংঘ ঘোষিত নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তারা বদলে যাচ্ছে গ্রাম শহরের কর্মজীবন ধারা’।
নারী দিবসের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। ঊনবিংশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের নারী শ্রমিকরা কারখানার মানবেতর জীবনযাপনের পরিবেশ, বেতন বৈষম্য এবং অনির্দিষ্ট শ্রম ঘণ্টার মতো অমানবিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের সুই কারখানার নারী শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ করেন। কারণ ওই সময় ১২ ঘণ্টারও বেশি তাদের কারখানায় খাটতে হতো, কোনো বিশ্রামের অবকাশও ছিল না। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারনে তাদের ওপর পুলিশি নির্যাতন নেমে আসে। ১৮৬০ সালে নারী শ্রমিকরা ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’ গঠন করে অধিকার আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯০৮ সালে ১৫ হাজারের বেশি নারী শ্রমিক ৮ ঘণ্টা কর্মসময়, ভোটের অধিকার ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে নিউইয়র্কে রাজপথে আন্দোলন করেন। শ্রমিকদের সঙ্গে অন্য নারীরাও বিক্ষোভে যোগ দেন। ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে সোশ্যাল ডেমোক্রেট নারী সংগঠন আয়োজিত সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নারীর ন্যায্য অধিকারের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন ক্লারা জেটকিন। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ ঘোষণা করে ১৯১১ সাল থেকে দিবসটি পালনের আহ্বান জানান। এই সম্মেলনে ১৭ দেশ থেকে শতাধিক নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। নারী-পুরুষ সমঅধিকারের দাবিতে এরপর থেকেই দিবসটি বিভিন্ন দেশে পালন করা হচ্ছে। ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথম বিভিন্ন দেশে নারী দিবস পালন করা হয়। প্রথমদিকে মূলত বামপন্থীরাই দিবসটি পালন করতেন। ১৯১৪ সালে সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে নারী দিবস পালন করা হয়। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারী দিবস সাড়ম্বরে পালন করা হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং ১৯৭৫ সালকে ‘নারী বর্ষ’ ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’ প্রণয়ন করে।
আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম ও জাম্বিয়ায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সরকারি ছুটি থাকে। চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার ও নেপালে এদিন নারীরা সরকারি ছুটি ভোগ করেন।
স্বাধীনতা পূর্বকালে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে নারী দিবস পালন করা হয় ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় পূর্ব পাকিস্তান মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নারী দিবস পালন করা হচ্ছে।