আইএমইডির প্রতিবেদন মাঝপথেই শেষ ৩০২ প্রকল্প! বরাদ্দ অর্থ পুরো ব্যয় হয়নি * নতুন প্রকল্প পেতে পুরনোগুলো সমাপ্ত ঘোষণা করা হতে পারে – ড. জাহিদ হোসেন

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:পুরো টাকা খরচ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ৩০২টি উন্নয়ন প্রকল্প। ফলে প্রকল্পগুলো থেকে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও মাঝপথে বন্ধ করে দেয়ায় প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দৈন্যদশা ফুটে উঠছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে- সম্ভাব্যতা যাচাই ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা না করেই প্রকল্প হাতে নেয়ায় এমনটি হচ্ছে। গত অর্থবছরের (২০১৬-১৭) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা করতে গিয়ে এসব প্রকল্পে অসঙ্গতি পেয়েছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

আইএমইডি সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বুধবার বলেন, কোন প্রকল্পগুলোর পুরো অর্থ ব্যয় করা হয়নি তার সঠিক কোনো কারণ এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। একেকটা প্রকল্পের ক্ষেত্রে একেকরকম কারণ থাকতে পারে।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এরকমভাবে পুরো অর্থ ব্যয় না করেই প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণার ঘটনা বিরল। বরং বারবার যেটি হয় প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ে। যদি এ রকম হয়ে থাকে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে সেগুলো তেমন কোনো কাজেই আসছে না। তাই প্রকল্পভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে দেখা উচিত। অনেক সময় নতুন প্রকল্প পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো পুরনো প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করতে পারে। তাছাড়া পুরো কাজ শেষ না করলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না।

আইএমইডির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোর মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের বিপরীতে আর্থিক অগ্রগতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এ অবস্থা দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে হয়তো প্রকল্পের মাঝপথে বাস্তবায়নের প্রয়োজন হয়নি। আবার দেখা যায় প্রাক্কলিত ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে। কিংবা প্রকল্পের মাঝপথে জটিলতা দেখা দেয়ায় বাকিটা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ রকম নানা কারণ রয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৭১০টি। এর মধ্যে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ৩৪৬টি প্রকল্প ও চলমান রয়েছে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের এডিপিতে যোগ হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি প্রকল্প। মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ অর্থব্যয় করে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ৭টি প্রকল্প। এছাড়া মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হওয়া ২৯৮টি প্রকল্পের মধ্যে গত অর্থবছরে ২৯টি প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ৭৬ থেকে ৮৯ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি সম্পন্ন ১৯৪টি প্রকল্পের মধ্যে গত অর্থবছরে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ৭৪টি প্রকল্প। আর বাকি ১২০টি প্রকল্প সংশোধন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে ২৬৯টি প্রকল্পে। এর মধ্যে গত অর্থবছর সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ১৯২টি প্রকল্প। অবশিষ্ট ৮৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। সব মিলিয়ে ৩০২টি প্রকল্প পুরো অর্থ ব্যয় না করে মাঝপথে শেষ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত অর্থবছরে এডিপিতে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩১৫টি প্রকল্প। কিন্তু অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে শেষ করা হয় ২৩৪টি প্রকল্প। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে না থাকলেও ১০৩টি প্রকল্প ওই অর্থবছরে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ফলে মোট সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪৬টিতে। এগুলোর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৬৭টি প্রকল্পের। বাকি ১৭৯টি প্রকল্পের কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকলেও নানা কারণে সেগুলোকে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের এলপিজি ইসপোর্ট, ‘স্টোরেজ অ্যান্ড বোতলিং প্লান্ট অ্যাট মোংলা’ নামের প্রকল্পটি ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ২১০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রতিবেদনটি তৈরির সময় পর্যন্ত ব্যয় হয় মাত্র ১ কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। গত অর্থবছর প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়াইডিং অব দ্য স্ট্রিট অ্যান্ড ফুটপাতস অব দ্য ডিফারেন্ট এরিয়াস অব চিটাগাং সিটি নামের প্রকল্পটি ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২৯৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত মোট ব্যয় হয় ৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৩৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ অবস্থায় সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড সার্ভিস নামের প্রকল্পটি ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৩৩৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ২২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়ায় ৬৭ দশমিক ৪১ শতাংশ আর বাস্তব অগ্রগতি হয় ৮৯ শতাংশ। এ অবস্থায় গত অর্থবছর এটিও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া লক্ষ্য পূরণ না করেই সমাপ্ত ঘোষিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও তদারকি প্রকল্প, জাতীয় পুষ্টি সেবা (এনএনএস), নারী অধিকার আইনের প্রচার ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, মিয়ানমারের নাগরিক জরিপ-২০১৫ প্রকল্প, মনিটরিং দ্য সিচ্যুয়েশন অব ভাইটাল স্টাটিসটিকস অব বাংলাদেশ, ইনভেসমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (আইপিএফএফ), এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অফিস বিল্ডিং নির্মাণ, নারী অধিকার সুরক্ষা ও বাস্তবায়ন, পাচার প্রতিরোধ ও তদারকি, ঔষধ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা সংস্কার, খাতভিত্তিক কর্মসূচি ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও মূল্যায়ন এবং মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে শাহজীবাজার গ্যাসফিল্ড ও ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা রক্ষা তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প। যুগান্তর

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।