ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:জেলখানায় এক মাস পার করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত মাসের ৮ তারিখ একটি মামলায় কারাদণ্ডের পর জেলে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন কারা অন্তরীণ হওয়া পর তার সেজোবোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর ও তার স্ত্রী ফরিদা কানিজ একাধিকবার তার সাথে কারাগারে দেখা করেছেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়া সুস্থ রয়েছেন। তার বেশির ভাগ সময় সময় কাটছে পত্রিকা ও বই পড়ে।
কারাগারে কেমন আছেন খালেদা জিয়া? তার অনুপস্থিতিতে দল কিভাবে চলছে? এসব নিয়ে সাধারণ মানুষজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আগ্রহ রয়েছে ব্যাপক। বুধবার খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সাত নেতা। তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার কারাবাস নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে।
৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার কারাগারে নেয়া হলেও প্রথম তিন দিন খালেদা জিয়াকে ডিভিশন প্রদান করা হয়নি বলে দলের সিনিয়র আইনজীবীরা অভিযোগ করেন। ওই তিন দিন আদালতের আদেশ থাকলেও তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগমকেও সেখানে রাখা হয়নি। তবে আদালতের আদেশে খালেদা জিয়ার সাথে এখন রয়েছেন ফাতেমা বেগম।
৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নানা রকমের ওষুধ সেবন করতে হয় নিয়মিতই। সে জন্য খাবারের মেনুতে রয়েছে বাদ-বাছাই।
আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কারাগারে তার খাবার রান্না হচ্ছে। যখন স্বজনেরা যান কিছু খাবার নিয়ে গেলেও তা পরীা করে তাকে দেয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল দলীয় প্রধান কারাগারে কেমন আছেন? জবাবে তিনি বলেছেন, ‘দেশনেত্রীর মনোবল অত্যন্ত উঁচু। তিনি সাহসিকতার সাথে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করছেন। তিনি দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম উনার (খালেদা জিয়া) শরীর নিয়ে। কিন্তু গতকাল তার সাথে আমরা দেখা করে মনে হয়েছে, উনি মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ় আছেন, সুস্থ আছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে গত এক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এসবের মধ্যে রয়েছে বিােভ, মানববন্ধন, অবস্থান, গণঅনশন, গণস্বার, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ। এর বাইরে তারা ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করার কর্মসূচিও নিয়েছে, যদিও এসব কর্মসূচির অনুমতি পাওয়া যায়নি।
কারান্তরীণ হওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। তারেক লন্ডনে অবস্থান করায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের যৌথ নেতৃত্বে দল চলছে। প্রতিদিনই তারেক রহমান টেলিফোনে নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দল এখন যৌথ নেতৃত্বে চলছে। দেশনেত্রী কারান্তরীণ হওয়ার পর থেকে আমরা একটা যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালনা করছি, আন্দোলন পরিচালনা করছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রয়েছেন, তার সাথে পরামর্শ করেই আমরা সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সরকার যত ছলচাতুরী করুক না কেন, যত কৌশল করুক না কেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন চালিয়ে যাবো, আমরা আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনব।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তার আইনজীবীরা। আগামী রোববার জামিন শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘ফিরোজা’য় নীবরতা : খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ এখন একেবারেই নীবর। কেউ বাসায় যায় না। তবে বাসভবনে নিরাপত্তা প্রহরী ও ভেতরে কর্মীরা সবাই আছেন। বাসভবনের একাধিক কর্মীর বক্তব্য হচ্ছে, ম্যাডাম নেই, বাড়িটা একেবারেই খালি। ম্যাডামের লাগানো ফুলের বাগান রয়েছে। সেগুলো আমরা প্রতিদিন পরিচর্যা করি।