ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জাল নথির মাধ্যমে সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেয়া গভীর চক্রান্তেরই অংশ। দেশনেত্রীর কারামুক্ত হওয়া বিলম্বিত করাও সরকারের কারসাজি।
আজ রোববার বিকেলে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন-ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশীদের সাথে দেনদরবার করছে। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের উদ্দেশে বলতে চাই-বিএনপি হলো এদেশের জনগণের দল, জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় যেতে বিশ্বাসী। সুতরাং বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিদেশীদের কাছে দেনদরবার করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। যেসব অনুষ্ঠানে সরকারের একজন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা গেলেই চলে সেখানে খোদ সরকার প্রধান হাজির হচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই- বিদেশীদের মন জয় করা।
রিজভী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে যেভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হয়েছিল আবারো সেরকম একটি ভোটারবিহীন দখলি ইলেকশন করা সম্ভব হবে না বলেই এখন থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ টের পাচ্ছেন। সারা দুনিয়া বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। দীর্ঘদিন ধরে ভোট দিতে না পেরে এদেশের আপামর জনসাধারণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে বদ্ধপরিকর। জনগণের মনের ভাব বুঝতে পেরে সরকার এখন দিশেহারা হয়ে উঠেছে। আরেকটি দেশী-বিদেশী মাস্টারপ্ল্যানের নীল নকশার নির্বাচন করতে এখন তারা বেপরোয়া।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অন্ধকারময় পর্ব। এখানে মানুষের স্বর স্তব্ধ। বিএনপিসহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার আয়োজন চলছে। রাষ্ট্রীয় মদদে গোয়েন্দা পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপির শন্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর। গণমাধ্যমের মাথার ওপর ঝুলছে ধারালো তরবারি। সভা-সমাবেশ পুলিশের আকস্মিক আক্রমনের শিকার। মুক্তকন্ঠ এখন মানুষ ভুলে যেতে শুরু করেছে। তথ্য জানার অধিকার আইন করে বন্ধ করা হয়েছে, নাগরিক স্বাধীনতার গলা টিপে ধরার জন্য। গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভুত হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতনের পৈশাচিকতা ওবায়দুল কাদের সাহেবের আওয়ামী গণতন্ত্রের নমুনা। আসলে ওবায়দুল কাদের সাহেবের দাবি এদেশের জনগণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে অপমান করা।
রিজভী বলেন, ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের বাণী গুমরে গুমরে কাঁদছে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ায় প্রধান বিচারপতির মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দেশ থেকে শিফট করে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ আওয়ামী লীগের আতঙ্ক। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে স্বাধীন বিচার বিভাগ বিরানভূমিতে পরিণত হয়। বিকৃত আইনি প্রক্রিয়াসহ বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের মতো ভয়ঙ্কর অনাচার করা হয়েছে শুধু বিএনপি চেয়ারপার্সনকে গায়ের জোরে কারাগারে আটকে রাখার জন্য। আগামী নির্বাচনে একতরফাভাবে জেতার জন্য।
তিনি বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের সবচেয়ে বড় ভয় হলো জনগণ। আর তাই যেকোনো জনসমাগম দেখলেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামীকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি’র জনসভার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের নিকট আবেদন করা হলেও এখনো পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতির বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করা হয়নি। জনসভার জন্য বিএনপি যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। অথচ এখন প্রায় চারটে বাজছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো কিছুই জানানো হচ্ছে না। দেশের কোথাও জনসভা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করা যাচ্ছে না। অনুমতি দিতে গড়িমসি, ১৪৪ ধারা জারি এবং কোথাও কোথাও সংকীর্ণ স্থানে অনুমতি দেয়া হলেও সেখানে নেতাকর্মীদের আসতে ব্যাপক ধরপাকড় করা হচ্ছে। জনসভা করতে বাধা দেয়া, বিএনপি কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে দমন-পীড়ণকে আঁকড়ে ধরা হচ্ছে শুধুমাত্র আগামী নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য। আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে রয়েছে, আজকে রাতের মধ্যে যখনি অনুমতি দেয়া হোক আমরা আগামীকালের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা সফল করতে সক্ষম হব।