পুলিশের ভাবমুর্তি আগের চেয়ে একটু ভালো তবে মানুষের মধ্যে পুলিশ ভীতি অনেক:এমপি লুৎফুল্লাহ** নিরীহ মানুষ যাতে পুলিশি হয়রানি হচ্ছে: সদর এমপি*সাধারণ মানুষ শান্তিতে নেই:জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি*সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে:জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান* জেলার সাবিক উন্নয়নে সকলের সহযোগীতা চাচ্ছি: জেলা প্রশাস*আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক দিনে ভালো করা সম্ভব না:পুলিশ সুপার
ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:জেলা মাসিক আইন ও শৃঙ্খলা বিষয় অনুষ্ঠিত সভায় সদর-২ আসনের এমপি মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি বলেন, বাইপাসের কাজ পুরে গতিতে চলছে। আগামি জুন মাসের আগে বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। নিরীহ মানুষ যাতে পুলিশের দ্বারা যাতে হয়রানি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সদর হাসপাতালে ৫৫ জন বিনা বেতনে কাজ করে। তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ১০ টাকার ওষুধ ৫০০ টাকায় বিক্রি করে। শহরে নতুন সড়ক বেশী উচু হওয়ার করণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এবিষয়ে সড়ক ও জনপদকে দ্রুত সমাধান করার নির্দেশ দেন। ভোমরা রোডে ১০টি গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পরও তারা গাড়ি চালাতে পারছে না এটা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে। ভৌতিক ও দেরীতে বিল দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোর্ট চত্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ফলক থেকে তিনজন অমুক্তিযোদ্ধার নাম মুছে ফেলে দ্রুত এটি জেলাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
তালা-কলারোয়া-১ আসনের এমপি এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, পুলিশের ভাবমুর্তি আগের চেয়ে একটু ভালো হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এত পুলিশ ভীতি এখনও কাটেনি। সেটি না কাটিয়ে উঠতে পারলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের অর্থদাতারা যদি প্রশাসনকে কিনে ফেলে, তাদের গাড়িতে চড়ে, প্রশাসন তাদের বাসায় যেয়ে খায় সেটা ভাল দেখায় না। কপোতাক্ষ খননের সঙ্গে টিএরএম এর আওতায় পড়া জমির মালিকরা অনেকেই ক্ষতিপূরণতো পায়নি আরা তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৬ জন মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় বিশ্বাসী মানুষকে হত্যার ঘটনায় মামলা, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলাসহ গাছকাটা, গাড়ি পোড়ানো, বাড়ি পোড়ানো মামলাগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি জানা দরকার।
প্রতি মাসে সভা হয়, ফলোআপ হয়না। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর থেকে বিচারকদের সভায় পাওয়া যায় না। ফলে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করলেও তাড়াতাড়ি জামিন পাওয়ায় তারা আরো উৎসাহিত হওয়ার বিষয়টি জানানো যায়না। এতে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তালার গ্রামপুলিশ ও দফাদাররা সাত মাস বেতন পায় না। তাদের বেতন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া ঠিকাদাররা বিদ্যুতের খুটি দেওয়ার নামে যে টাকা নিচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। মাদক ও জঙ্গিবাদত শেষ হবে না। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কপোতাক্ষ দু’তীরের মাটি ভাটায় কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাই তাল গাছ রোপন বৃথা হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নাজুক অবস্থা দূর করতে হবে। মেলাল নামে জুয়া ও নগ্ন পুতুল নাচ বন্ধ করতে হবে। আগামি ২৬ মার্চের আগে কোর্ট চত্বরের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধ থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে একটু উন্নতি হলেও সাধারণ মানুষ শান্তিতে নেই। পুলিশি হয়রানি এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বিদ্যুতের গ্রাহকরা সঠিক বিল পাচ্ছে না। মাঝে মাঝে অনেকের বাড়িতে ভৌতিক বিল দেওয়া হচ্ছে। কোলকাতা খাল ও স্লুইস গেট সংস্কার করার দাবি জানান। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ চিন্তা করা যায় না। আর যারা বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে কাজ করবে তাদের পাকিস্তানে চলে যেতে হবে। চোরাচালান ও মাদক কম হলেও সেটা পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। এটি নির্মূল হওয়া দরকার।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শহরে দিন দিন চুরির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শহরের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ভীত হয়ে পড়েছেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস বিকৃত বই বাতিল করে প্রকাশক, লেখক ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্বাস সুদেব কুমার, সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা বাড়ছে। এতে আমরা উদ্বিঘœ। এটা বন্ধ না করা গেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।
বিজিবির ১৭ ব্যাটালিয়নের উপাধিনায়ক মেজর মামুন বলেন, সম্প্রতি সীমান্তবর্তী নদীতে বেশ কয়েকটি লাশ পাওয়া গেছে। বিএসএফ’র সাথে একাধিকবার বৈঠক করে জেনেছি তারা এখন মানুষ মারে না। অনেক মানুষ ঝুকি নিয়ে কাজের সন্ধানে নদী সাতরে ভারতে যেতে যেয়ে নদীতে ডুবে মারা যাচ্ছে। সীমান্তে চোরাচালান, মাদক পাচার ও নারী-শিশু পাচার বন্ধ প্রতিরোধে টহল বাড়ানোর পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি আবু আহম্মেদ বলেন, ছফুরন্নেছা কলেজ, মর্নিং সান প্রিক্যাডেট স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরি হলেও মামলা হয়নি। জিডি হয়েছে। এটি দু:খজনক। বিগত সভায় পাঞ্জেরী গাইড ও নোটবুকসহ কয়েকটি বইতে বঙ্গবন্ধুর নাম না থাকার বিষয়টি উপস্থাপিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পৌর কাউন্সিলর শফিক উদ দৌলা সাগর বলেন, শহরে বেওরাশিক কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে কুকুরের কামড়ে খেয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করে। এছাড়াও বেওয়ারিশ লাশ দাফনের খরচ পৌরসভার পক্ষে বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু বলেন, বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা ভাল করতে হবে। আগামি ২৫ মার্চ বিএনপি নেতা আলতাফ হত্যা মামলার বাদি আব্দুর রহমান যাতে সাক্ষ্য দেয় তার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
পূজা উদযাপন পরিষদের মনোরঞ্জন মুখার্জী বলেন, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, তাদের জমি দখল, মন্দির ও শ্মশানের জায়গা দখলের ঘটনা বাড়ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক দিনে ভালো করা সম্ভব না। তবে অপরাধ কমাতে জেলা পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ অপরাধ করলেও কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। গত মাসে ৫জন পুলিশকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। অপরাধের প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাধারণ মানুষ পুলিশি হয়রানির শিকার হয়ে সরকারের ভোট কমবে। সেখান থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দুরে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আলতাফ হত্যা মামলার বাদিকে আগামি ধার্য তারিখে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সব ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন চলতি মাসের সকল জাতীয় দিবস পালনে সকলের সহযোগীতা কামনা করে বলেন, বাস্তবায়ন প্রতিবেদন প্রতিমাসে নিয়ে আলোচনা করা হবে। তালার গ্রাম পুলিশদের বেতন প্রদানে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলা গ্রামার বই পরীক্ষা নিরিক্ষা করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রোববার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বাইপাস সড়ক, পুলিশি হয়রানি, কোর্ট চত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ফলক থেকে অমুক্তিযোদ্ধার নাম মুছে ফেলে, ভৌতিক ও দেরীতে বিদ্যুৎ বিল, লোডশেডিং, বিদ্যুতের খুটি দেওয়ার নামে টাকা আদায়, শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
নবাগত জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সদর আসনের এমপি মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, তালা-কলারোয়া-১ আসনের এমপি এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহম্মেদ, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্বাস সুদেব কুমার, ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মামুন, প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক আবু আহম্মেদ, পৌর কাউন্সিলর শফিকুদ্দৌলা সাগর, তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফফারা তাসনীন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তহমিনা খাতুন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ^জিৎ সাধু, পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনোরঞ্জন মুখার্জী, সড়ক ও জনপদের সহকারী প্রকৌশলী জিয়া প্রমুখ।