স্টাফ রিপোর্টার : আজ মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতার মাস মার্চের ত্রয়োদশ দিবস। উনিশশ’ একাত্তর সালে অসহযোগ আন্দোলনের এই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র পরিস্থিতি ক্রমাগত উত্তপ্ত হতে থাকে। ঊর্ধ্ববাহুর বজ্রমুষ্ঠি আর গগনবিদারী শ্লোগান, মিছিল, সভা-সমাবেশ তো প্রতিদিন প্রতিস্থানেই হচ্ছে। তার সাথে সাথে পাড়া, মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, মফস্বল শহরে এমনকি খোদ ঢাকা নগরীর সর্বত্রই সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হচ্ছিলো। যুবা-বৃদ্ধ, ছাত্র-শ্রমিক, কৃষক সকলেই সেই পরিষদের সদস্যরূপে নিজেদের নাম লেখাচ্ছেন। গ্রামের দিকে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে সবাই যুদ্ধ করার ট্রেনিং দিচ্ছিলেন, নিচ্ছিলেন। অবস্থাটা তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ও বাঁশের লাঠির প্রতিরোধ সংগ্রামের যে কাহিনী ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে তার মতোই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে তৈরি আধুনিক মারণাস্ত্রের সামনে এই বাঁশের লাঠি কতক্ষণ টিকবে সেটি বড়কথা নয়, বড়কথা হচ্ছে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলা। বাঙালি যোদ্ধা জাতি নয় বলে পাকিস্তানীরা এতোদিন যে অবহেলা দেখাচ্ছিলো তার সমুচিত জবাবদানে নিজেদের গড়ে তোলাই যেন লক্ষ্য। এটি যেন শক্তির নব উত্থানের যাত্রা এবং সেই অভিযাত্রা যুদ্ধজয়ের জন্যই। স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত জাতির ওপর পাকিস্তানীদের আর প্রভুত্বের কোনো লক্ষণই নেই সারা বাংলাদেশে। মাত্র কয়েকটি ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছে পাকিস্তান সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। ক্যান্টনমেন্টগুলোর বাইরে সর্বত্রই বাংলাদেশ।
ক্যান্টনমেন্টগুলোর প্রধান ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১৩ মার্চ একটি সামরিক ফরমানে বলা হয়, ‘প্রতিরক্ষা ব্যয় বরাদ্দ তথা দফতর থেকে যেসব বেসামরিক কর্মচারীকে বেতন দেয়া হয় তাদের আগামী ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে কাজে যোগদান করতে হবে। যারা এই ফরমান মোতাবেক কাজে যোগদান করতে ব্যর্থ হবেন তারা ‘দেশের শত্রু’ বলে গণ্য হবেন এবং এই অপরাধের জন্য তাদের চাকরি তো যাবেই। সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হতে পারেন।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত বেসামরিক কর্মচারীরাও পহেলা মার্চ থেকে কাজে যোগদানে বিরত থেকে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। এদিন মস্কোপন্থী পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি খান আবদুল ওয়ালী খান ঢাকায় এসে পৌঁছান মুক্তিকামী মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার জন্য। ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের পর সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে তিনি অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত শেখ মুজিবুর রহমানের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তিনি একটি বিবৃতি দেন। এই সময় তার সাথে ছিলেন পাকিস্তান ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক গাউস বক্শ বেজেঞ্জো। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীও এদিন টাঙ্গাইলের সন্তোষ থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে অবিলম্বে শেখ মুজিবের চার দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান।
Check Also
বিজয় দিবসে বিএনপির দিনব্যাপী কর্মসূচি
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে …