সাতক্ষীরায় খেসারি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা* অর্জিত হয়নি আবাদের লক্ষ্য মাত্রা

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা :চাহিদা কম থাকায় সাতক্ষীরায় খেসারি ডাল উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।এক যুগ আগেও খেসারি ডাল উৎপাদনে সাতক্ষীরার বেশ সুনাম ছিল। গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ প্রতি দিনের খাবারে অংশ হিসেবে খেসারি ডাল খেত। খেসারির ছাতু ভাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হত। তবে খেসারি ডালের ‘খেচুড়ি’র কদর এখনো। এ ডালে লেথারিজম নামক রোগ হয় এমন অভিযোগ তুলে সাধারণ মানুষের মাঝে খেসারি ডাল খাওয়া একেবারে হ্রাস পেয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলাতে খেসারির লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে।
সদরে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ২৫০ হেক্টর জমিতে অথচ অর্জিত হয় মাত্র ৯০ হেক্টর জমিতে। কলারোয়াতে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ৪৫ হেক্টর জমিতে অথচ অর্জিত হয় মাত্র ২০ হেক্টর জমিতে। তালাতে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ৯৫ হেক্টর জমিতে ,অর্জিত হয় মাত্র ১০৪ হেক্টর জমিতে।
দেবহাটাতে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ৮ হেক্টর জমিতে ,অর্জিত হয় মাত্র ৫ হেক্টর জমিতে। কালিগঞ্জে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ১৪২০ হেক্টর জমিতে ,অর্জিত হয় ১৩৪০হক্টর জমিতে। আশাশুনিতে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ৩ হেক্টর জমিতে,অর্জিত হয় মাত্র ০১ হেক্টর জমিতে। শ্যামনগরে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয় ৬২৯ হেক্টর জমিতে,অর্জিত হয় মাত্র ৬০০ হেক্টর জমিতে।
কয়েক বছর আগেও মাঘ-ফাগুন মাসে ধুঁ ধুঁ মাঠে খেসারিতে একাকার হয়ে যেত। অনেকে আগুনে পুড়িয়ে খেসারি খেতে ভাল বাসতো। খেসারি ডাল ভাজা যেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের একটি অবিচেচ্ছদ অংশ। এখনো খেসারি ডাল দিয়ে বিভিন্ন চপ,পেয়াজু,বেগুনি,পাপোর সহ বিভিন্ন ধরণের মুখরুচি খাবার তৈরি করা হয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম খেসারি ডালে খাদ্যশক্তি ৩২৭ ক্যালোরি,আমিষ ২২.৯ গ্রাম চর্বি ০.৭ গ্রাম শর্করা, ৫৫.৭ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯০ মিলিগ্রাট ফসফরাস ৩১৭ মিলিগ্রাম এবং লোহা ৬.৩ মিলি গ্রাম বিদ্যমান।
পরিবেশ বাদীরা বলছে গ্রীণ হাউজ এফেক্ট এর কারণে আগামিতে বিনা চাষের ফসলের দিকে মনযোগ দিতে হবে। যাতে পরিবেশে ক্ষতিকর তেমন কোন প্রভাব না পড়ে। সেই দিক দিয়ে খেসারির ডাল অন্যতম। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বিনা চাষ ও সারা ওষূধ ছাড়াই এই ফসলটির উৎপাদন করা সম্ভব।
মাঠ পর্যায়ে কয়েক জন কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। তারা জানান, কৃষকদের খেসারির ডাল সম্পসারণের লক্ষ্যে পরামর্শ দিচ্ছে। যে কারণে গত তিন-চার বছর জেলাতে খেসারির ডালের আবাদ বাড়ছে।
খলিষখালীর মঙ্গলানন্দকাটী গ্রামের সৈয়িদ শেখ জানান, এখান থেকে ২০ বছর আগে ৫-৬ বিঘা জমিতে খেসারির চাষ করতাম। এখন এক থেকে দুই বিঘা জমিতে খেসারির চাষ করি। এমন অবস্থা জেলা ব্যাপি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা খামার বাড়ির কৃষি উপপরিচালক আব্দুল মান্নান জানান,আমরা কৃষক দের খেসারি চাষে উদ্ধুদ্ধ করতে নানা মুখি পদক্ষেপ নিয়েছি। খেসারির রোগ বালাই কম । চাষীরা যাতে খেসারী চাষে আগ্রহী হয় সে বিষয়ে কৃষিকর্মকর্তারা চাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।