আজ মুক্তিকামী মানুষের ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মাস মার্চের চতুর্দশ দিবস, বুধবার

স্টাফ রিপোর্টার : আজ মুক্তিকামী মানুষের ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মাস মার্চের চতুর্দশ দিবস, বুধবার একাত্তরের এদিন সকালে পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি, বিশিষ্ট মস্কোপন্থী রাজনীতিক খান আবদুল ওয়ালী খান আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের সংগঠক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে ওয়ালী খান বলেন, ‘শেখ সাহেব ৭ মার্চ যে চার দফা দাবি দিয়েছেন, এগুলো আমাদেরও দাবি। আমরা সর্বোতভাবে এগুলোকে সমর্থন করি। আমরা চাই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ ও তার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।’ এদিকে শেখ মুজিব তার নিয়মিত প্রেসব্রিফিংকালে বলেন, ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে তার সাথে আলোচনায় বসতে চাইলে তিনি সে আলোচনায় যোগদানে প্রস্তুত রয়েছেন। তবে তৃতীয় পক্ষ এতে অংশ নিতে পারবে না।
এদিন ঢাকায় সকল দৈনিক পত্রিকায় ‘সমস্যা সমাধানে সময় উৎরে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে একযোগে সম্পদকীয় প্রকাশিত হয়। যা সাংবাদিকতা জগতের ইতিহাসে এক অসাধারণ বিরল ঘটনা। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ মুজিব বলেন, আপনারা পরিস্থিতি লক্ষ্য করুন এবং অপেক্ষা করুন। আমি আন্দোলনেই আছি। আমার এই অসহযোগ আন্দোলন সংকটের নিরসন না হওয়া পর্যন্ত চলবে। এদিন তিনি ৩৫ দফা নয়া নির্দেশনা জারি করেন। এই নির্দেশনায় বাংলাদেশের প্রশাসন কীভাবে চলবে তার একটি রূপরেখা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এদিন এক নতুন নির্দেশ জারি করেন। গত সপ্তাহের মতো সচিবালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হরতাল অব্যাহত থাকবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। শেখ মুজিবের দেয়া চার দফা দাবির সমর্থনে এদিনও প্রদেশব্যাপী হরতাল, সভা-মিছিল হয়। বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন ‘হেলালে ইমতিয়াজ তমঘা’ সাম্মাননা বর্জন করেন। তিনি বলেন, ‘জনগণকে যেভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তার প্রতিবাদে আমি এ খেতাব বর্জন করছি।’ বাংলাদেশের বাইরে রসদ পাচার বন্ধের লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খুলনা শহরে মহিলারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে এবং রাজপথে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা মুক্ত ও স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার পক্ষে শ্লোগান দেয় এবং কালো পতাকা ও প্ল্যাকার্ড বহন করে। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদও এদিন ক’দফা নির্দেশ জারি করে। ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও শাজাহান সিরাজ স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে জেলা ও থানা পর্যায়ের সংগ্রাম কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়, যেন তারা স্ব-স্ব এলাকায় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে যুদ্ধের ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। এদিকে করাচীতে জুলফিকার আলী ভুট্টো এদিন এক জনসভায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ছয় দফা স্বাধীনতা হাসিলের জন্য সুপরিকল্পিত। সংকট অতিক্রম করার এখনও সময় রয়েছে। আমার দল ছয় দফার তিনটি ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছে। আমি শেখ মুজিবের সাথে আলোচনায় প্রস্তুত।’ অন্যদিকে বদরুদ্দীন আহমদ তার ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের নেপথ্য কাহিনী’ শীর্ষক গ্রন্থে বর্ণণা করেন, ‘ইয়হিয়া ও ভুট্টো ঢাকা আসেন ১৪ মার্চ। ইতোমধ্যে মমতাজ দৌলতানা, কাইয়ুম খানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা এসে উপস্থিত হয়েছেন। আলোচনা চলতে লাগলো। শেখ মুজিবের ঐ এক কথা, ছয় দফা মেনে নিতে হবে। ছয় দফা প্রশ্নে আমরা আপস করতে পারি না। আলোচনার অগ্রগতি দেখে মনে হয়েছিলো, মীমাংসা হয়ে যাবে। ভুট্টোর পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টি। উচ্চাভিলাষী এই ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু সারা পাকিস্তানে শেখ মুজিবের দল সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায় শেখ মুজিবই পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান হবেন। এই সত্য মেনে নিতে জুলফিকার আলী ভুট্টোর কষ্ট হচ্ছিলো। তাই পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার প্রথম ধাপে তিনি দুই অংশের জন্য দুটি পৃথক শাসনতন্ত্রের কথা বললেন। ভুট্টোর এহেন উক্তিতে দেশের বুদ্ধিজীবীরা বিস্মিত না হয়ে পারেননি সেদিন। যেকোনো প্রকারে ভুট্টো সেদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। ছয় দফা বাস্তবায়িত হলে ভুট্টোর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ ছিলো না, কিন্তু দুই শাসনতন্ত্রে তার পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

Check Also

বিজয় দিবসে বিএনপির দিনব্যাপী কর্মসূচি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।