বাসস:সরকার নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আজ ‘রাষ্ট্রীয় শোক দিবস’ ঘোষণা করেছে। সোমবার বিমান বিধ্বস্তের ওই ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: নজিবুর রহমান এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের জরুরি বৈঠকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালনের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’
তিনি বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ দিনব্যাপী জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এ ছাড়া বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের রূহের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য শুক্রবার সারা দেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জা এবং প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা সভা পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভবিষ্যতে এ জাতীয় বিমান দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং এয়ারলাইন্স অপারেটরদের যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন বিষয়ক নিরাপত্তা আইন অনুসরণ করার কথা বলেন তিনি।
নজিবুর রহমান বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সার্বিকভাবে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আরো দক্ষতা অর্জনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিমান বিধ্বস্তের এই ঘটনাকে ‘আমাদের জন্য বড় একটি দুর্ঘটনা’ উল্লেখ করে দেশবাসীকে এ মুহূর্তে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিমানের যাত্রী, পাইলট ও ক্রু এবং পরিকল্পনা কমিশনের দুই কর্মকর্তাকে ‘আমাদের মেধাবী সন্তান’ উল্লেখ করে তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া রোগীদের বাংলাদেশে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকায় দুর্ঘটনায় দগ্ধ নেপালি নাগরিকদের এ দেশে চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
নজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পদহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন, যা সিঙ্গাপুর থেকে প্রেরিত তার ভিডিও বার্তায় প্রতিফলিত হয়েছে এবং তিনি বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন।
মুখ্য সচিব বলেন, নেপাল থেকে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সোমবার বিকেলে কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণকালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে বিমানের কমপক্ষে ৫০ জন আরোহী নিহত হন। নজিবুর রহমান জানান, বৈঠকে বিমান দুর্ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়।
মুখ্যসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করে যৌথভাবে দুর্ঘটনাপরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুই দেশের কর্তৃপক্ষের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করতে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, নিহতদের শনাক্ত করতে পুলিশের একটি বিশেষজ্ঞ দল কাঠমান্ডু যাবে। তারা ডিএনএ পরীক্ষা করে নিহতদের লাশ নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, বৈঠকে আহতদের চিকিৎসার জন্য কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ থেকে একটি মেডিক্যাল টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ দু’জন গুরুতর আহত যাত্রীকে আরো ভালো চিকিৎসার জন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ দিকে হতাহত যাত্রীদের আত্মীয়স্বজনদের বহনকারী একটি বিমান নেপালে পাঠানো হচ্ছে। মুখ্যসচিব জানান, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী শাহজাহান কামাল বর্তমানে কাঠমান্ডুতে রয়েছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয় সমন্বয় করছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের তথ্য দিচ্ছেন। তিনি ঢাকায় ফিরে আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
নজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমানবাহিনী প্রধান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্টদের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়।