দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় ৩৬০ কোটি টাকা মূল্যের বোরো উৎপাদনে নেমেছে কৃষক

খুলনা অফিস : চালের ঘাটতি পোষাতে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখতে দক্ষিণাঞ্চলের বিল জুড়ে বোরো আবাদ। এ মাসের শেষ দিকে ধানের শীষ উঁকি দেবে। কৃষকের ভাষায় শীষ দেখলেই বিশ দিন পরে ধান কাটা শুরু। এ লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ লাখ কৃষক নবেম্বর থেকে বোরো আবাদে ব্যস্ত। সার, সেচ ও কীটনাশক দিয়ে বালাই দমন করতে দিনরাত শ্রম দিচ্ছে কৃষক। এ মওসুমে দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় ৩৬০ কোটি টাকা মূল্যের বোরো উৎপাদনে নেমেছে কৃষক। এ অঞ্চলের জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল।

নবেম্বর থেকে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়। মওসুমের শুরুতেই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বীজের দাম ছিল তিনগুণ। এ ধাক্কা কাটিয়ে বীজতলা শুরু হলেও ধারাবাহিক কুয়াশার কারণে কোল্ড ইনজুির ও ব্লাস্ট নামক রোগে আঘাত করেছে রোপা ধানক্ষেত। ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রোপন চলে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। শৈত্যপ্রবাহে বীজতলার গতি থেমে যায়। এরপর চড়া মজুরির শ্রমিক দিয়ে রোপণ ও পরিচর্যা চলে ফেব্রুয়ারি ব্যাপী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, এবারে খুলনায় ৫৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর, বাগেরহাটে ৫৬ হাজার ৬৫ হেক্টর, সাতক্ষীরায় ৭৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর এবং নড়াইল জেলায় ৪৬ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি চালের মূল্য ৪০ টাকা হিসেবে উৎপাদিত চালের মূল্য দাঁড়াবে ৩৬০ কোটি টাকা। গেল মওসুমে এ অঞ্চলের চার জেলায় দুই লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে নয় লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়।

স্থানীয় চাষীরা জানান, সময়মত উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এছাড়া চাষের পদ্ধতি (পার্চিং) ডাল পোতা আলোক ফাঁদ, সময়মত সার বীজ প্রাপ্তি, সেচের ব্যাবস্থা গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাঠে গিয়ে হাতে কলমে কাজ দেখিয়ে দেয়ার ফলে ফলন ভাল হয়েছে।

খুলনার তেরখাদা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ জানান, ২০ শতক জমিতে ব্লাস্ট নামক রোগ দেখা দিয়েছে। ব্লাস্ট প্রতিরোধের জন্য ছত্রাকনাশক নাটিভো, ব্লাস্টিং, ফিলিয়া ও ধুমকেতু নামক কীটনাশক মজুদ রাখতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উপজেলার নলিয়ারচর, সাচিয়াদহ, ছাগলাদহ ও কুশলা এলাকায় এবার আবাদের পরিমাণ বেশি।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, দশ হেক্টর বোরো ক্ষেত ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা আক্রান্ত ক্ষেত পরিদর্শন করে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করার জন্য গবেষকরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। এ উপজেলার ব্লাস্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বাগেরহাটের ফকিরহাটে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোতাহার রহমান জানান, চলতি বোরো আবাদ মওসুমে ৮.৬০০ হেক্টর জমিতে ইরি বোর ধানের চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ৫৯০০ হেক্টর এবং উপসী জাতের ২৭০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর দুইশ’ হেক্টরের অধিক জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হচ্ছে। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আবাদ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা কৃষকদেরকে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। এছাড়া তাদেরকে চাষের পদ্ধতি বিষয়ে পরামর্শ প্রদান, (পার্চিং) ডাল পোতা গ্রহণ, আলোক ফাঁদ দেয়া, সময়মত সার বীজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা ছাড়াও জমিতে সেচের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় চলতি বোরো মওসুমে ফসল ভাল দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে আমাদের আবাদ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাশাপাশি উচ্চ ফলনসহ লক্ষ্যমাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

নড়াইল জেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় রায় জানান, কালিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। জেলার তিন উপজেলায় ৪০ হাজার হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। দুই লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদী। জেলার গুদামে সোমবার পর্যন্ত ৯৮০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৫৮৩ মেট্রিক টন টিএসপি, ৪৮০ মেট্রিক টন ড্যাপ এবং ৫৭৭ মেট্রিক টন এমওপি মজুদ রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের দেয়া তথ্য অনুযায়ি জেলায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে উফশী জাতের এবং ১৫ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদের দিক থেকে জেলা সদর, তালা ও কলারোয়া শীর্ষে রয়েছে। পোকার আক্রমণ ও ব্লাস্ট দেখা দেয়নি বলে তিনি অভিমত দিয়েছেন।

Check Also

আশাশুনির কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ধ্বস।।আতঙ্কিত এলাকাবাসী

আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিতএস,এম মোস্তাফিজুর রহমান(আশাশুনি)সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।।আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের মাসিক রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।