টালমাটাল মার্চ মাসের অষ্টাদশ দিবস আজ রোববার

স্টাফ রিপোর্টার : টালমাটাল মার্চ মাসের অষ্টাদশ দিবস আজ রোববার। একাত্তরের এই সময়ে মুক্তিকামী মানুষের দুর্বিনীত বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে পাকিস্তানী শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। তবে এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যকার কোনো আলোচনা হয়নি। ইয়াহিয়া খান তার উপদেষ্টা পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এআর কর্নেলিয়াস, মেজর জেনারেল পীরজাদা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সাথে সকাল ১১টায় এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে শেখ মুজিবের চার দফা দাবির বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আহ্বানে সেদিন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হামিদও রাওয়ালপিন্ডি থেকে ঢাকায় আসেন এবং বিকেলে তিনি প্রেসিডেন্ট হাউজে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করে এই আলোচনায় যোগদান করেন। বৈঠক চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। এই বৈঠকে বিচারপতি এআর কর্নেলিয়াস এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার আগে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। কারণ তখন কোন্ আইনের ভিত্তিতে দেশ চলবে। এখন তো কোনো সংবিধান নেই। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্টকে হয় আইয়ুব খানের ১৯৬২ সালের সংবিধান, যা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চ সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা গ্রহণের সময় বাতিল করেছিলেন। নতুবা ১৯৩৫ সালে বৃটিশ সরকার কর্তৃক জারিকৃত ভারত শাসন আইনের কতিপয় ধারা পুনরুজ্জীবন করতে হবে। বর্তমান মুহূর্তে তার কোনোটাই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় শেখ মুজিবের চার দফা দাবির প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্টকে বলতে হবে আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসুক, তারপর সেখানে এ দাবি আলোচনা হবে এবং প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদে যা অনুমোদিত হবে তা অনুমোদন করবেন। ২৫ শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা হয়েছে। শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ যেনো তাতে যোগদান করেন। এদিকে শেখ মুজিব তার ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘অ্যাসেম্বলী কল করেছেন, আমার দাবি মানতে হবে। প্রথম সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে, গণহত্যার তদন্ত করতে হবে, সকল সেনাবাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে আর জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর আমরা বিবেচনা করে দেখাবো যে আমরা অ্যাসেম্বলীতে বসতে পারবো কি পারবো না। এর আগে আমরা অ্যাসেম্বলীতে বসতে পারি না।’ এ বক্তব্য দেয়ার পর শেখ মুজিবের পক্ষে চার দফা দাবি না মানা পর্যন্ত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করা সম্ভব নয় এবং সেই কারণেই ২৫ তারিখে ডাকা জাতীয় পরিষদের অধিবেশন তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এদিন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দর নায়েকের কাছে পাঠানো এক টেলিগ্রাম বার্তায় পাকিস্তানী বিমানকে কলম্বো বিমানবন্দরে জ্বালানি সংগ্রহ করতে না দেয়ার আবেদন জানান। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেশব্যাপী সেনাবাহিনীর শ্বেত সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, নিরস্ত্র বেসামরিক কর্মচারীরা সৈন্যদের হাতে প্রতিদিনই নিগৃহীত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। শেখ মুজিব ১৭ই মার্চ সামরিক কর্তৃপক্ষের ঘোষিত তদন্ত কমিশন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, জনগণের পক্ষ থেকে আমি যে দাবি জানিয়েছি, ঘোষিত তদন্ত কমিশন যে তা পূরণ করতে পারবে না কমিশনের প্রকৃতি দেখেই বুঝা যায়। সামরিক আদেশ বলে এর গঠন এবং সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে এর রিপোর্ট পেশের ব্যবস্থা দুটোই অত্যন্ত আপত্তিকর। এ দিন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বের সকল জনগণের সমর্থন কামনা করে।
এদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে ঢাকা আগমনে তার অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে বলেন, প্রেসিডেন্টের ১৬ মার্চের অনুরোধক্রমে তিনি যদি ঢাকা আসেন তবে তাতে বিশেষ কোনো ফলোদয় হবে না। মরহুম শেরেবাংলার পতœী বেগম একেএম ফজলুল হক এক বিবৃতিতে কালবিলম্ব না করে শেখ মুজিবের চার দফা দাবি মেনে নিয়ে শুধু গণতন্ত্রের দিশারী না, প্রিয় পাকিস্তানের ত্রাণ কর্তারূপে সুনাম করার জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহবান জানান।

Check Also

বিজয় দিবসে বিএনপির দিনব্যাপী কর্মসূচি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।