সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ জনগণের অর্জন, তারাই দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়া সাধারণ মানুষের অর্জন, তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে- সরকার শুধু পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের স্বপ্নপূরণ করায় জাতির পক্ষ থেকে দেয়া সংবর্ধনার জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই স্বীকৃতি অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নপূরণে আরও একধাপ এগিয়েছে দেশ। যারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা মেনে নিতে পারেনি, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।

সরকারের নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার নানা দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছিলাম গ্রাম থেকে উন্নয়ন।

শেখ হাসিনা তার সরকারের নানা সফলতার কথা তুলে ধরে বলেন, নিজের জন্য নয়, জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নই আমার রাজনীতি।

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আজ স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করার অঙ্গীকার আজ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। বিদ্যুতের উন্নতির জন্য বেসরকারি খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উৎসব অনুষ্ঠানে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এর পর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করায় ডাকটিকিট, ৭০ টাকার স্মারক মুদ্রা এবং উন্নয়ন আলোকচিত্র অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সামরিক সচিব। স্পিকারের পক্ষ থেকে আবদুর রাজ্জাক, মাহবুব আরা গিনি ও রফিকুল ইসলাম; প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী; মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে অর্থ, পররাষ্ট্র ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও শুভেচ্ছা জানান। ১৪ দলের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, রাশেদ খান মেনন; মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকেও।

পরে ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও এডিবির প্রধান।

এর পর বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের পক্ষে শুভেচ্ছা জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, উইমেন চেম্বারের সভাপতি সেলিমা আহমেদ, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

শিক্ষাবিদদের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শুভেচ্ছা জানান।

মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও আশালতা বৈদ্যসহ অন্যরা।

সাংবাদিক সমাজের পক্ষে অভিনন্দন জানান জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান ও শাহনাজ বেগম।

কবি ও সাহিত্যিকদের পক্ষে শুভেচ্ছা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান ও শিশু একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। শিল্পী সমাজের প্রতিনিধি দলে ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, আবুল হাশেম খান ও আতাউর রহমান।

আইনজীবীদের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বাসেত মজুমদার ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষে শুভেচ্ছা জানান ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ প্রতিনিধিরা।

খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মারিয়া মান্দা, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা।

শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পর্ব শেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরুর পর উন্নয়নের এ স্তরে উত্তরণ এবং জাতিসংঘের সুপারিশপত্র গ্রহণ পর্যন্ত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

ডকুমেন্টারির মূল বক্তব্যে বলা হয়েছে, একটি সুখীসমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তার অবর্তমানে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সেই সোনার বাংলা গড়তে বিরামহীনভাবে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ছুঁয়ে গেছে শহর থেকে গ্রাম। শুধু অবকাঠামোই নয়, উন্নয়নের সেই ছোঁয়া লেগেছে আর্থ-সামাজিক সব খাতেই। আর সব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দর্শনের ফলে।

এদিকে বিকাল ৩টায় রাজধানীতে বের হবে বর্ণাঢ্য র‌্যালি। ঢাকা শহরকে ১৩টি জোনে ভাগ করে নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজ নিজ উদ্যোগে র‌্যালি রাজধানী প্রদক্ষিণ করবে।

সান্ধ্যকালীন কর্মসূচিতে রাখা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে সমবেতরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করবেন। অনুষ্ঠানে ৫-৭ মিনিটের একটি লেজার শো প্রদর্শন এবং ১০-১২ মিনিট আতশবাজি পোড়ানো হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে দুই ঘণ্টা। অংশ নেবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা।

উৎসব উপলক্ষে রাজধানী সেজেছে নতুন সাজে। ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টার, এলইডি লাইটিং, রঙিন পতাকায় শহর সজ্জিত করা হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগসহ নানা মাধ্যমে এ অর্জনের ব্যাপক প্রচার শুরু হয়েছে।

এলডিসি উত্তরণ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপনে সম্পৃক্ত হয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শুধু রাজধানী নয়, উৎসব পালিত হবে জেলা, উপজেলা পর্যায়েও। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে তৃণমূল পর্যায়েও কর্মসূচি পালনের সব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে জেলাপর্যায়ে সেমিনার, চিত্রপ্রদর্শনী, ছবি আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উন্নয়ন প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।